সেই ট্রাম।—নিজস্ব চিত্র।
চালকের দোষেই বৃহস্পতিবার বালিগঞ্জ ফাঁড়ির দুর্ঘটনা ঘটেছে। এমনটাই দাবি কলকাতা ট্রাম কোম্পানি (সিটিসি) কর্তৃপক্ষের। যদিও ওই দাবি উড়িয়ে দিয়েছে সংস্থার শ্রমিক ইউনিয়নগুলি। সিপিএম ও তৃণমূল দুই দলের ইউনিয়নই এ ব্যাপারে চালকের পাশে দাঁড়িয়েছে। তাদের বক্তব্য, নিজেদের দোষ ঢাকতেই এখন চালককে দোষী করার চেষ্টা হচ্ছে।
বৃহস্পতিবার যে ট্রামটি হঠাৎ চলতে শুরু করে পর পর গাড়িকে ধাক্কা মারে, তাতে চালকই ছিলেন না। সিটিসি-র কর্তাদের অভিযোগ, চালক সে সময়ে ট্রাম থেকে নেমে ডিপোর স্টার্টারের সঙ্গে গল্প করছিলেন।
সিটিসি-র কর্তারা ওই ঘটনার জন্য চালকের দায়িত্বজ্ঞানহীনতাই মূল কারণ বলে মনে করছেন। ট্রামটিতে যান্ত্রিক গোলযোগও ছিল না বলে দাবি তাঁদের। তাঁরা তদন্তে জেনেছেন, ওই চালক ডিপো থেকে বেরোনোর সময়ে ট্রামটি দাঁড়িয়ে যায়। চালক মনে করেন, বিদ্যুৎ চলে গিয়েছে। তিনি নেমে স্টার্টারের কাছে যান। কিন্তু যাওয়ার সময়ে ট্রামটিকে ঠিকমতো বন্ধ করেননি, ট্রামের চাবিও সঙ্গে নিয়ে যাননি। এর মধ্যেই হঠাৎ বিদ্যুৎ সংযোগ ফিরে আসায় ট্রামটি চলতে শুরু করে।
সিটিসি-র কর্তারা মনে করছেন, এ ধরনের দায়িত্বজ্ঞানহীনতা একেবারেই বরদাস্ত করা যায় না। তাই কর্তৃপক্ষ ঠিক করেছেন, ওই চালককে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া হবে। প্রাথমিক তদন্তে ওই চালককে সাসপেন্ড করা হয়েছে। সিটিসি-র এক কর্তা বলেন, “এটা ক্ষমাহীন অপরাধ। এ ধরনের ঘটনা ধর্মতলা মোড়ে হলে কী হত! তাই ওই চালককে কড়া শাস্তিই দেওয়া হবে।”
তবে সিটিসি-র বিরোধী শ্রমিক সংগঠন সিটু-র নেতা সুবীর বসুর বক্তব্য, “ঘটনাটি দুর্ভাগ্যজনক। কিন্তু প্রশাসন নিজেদের দোষ ঢাকতে চালকের উপরে দায় চাপাচ্ছে।” চালকের পক্ষে দাঁড়িয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস প্রভাবিত শ্রমিক ইউনিয়নও। সংগঠনের নেতা দেবাশিস দে বলেন, “ওই ট্রামটি অভিযুক্ত চালকের নামে বরাদ্দ ছিল না। অন্যের হয়ে তিনি ট্রামটিকে সরাতে গিয়েছিলেন। সে সময়ে বিদ্যুৎ চলে যাওয়ায় স্টার্টারকে তিনি বলতে গিয়েছিলেন তখন যেন কোনও ট্রাম না আসে। তখনই বিপত্তি ঘটে।”
মোট ২৬৯টি ট্রামের মধ্যে নিয়মিত চলে শ’খানেক। সাড়ে তিনশো চালকের মধ্যে ২০%-এর বয়স পঞ্চাশের উপরে। সংস্থার এক কর্তা বলেন, “এমনিতে কিছু দিন অন্তর কী করা উচিত এবং অনুচিত, তা চালক কন্ডাক্টরদের সার্কুলার দিয়ে জানানো হয়। সেটা যথেষ্ট নয়। সে কারণে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে ও সতর্ক করা হবে। কাউন্সেলিংয়েরও ব্যবস্থা হবে।” সংস্থার এমডি নীলাঞ্জন শাণ্ডিল্য বলেন, “সমস্ত চালককে একসঙ্গে প্রশিক্ষণ দেওয়ার পাশাপাশি সতর্কও করে দিতে চাই।”
যে দুই যুবকের তৎপরতায় বড় দুর্ঘটনা এড়ানো গিয়েছিল, তাঁদের শুক্রবার লালবাজারে ডেকে পাঠানো হয়। কলকাতা পুলিশের কর্তারা দীনেশ লাল ও জগ্গু কাপাডিয়া নামে ওই দুই যুবকের সঙ্গে কথা বলেন। শনিবার বিকেলে ঘোড়সওয়ার পুলিশের এক অনুষ্ঠানে তাঁদের সংবর্ধনা দেওয়া হবে।