সূচিত্রা সেলুন। এখানে উত্তম রূপে চুল কাটা হয়। কিংবা, সুচিত্রা লন্ড্রি। এখানে উত্তম রূপে কাপড় ধোলাই হয়। ষাট-সত্তরের দশকে কলকাতার কোনও কোনও পাড়ায় এমন সাইনবোর্ড চোখে পড়ত। কিন্তু ১৯৮০ সালে নায়ক মারা যাওয়ার পরে হারিয়ে গিয়েছিল সেগুলি। চলতি বছরের জানুয়ারিতে মারা গিয়েছেন নায়িকাও। আজ, রবিবার তাঁর জন্মদিনে অবশ্য তাঁকে কেন্দ্র করেই ফের ঢল নেমেছে বিজ্ঞাপনের। কোথাও রেস্তোরাঁর পদ সাজছে সুচিত্রা সেনের সিনেমার নামে। কেউ আবার মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন বা অ্যাপ্স বার করেছেন নায়িকার নামেই।
বাঙালির রেস্তোরাঁ ব্যবসার বাজারে প্রিয় জুটির আবির্ভাব বহু আগেই। উত্তম-সুচিত্রা জুটির প্রথম সিনেমা ‘সাড়ে চুয়াত্তর’-এর নাম নিয়ে শরৎ বসু রোডে রয়েছে রেস্তোরা।ঁ নায়িকার জন্মদিনে যে রেস্তোরাঁটি নতুন সাজে পদ পরিবেশন করছে, সেটি ‘সপ্তপদী’। তার মালিক রঞ্জন বিশ্বাস জানান, কমললতা, শিল্পী কিংবা কাজরীর মতো সিনেমার নাম ব্যবহার করে মাছের পদ এনেছেন তাঁরা। কখনও বা পুরনো পদকেই নতুন মোড়কে হাজির করছে রেস্তোরাঁটি। যেমন, বাঙালির সাবেক কুমড়ো ফুল ভাজার নাম দেওয়া হয়েছে ‘সাত পাকে বাঁধা কুমড়ো ফুল’। সর্ষে বা ভাপা, ইলিশের পদ মিলবে ‘চাওয়া-পাওয়া’র রূপে। এ-পার বাংলার বাসিন্দা রঞ্জন অবশ্য ধনেপাতা-নারকেল ঝোলে মাখোমাখো চিংড়িকে রাখছেন ‘সবার উপরে’!
সুচিত্রার আগেই কিছু রেস্তোরাঁয় উত্তম কুমারের ছোঁয়া মিলত। বছর কয়েক আগে সুপ্রিয়াদেবীকে নিয়ে এক অনুষ্ঠান হয় ‘ভজহরি মান্না’য়। রেস্তোরাঁর কর্তা সিদ্ধার্থ বসু জানালেন, তখন সুপ্রিয়াদেবীর রাঁধা পদ মিলত রেস্তোরাঁয়। নাম দেওয়া হয়েছিল উত্তম কুমারের সিনেমার নামে। সুচিত্রা-উত্তম-উৎপল দত্তের ছবি রাখা হয়েছে ‘ওহ! ক্যালকাটা’ রেস্তোরাঁতেও। শহরের নামে রেস্তোরাঁ, সেই শহরের সঙ্গে আইকনদের সম্পর্ক, এই মেজাজ ধরতেই অন্দরসজ্জায় ছবি ব্যবহার। “এখনই সুচিত্রা সেনকে নিয়ে কোনও আয়োজন করছি না।” বললেন ওহ! ক্যালকাটার কর্তা দেবাশিস ঘোষ।
বিপণন বিশেষজ্ঞেরা বলছেন, এটা আসলে বিজ্ঞাপনী চমক। তার সঙ্গে বদল আসে পণ্যে। দেশে-বিদেশে এমন নজির বহু রয়েছে। ফিলিপিন্সে একটি রেস্তোরাঁর জনপ্রিয় মেনু ক্যারাটে কিড বার্গার। সচিন তেণ্ডুলকরের নিজস্ব রেস্তোরাঁয় তাঁর ছেলে অর্জুন ও মেয়ে সারার নামেও পদ আছে। এ শহরেই সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের নামে রেস্তোরাঁ খোলা হয়েছিল। কিন্তু বাজারে এর প্রভাব কতটা? বিপণন বিশেষজ্ঞ রাম রে বলছেন, “বিজ্ঞাপণ কতটা অভিনব বা রুচিশীল, তার উপরে প্রভাব নির্ভর করে। জনপ্রিয়তার জন্য পণ্যের গুণমানও জরুরি।” রেস্তোরাঁ কর্তারা বলছেন, বাঙালির আইকনদের নিয়ে একটা আবেগ কাজ করে। তার প্রভাব পড়ে বাজারি চাহিদাতে। রঞ্জনেরও আশা, তাঁর সৃষ্টি প্রবীণদের পাশাপাশি আকর্ষণ করবে নতুন প্রজন্মকেও।
নতুন প্রজন্মের বক্তব্য, শুধু নায়ক-নায়িকার নাম নয়, পদের নামকরণের নতুনত্বও তাঁদের আকর্ষণ করে। হোটেল ম্যানেজমেন্টের পড়ুয়া বিশ্বপর্ণা পাণ্ডে বলছেন, “অনেক সময়ই খুব সাধারণ পদও নামের জন্য জনপ্রিয় হয়।” নতুন প্রজন্মের কথা মাথায় রেখেই শহরের এক সংস্থা বার করেছে মোবাইল অ্যাপ্স সুচিত্রা সেন। সংস্থার কর্ণধার কৌশিক মৌলিক বলছেন, “নবীন প্রজন্মের হাতে হাতে স্মার্টফোন। তাঁদের কাছে নায়িকাকে পৌঁছে দিতেই এই অ্যাপ্স। যাতে মিলবে নায়িকার জীবনী, সিনেমার তথ্য ভাণ্ডার, পোস্টার। ইতিমধ্যেই ইন্টারনেটে মিলছে এই অ্যাপ্স। এখনও পর্যন্ত শ’তিনেক লোক এটি ডাউনলোডও করেছেন।” নায়িকা নেই। তবু খাবার থেকে অ্যাপ্স, তাঁকে ঘিরেই ফের বাজার তুঙ্গে!