জীর্ণ জেটি, শঙ্কার পারাপার মেটিয়াবুরুজে

নদীতে ভাসমান জেটি বা পন্টুনের কোথাও লোহার পাত ক্ষয়ে ঝাঁঝরা হয়ে গিয়েছে। সেখান দিয়ে ক্রমাগত জল ঢুকে এক দিকে বিপজ্জনক ভাবে হেলে পড়ছে জেটি। এর উপরে যাত্রী-বোঝাই লঞ্চ এসে ভিড়লেই ‘ত্রাহি ত্রাহি’ রব উঠছে যাত্রীদের। লঞ্চকর্মীরা পাম্প বসিয়ে বা বালতি দিয়ে জল বাইরে ফেলে কোনও রকমে পরিস্থিতি সামাল দিচ্ছেন। এমন অবস্থাতেই দিনের পর দিন চলছে যাত্রী পারাপার।

Advertisement

দেবাশিস দাশ

শেষ আপডেট: ৩০ মার্চ ২০১৪ ০১:০৬
Share:

সেই জেটি। —নিজস্ব চিত্র।

নদীতে ভাসমান জেটি বা পন্টুনের কোথাও লোহার পাত ক্ষয়ে ঝাঁঝরা হয়ে গিয়েছে। সেখান দিয়ে ক্রমাগত জল ঢুকে এক দিকে বিপজ্জনক ভাবে হেলে পড়ছে জেটি। এর উপরে যাত্রী-বোঝাই লঞ্চ এসে ভিড়লেই ‘ত্রাহি ত্রাহি’ রব উঠছে যাত্রীদের। লঞ্চকর্মীরা পাম্প বসিয়ে বা বালতি দিয়ে জল বাইরে ফেলে কোনও রকমে পরিস্থিতি সামাল দিচ্ছেন। এমন অবস্থাতেই দিনের পর দিন চলছে যাত্রী পারাপার।

Advertisement

ঘটনাস্থল: মেটিয়াবুরুজ ফেরিঘাট। যে ফেরিঘাটে লঞ্চ পরিষেবার দায়িত্বে রয়েছে হুগলি নদী জলপথ পরিবহণ সংস্থা। জেটির আসল মালিক অবশ্য রাজ্য পরিবহণ দফতরের ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল ট্রান্সপোর্ট ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশন’। জলপথ সংস্থা সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রতিদিন নাজিরগঞ্জ-মেটিয়াবুরুজ রুটের এই ফেরিঘাট দিয়ে ১৫ থেকে ২০ হাজার মানুষ নদী পারাপার করেন। সংস্থার অভিযোগ, ফেরিঘাটটির অবস্থার কথা জানিয়ে গত দু’বছর ধরে জেটিঘাটগুলির দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থা ও রাজ্য পরিবহণ দফতরকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। চিঠি পেয়ে রাজ্য পরিবহণ দফতরের বিভিন্ন অফিসার এসে পরিস্থিতি খতিয়ে দেখে অবিলম্বে জেটি সংস্কারের মতামতও দিয়ে গিয়েছেন। কিন্তু তার পরে কাজের কাজ আর কিছুই হয়নি।

জলপথ সংস্থার কর্মীদের অভিযোগ, নদীপথে নবান্নে পৌঁছনোর জন্য গত সেপ্টেম্বরে যে ৯টি লঞ্চঘাটের আমূল সংস্কারের নির্দেশ দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, সে তালিকায় মেটিয়াবুরুজ ঘাটও ছিল। কিন্তু তা সত্ত্বেও ওই ফেরিঘাটের কোনও সংস্কারের কাজ শুরু হয়নি। ওই তালিকার বাকি আটটি ঘাট হল শিবপুর, চাঁদপাল ১ নম্বর জেটি, রামকৃষ্ণপুর, নাজিরগঞ্জ, ফেয়ারলি, হাওড়া ২ নম্বর জেটি, শোভাবাজার ও বাগবাজার জেটি। ঘোষণা করা হয়েছিল, শিবপুর ঘাট, রামকৃষ্ণপুর ঘাট ও চাঁদপাল ঘাটের কাজ অতি দ্রুত শুরু হবে। বাকিগুলির কাজেও হাত দেওয়া হবে কয়েক মাসের মধ্যেই।

Advertisement

কিন্তু অভিযোগ হল, সাত মাস কেটে গেলেও শিবপুর, রামকৃষ্ণপুর ও চাঁদপাল ঘাট ছাড়া অন্য ফেরিঘাটগুলিতে সংস্কারের জন্য একটি ইটও পড়েনি। এমনকী, মেটিয়াবুরুজ জেটির মতো ব্যস্ত ও লাভজনক ফেরিঘাটের এমন ভয়াবহ অবস্থা সত্ত্বেও আমূল সংস্কার তো দূর অস্ৎ, সেখানে সামান্য মেরামতির কাজও হয়নি। যদিও রাজ্যের পরিবহণমন্ত্রী মদন মিত্র বলেন, “প্রত্যেকটি জেটির সংস্কারের কাজ হবে। ভোট মিটে গেলেই তা শুরু হবে।”

হুগলি জলপথ পরিবহণ সমবায় সমিতির নাজিরগঞ্জ ঘাটের ভারপ্রাপ্ত আধিকারিক শেখ সোরাবুদ্দিন বলেন, “মেটিয়াবুরুজ ফেরিঘাটটির গোটা পন্টুনটি ঝাঁঝরা হয়ে গিয়েছে। তাপ্পি দিয়ে চালানো হচ্ছে। ক’দিন আগেই রাজ্য পরিবহণ দফতরের বিভিন্ন সংস্থার কর্মকর্তারা বৈঠক করে গিয়েছেন। কিন্তু এখনও কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।”

শেখ সোরাবুদ্দিন জানান, এর আগে ১৯৯৫ সালে তিনি যখন নাজিরগঞ্জেই ছিলেন, তখন জেটি ভেঙে পড়ে ৩০ জনের মৃত্যু হয়েছিল। সেই দিনের কথা ভাবলেই এখনও আতঙ্কিত হয়ে ওঠেন। এর পরে ২০০৬ সালে ফের নাজিরগঞ্জেই জেটি ভেঙে দুর্ঘটনা ঘটে। তাঁর আশঙ্কা, অবিলম্বে পন্টুন না পাল্টালে আগামী বর্ষায় মেটিয়াবুরুজ জেটি ভেঙে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। আর সে কথা ভেবেই তিনি আতঙ্কিত। তিনি বলেন, “এই আশঙ্কা নিয়েই প্রতিদিন কাজ করতে হচ্ছে আমাদের।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন