জঞ্জাল সাফাইয়ে সঠিক পরিকল্পনা চান সল্টলেকবাসী

দৃশ্য ১: দুপুর ১টা। বিধাননগরের প্রবেশমুখ থেকে লাবণির দিকে এগোতেই দেখা গেল নতুন সাজানো বুলেভার্ডের উপর আবর্জনা ফেলছেন এক ব্যক্তি। কেন এখানে ময়লা ফেলছেন? জবাব না দিয়ে দৌড়ে পালালেন সেই ব্যক্তি। দৃশ্য ২: বিকেল ৩টে।

Advertisement

কাজল গুপ্ত

শেষ আপডেট: ১০ মার্চ ২০১৪ ০৫:০৮
Share:

রাস্তার উপরে এ ভাবেই ছড়িয়ে রয়েছে জঞ্জাল। ছবি: শৌভিক দে।

দৃশ্য ১: দুপুর ১টা। বিধাননগরের প্রবেশমুখ থেকে লাবণির দিকে এগোতেই দেখা গেল নতুন সাজানো বুলেভার্ডের উপর আবর্জনা ফেলছেন এক ব্যক্তি। কেন এখানে ময়লা ফেলছেন? জবাব না দিয়ে দৌড়ে পালালেন সেই ব্যক্তি।

Advertisement

দৃশ্য ২: বিকেল ৩টে। ই এম বাইপাস থেকে সল্টলেকে ঢোকার মুখে একটি নির্মীয়মাণ বাড়ি থেকে কিছু লোক রাশিকৃত রাবিশ এনে জড়ো করলেন ফুটপাথের উপরেই।

সল্টলেকে নির্দিষ্ট সময়ে জঞ্জাল সংগ্রহ করার ব্যবস্থা ও বিভিন্ন জায়গায় ভ্যাট থাকা সত্ত্বেও যত্রতত্র আবর্জনা ফেলার ছবিটা বদলায়নি। বদলায়নি ফাঁকা প্লটগুলিতে জঞ্জাল ফেলার অভ্যাস। মূল সল্টলেকে পরিকাঠামো উন্নত হলেও নিয়মিত সাফাইয়ের ক্ষেত্রে গাফিলতি রয়েছে বলেও বাসিন্দাদের একাংশের অভিযোগ। এ ছাড়া দত্তাবাদ বা সংযোজিত এলাকায় আজও জঞ্জাল সাফাইয়ে পর্যাপ্ত পরিকাঠামো নেই। বাসিন্দাদের অভিযোগ, দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা না করলে সমাধান হবে না।

Advertisement

কলকাতা পুরসভা ইতিমধ্যেই ভ্যাটবিহীন জঞ্জাল সাফাই ব্যবস্থার পরিকল্পনা করেছে। কিন্তু সল্টলেকে তা হয়নি। যদিও পুরসভার জঞ্জাল বিভাগের এক কর্তা জানান, পরিকাঠামো তৈরি না করে ভ্যাট তোলা সম্ভব নয় সল্টলেকে। সে কারণে রাজ্য সরকারের সঙ্গে আলোচনা চলছে।

সল্টলেকে নিয়মিত জঞ্জাল সংগ্রহ কিংবা সাফাইয়ে কিছু ক্ষেত্রে গাফিলতির কথা স্বীকার করলেও স্থানীয় প্রশাসনের দাবি, আগের থেকে অনেকটাই উন্নত হয়েছে। তবে বাসিন্দাদের একাংশের সচেতনতার অভাবেও সমস্যা বাড়ছে বলেই মত পুরপ্রশাসনের। ত্রুটি সংশোধন করতে একগুচ্ছ পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।

সমস্যার কথা কার্যত স্বীকার করে সল্টলেক পুরপ্রশাসনের এক কর্তা জানান, দু’টি জায়গা থেকে গোটা উপনগরীতে সাফাইকর্মীদের কাজ নিয়ন্ত্রণ করা হত। কিন্তু তাতে লাভ হচ্ছিল না। এ বার এক জায়গায় গোটা ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণ করার ব্যবস্থা হয়েছে। সেখানে ইঞ্জিনিয়ারদের তত্ত্বাবধানে পুরো ব্যবস্থা পরিচালনা করা হবে। সহজতর হবে নজরদারি।

পুরসভা সূত্রে খবর, প্রতিদিন সল্টলেক থেকে প্রায় ১২৫ মেট্রিক টন জঞ্জাল সংগ্রহ করা হয়। সাফাই ও রাস্তা সাফ রাখতে সাত শতাধিক কর্মী থাকলেও অতিরিক্ত কর্মী কিংবা এজেন্সির মাধ্যমে জঞ্জাল সংগ্রহে জোর দিতে ইতিমধ্যেই সিদ্ধান্ত নিয়েছে পুরসভা।

কিন্তু সাফাইয়ের ক্ষেত্রে একটি বড় সমস্যা গাড়ি ও কর্মী সংক্রান্ত। এই সময়ে সল্টলেক পুরসভায় কমবেশি ৩৫টি গাড়ি রয়েছে। যার মধ্যে বেশ কিছু গাড়ি খারাপ। তবে সূত্রের খবর, আরও ১০টি গাড়ি বাড়ানোর সিদ্ধান্ত ফেব্রুয়ারি মাসে নিয়েছে পুরসভা। পাশাপাশি ১০৫ জন মাত্র গাড়ি চালক ও কর্মী রয়েছেন। সেই সংখ্যা বাড়ানোর পাশাপাশি গাড়ি মেরামতের জন্য কর্মী নিয়োগ করে সমস্যা নিয়ন্ত্রণের সিদ্ধান্ত হয়েছে।

কী বলছেন বিধাননগরবাসী? বাসিন্দাদের কথায়, সর্বত্র নিয়মিত সাফাই হচ্ছে না। আবার দত্তাবাদ বা সংযোজিত এলাকার ক্ষেত্রেও জঞ্জাল সাফাইয়ের বেহাল দশা। বিধাননগর (সল্টলেক) ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক কুমারশঙ্কর সাধু বলেন, “পুরসভা আগের চেয়ে সক্রিয়। প্রয়োজন দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা। তবে আমরা যদি সচেতন না হই কোনও পরিকল্পনাই সফল হবে না।”

চেয়ারম্যান পারিষদ (নিকাশি) দেবাশিস জানা বলেন, “জঞ্জাল সাফাই ব্যবস্থা ঢেলে সাজা হয়েছে। সাফল্যও এসেছে। তবে কিছু সমস্যাও রয়েছে। সেগুলি সংশোধনের জন্য বেশ কিছু সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তবে বাসিন্দাদের একাংশের সচেতনতার অভাবের জন্য সমস্যা অনেক ক্ষেত্রে মিটছে না। আর সংযোজিত এলাকার জন্য চিন্তাভাবনা থাকলেও নির্বাচন বিধি জারি হওয়ায় এখনই তা বলা যাবে না।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন