ধর্মতলা থেকে বাস টার্মিনাস সরানোর ব্যাপারে কী পদক্ষেপ করা হয়েছে, আদালতে হলফনামা দিয়ে তা জানাতে হবে রাজ্য সরকারকে। শুক্রবার কলকাতা হাইকোর্টের দুই বিচারপতি গিরিশচন্দ্র গুপ্ত এবং তপোব্রত চক্রবর্তীর ডিভিশন বেঞ্চ রাজ্য সরকারকে এই নির্দেশ দিয়েছে। চার সপ্তাহের মধ্যে ওই হলফনামা দাখিল করতে হবে।
ধর্মতলা ও শহিদ মিনার চত্বরকে দূষণমুক্ত করতে কলকাতা হাইকোর্টে মামলা দায়ের করেছিলেন পরিবেশকর্মী সুভাষ দত্ত। ওই এলাকা থেকে বাস টার্মিনাস-সহ যাবতীয় অস্থায়ী দোকানপাট সরানোর ব্যাপারে কলকাতা হাইকোর্ট একটি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন কমিটি গড়ে দিয়েছিল গত বছরের ১৩ সেপ্টেম্বর। এ বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে রাজ্যের মুখ্যসচিব হাইকোর্টে এ নিয়ে রিপোর্ট জমা দেন। তাতে বলা হয়, ধর্মতলা চত্বরে বাস থেকে যাত্রীরা ওঠানামা করবেন। সেখানে বাস গুমটি বা অস্থায়ী দোকানপাট থাকবে না।
মুখ্যসচিবের দেওয়া রিপোর্টে এ-ও বলা হয়, ধর্মতলা-শহিদ মিনার চত্বরে এখন যে সব রুটের বাস চলাচল করে, সেই সব বাসগুলিকে নবান্ন, তারাতলা, নিউ টাউনের বলাকা, হিডকো ও সাঁতরাগাছিতে পর্যায়ক্রমে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হবে। ওই কাজ করতে তিন মাস থেকে তিন বছর সময় লাগবে। এই প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ হলে ধর্মতলা-শহিদ মিনার চত্বর পুরোপুরি দূষণমুক্ত হবে বলেও রিপোর্টে বলা হয়।
এ দিন ওই মামলার শুনানি ছিল। মামলাকারী সুভাষবাবু আদালতে বলেন, বাস টার্মিনাস, বাস গুমটি বা অস্থায়ী দোকানপাট সরানোর প্রক্রিয়াই শুরু করেনি রাজ্য সরকার। তিনি জানান, স্ট্র্যান্ড রোড থেকে যে সব ভিন্ রাজ্যের বাস ছাড়ে, তাদের সাঁতরাগাছিতে সরানোর কথা ঘোষণা করেছে রাজ্য সরকার। কিন্তু রাজ্য সরকার ধর্মতলা-শহিদ মিনার চত্বরকে দূষণমুক্ত করতে উদ্যোগী নয় বলে সুভাষবাবুর অভিযোগ।
আদালতে সুভাষবাবু জানান, ধর্মতলা-শহিদ মিনার চত্বরে বাস টার্মিনাস যত দিন থাকবে, তত দিন সেখানকার ‘উন্মুক্ত শৌচাগার’ও থেকে যাবে। যার জেরে দূষণ বেড়েই চলবে। সুভাষবাবুর দাবি, ওই বাস টার্মিনাস স্থানান্তরিত না-হওয়া পর্যন্ত ওই চত্বরে আরও বেশি সংখ্যক সুলভ শৌচাগারের ব্যবস্থা করুক প্রশাসন।
সুভাষবাবুর এই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ডিভিশন বেঞ্চ সেনা কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছে, ওই এলাকায় সুলভ শৌচাগার বা ‘বায়ো-টয়লেট’ তৈরি করা হলে সেনাবাহিনীর কোনও আপত্তি রয়েছে কি না, তা জানানো হোক। সেই সঙ্গে রাজ্যের আইনজীবী বিকাশকুমার মুখোপাধ্যায়কে আদালতের নির্দেশ, শৌচাগারের বিষয়ে রাজ্য সরকার তাদের বক্তব্য আদালতে জানাক।
সুভাষবাবু এ দিন আদালতে আরও একটি আবেদন করেন ব্রিগেডের জনসভা প্রসঙ্গে। তিনি জানান, ব্রিগেডে জনসভা হলে বিপুল সংখ্যক মানুষ গোটা ময়দান এলাকাকে ‘উন্মুক্ত শৌচাগার’ হিসেবে ব্যবহার করেন। ব্রিগেডে জনসভা হলে মঞ্চের পাশে গুটিকয়েক ‘বায়ো-টয়লেট’ সম্প্রতি রাখা হচ্ছে বলে সুভাষবাবু আদালতে জানান। তাঁর বক্তব্য, ওই ধরনের শৌচাগার জনসভায় যোগ দিতে আসা ভিআইপি-রা ব্যবহার করেন। সাধারণ মানুষের জন্য ওই ধরনের শৌচাগার আরও বেশি করে বসানো দরকার।
ডিভিশন বেঞ্চ সেনা কর্তৃপক্ষের কাছে এ নিয়ে তাঁদের মতামত জানতে চেয়েছে। আর রাজ্য সরকারের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছে, তারা এ নিয়ে কী চিন্তাভাবনা করছে।