ইঁদুরের হাত থেকে রক্ষা পেতে ঢাকুরিয়া সেতুর মেরামতি শুরু করা হল ঠিকই। কিন্তু যেখান থেকে ইঁদুরের উৎপত্তি, তা রয়েই গেল। কী ভাবে সেই উৎস বন্ধ করা যাবে, তা নিয়ে এখনও কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি। তাই নিয়ে ফাঁপরে পড়েছেন পুর-কর্তৃপক্ষ।
কলকাতা পুরসভার মেয়র পারিষদ (রাস্তা) সুশান্তকুমার ঘোষ বলেন, “পুরসভা এই প্রকল্পের দেখভালের দায়িত্বে। ইঁদুর যাতে সেতুতে না ঢোকে, তার জন্য সেতুর গর্ত বোজালেও ভ্যাট সরানো যাচ্ছে না। ইঁদুরের উৎসস্থল থেকেই যাচ্ছে। এই কাজ পুরো শেষ হতে অন্তত মাস ছ’য়েক লাগবে।”
পুরসভার রাস্তা দফতরের এক আধিকারিক জানান, ইঁদুরের উৎসস্থল বন্ধ না করলে ফের কয়েক বছর পরে সমস্যায় পড়তে হতে পারে।
বছরখানেক আগে এই সেতুর কিছু অংশ বসে যাওয়ায় সেটি ভেঙে পড়ার আশঙ্কা দেখা যায়। প্রশাসনের টনক নড়ে। সরকার সিদ্ধান্ত নেয়, সেতুর কী হাল, রাইট্স তা সমীক্ষা করে পুরসভার তত্ত্বাবধানে সারাইয়ের কাজ করবে। পুরো প্রকল্পের জন্য মোট খরচ ধরা হয় ১ কোটি ৭ লক্ষ টাকা।
রাইট্স-এর এক আধিকারিক জানান, সমীক্ষা করতে গিয়ে দেখা যায়, আশপাশের ইঁদুর এই সেতুর বিভিন্ন গর্ত দিয়ে ভিতরে ঢুকে তলার মাটি খুঁড়ে ফেলেছে। ফলে, ভিত আলগা হয়ে যাওয়ায় বিভিন্ন জায়গা বসে গিয়েছে। মেরামতি না করলে এই সেতু ভেঙে পড়ারও আশঙ্কা রয়েছে। ঠিক হয়, প্রথম ধাপে সেতুর ভিতরে যেখানে যেখানে মাটি বসে গিয়েছে, সেগুলি ভরাট করে দেওয়া হবে। তার পরে সেতুর উপরের রাস্তা সারানো হবে। এই সংস্থার দাবি, যে পদ্ধতিতে এই সেতুর গর্ত বন্ধ করা হচ্ছে এবং ভিতরের অংশ ভরাট করা হচ্ছে, তাতে ইঁদুর ফের ঢুকে মাটি কাটতে পারবে বলে মনে হয় না। তবে, ভ্যাট থাকলে আশপাশে অবশ্যই ইঁদুরের সমস্যা হবে। কিছু দিন আগে ইঁদুর মারার ওষুধ ব্যবহার করে ইঁদুর তাড়ানো হয়েছে বলেও তাঁদের দাবি। ইঁদুর কতটা ক্ষতি করেছে, তা বাইরে থেকে বোঝা যাচ্ছে না। সেই কারণেই কবে কাজ শেষ করা যাবে, তা নির্দিষ্ট ভাবে বলা সম্ভব নয় বলে সংস্থার তরফে দাবি করা হয়েছে।
ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, যেখানে-যেখানে ধস নেমেছে, পাইপের মাধ্যমে সিমেন্ট এবং রাসায়নিকের মিশ্রণ গর্তের মধ্যে দিয়ে সেই অংশগুলিতে দেওয়া হচ্ছে। যার ফলে সেতুর ভিতরে ধস নামা অংশ ভরাট হয়ে যাচ্ছে। কাজ করার সময়ে দেখা যাচ্ছে, যে অংশটি ভরাট করার জন্য যতটা নির্দিষ্ট সময় ধার্য করা হয়েছে, তার চেয়েও বেশি সময় লাগছে। কারণ, ভিতরে ক্ষয়ে যাওয়া মাটির পরিমাণ অনেক বেশি।
ভ্যাট সরানোয় সমস্যা কোথায়? মেয়র পারিষদ (জঞ্জাল) দেবব্রত মজুমদার বলেন, “এখানে বিকল্প জায়গা পাওয়াই মূল সমস্যা। জঞ্জাল অপসারণের জন্য আধুনিক মানের কম্প্যাক্টর বসানোরও জায়গা নেই।”
জঞ্জাল দফতর সমীক্ষা করে দেখে, এখানে যদি ছোট কম্প্যাক্টর বসানো যায় এবং সেটি যদি প্রতিদিন একটি নির্দিষ্ট সময়ের পরে ওই জায়গা থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়, তা হলে এই সমস্যা মিটতে পারে। জেএনএনইউআরএম প্রকল্পে পুরসভা বেশ কিছু ছোট কম্প্যাক্টর কিনবে। এই কম্প্যাক্টরে আবর্জনাও বেশি পরিমাণে ধরবে ও ভ্যাট উপচে পড়ারও সম্ভাবনা থাকবে না। তবে এই যন্ত্র আসতে অন্তত আরও মাস ছয়েক সময় লাগবে। তার পরেই এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হতে পারে।
নাজেহাল লন্ডনও
লন্ডন হওয়ার পথে কলকাতা এগোতে পারবে কি না, সেটা বিতর্কের বিষয়। তবে একটা ব্যাপারে দুই শহরে মিল রয়েছে। তা হল ইঁদুর। শুধু কলকাতা শহরেই সাম্রাজ্য তৈরি করে ক্ষান্ত থাকেনি মূষিককুল। সুদূর ব্রিটেনও তাদের নিয়ে নাজেহাল! শুধু লন্ডন নয়, মূষিককুল সাম্রাজ্য বিস্তার করেছে ডাবলিন ও স্টকহল্মের মতো শহরেও। তবে কলকাতা ও লন্ডনে ইঁদুরের মধ্যে পার্থক্য শুধু আকৃতিতে। কলকাতায় মেঠো ইঁদুর আর ব্রিটেনে দু’ফুট লম্বা বিড়ালের আকারের দৈত্যাকৃতি ইঁদুর। লন্ডনের একটি দৈনিক পত্রিকা সম্প্রতি জানিয়েছে, সারা ব্রিটেনে ইঁদুর ছেয়ে যাওয়ার কারণ, ওখানকার বাসিন্দারা জানেনই না, উচ্ছিষ্ট কোথায় কী ভাবে ফেলা উচিত।