তরুণীর শ্লীলতাহানিতে অভিযুক্ত হকার, উত্তাল নিউ মার্কেট চত্বর

বোনের শ্লীলতাহানির প্রতিবাদ করতে গিয়ে হকারের চড় খেলেন এক তরুণী। বৃহস্পতিবার নিউ মার্কেটে প্রকাশ্যেই ঘটনাটি ঘটে। মহিলাদের সুরক্ষা নিয়ে ভোটের মুখে রাজ্যে রাজনীতি যখন তুঙ্গে, সে সময়ে ভিড়ে ঠাসা নিউ মার্কেট এলাকায় এক মহিলার শ্লীলতাহানির ঘটনা রীতিমতো অস্বস্তিতে ফেলে দিয়েছে পুলিশকেও।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৯ মে ২০১৪ ০২:০৭
Share:

অভিযুক্ত সেই হকার এবং অভিযোগকারী দুই তরুণী। বৃহস্পতিবার, নিউ মার্কেট চত্বরে। —নিজস্ব চিত্র।

বোনের শ্লীলতাহানির প্রতিবাদ করতে গিয়ে হকারের চড় খেলেন এক তরুণী। বৃহস্পতিবার নিউ মার্কেটে প্রকাশ্যেই ঘটনাটি ঘটে। মহিলাদের সুরক্ষা নিয়ে ভোটের মুখে রাজ্যে রাজনীতি যখন তুঙ্গে, সে সময়ে ভিড়ে ঠাসা নিউ মার্কেট এলাকায় এক মহিলার শ্লীলতাহানির ঘটনা রীতিমতো অস্বস্তিতে ফেলে দিয়েছে পুলিশকেও। ঘটনার প্রতিবাদে নিউ মার্কেটের ব্যবসায়ীরা দোকানের ঝাঁপ ফেলে রাস্তায় নেমে পড়েন। তাঁদের সঙ্গে পেয়ে গল্ফগ্রিনের বাসিন্দা ওই দুই তরুণীও অভিযুক্তের শাস্তির দাবিতে সরব হন। পরে পুলিশ ওই ঘটনায় জড়িত শেখ আদিল নামে এক যুবককে গ্রেফতার করে। তাঁর বাড়ি তালতলা এলাকায়। শেখ আদিলের বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানির অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

Advertisement

পুলিশ জানায়, এ দিন বিকেল পাঁচটা নাগাদ ওই দুই বোন তাঁদের ভাইকে নিয়ে কেনাকাটা করতে গিয়েছিলেন নিউ মার্কেট চত্বরে। এক তরুণী বলেন, “নিউ মার্কেটের সামনে সিটি মার্টের উল্টো দিকে ভিড়ের মধ্যে আমরা হাঁটছিলাম। রাস্তার উপরে হকারের ভিড়, তা ছাড়া গাড়ি তো রয়েছেই। এর মধ্যে হাঁটতে গিয়ে রাস্তার উপরে সাজিয়ে রাখা একটি ব্যাগ বোনের পায়ে লেগে উল্টে যায়।” তাতেই রে রে করে ওই স্টলের হকার বোনের উপরে চড়াও হন বলে অভিযোগ দিদির। দুই তরুণীর অভিযোগ, অশালীন অঙ্গ-ভঙ্গি করে গালাগালি করেন ওই হকার। তরুণীর মুখের কাছে মুখ এনে বলেন, ‘কোমর দুলিয়ে রাস্তায় নাচছেন কেন?’

পুলিশ জানায়, এর প্রতিবাদেই দিদি ওই হকারকে ঠেলে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেন বলে লিখিত অভিযোগে জানিয়েছেন অভিযোগকারিণীরা। অভিযোগ, তখনই দিদির গালে সপাটে চড় মারেন ওই হকার। ইতিমধ্যে অভিযুক্তের সঙ্গে দল করে নেমে পড়েন আরও কয়েক জন হকার। প্রতিবাদ করতে গেলে ওই তরুণীর ভাইকেও মারধর করা হয়। তরুণীর আরও অভিযোগ, ঘটনার পরেই স্থানীয় লোকজনের সাহায্যে ওই যুবককে নিউ মার্কেট সংলগ্ন পুলিশ বুথে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু ওই বুথের পুলিশকর্মী তাঁদের কথা গ্রাহ্য করেননি বলে অভিযোগ। এতেই ক্ষোভ বাড়ে নিউ মার্কেটের ব্যবসায়ীদের মধ্যে। পরে পুলিশ জানায়, জনা পঞ্চাশেক দোকানদার হগ স্ট্রিটে নেমে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন। রাস্তা জুড়ে বসা হকারদের অবিলম্বে সরানোর দাবি তোলেন তাঁরা। এ দিকে, প্রকাশ্যে এক হকারের হাতে চড় খাওয়া কিছুতেই মেনে নিতে পারছিলেন না ওই তরুণী। বললেন, “মাঝেমাঝেই কেনাকাটা করতে আসি এখানে। সকলের সামনে ওই ছেলেটি যে অসভ্য ব্যবহার করল, তা কোনও মতেই মেনে নিতে পারছি না। কে দেবে নিরাপত্তা?”

Advertisement

ব্যবসায়ীদের বক্তব্য, নিউ মার্কেট চত্বর ঘিরে ফেলেছেন বেআইনি হকারেরা। ফুটপাথ ছেড়ে এখন তাঁরা রাস্তাও দখল করে বসেছেন। ওঁদের দৌরাত্ম্যে রাস্তা দিয়ে গাড়ি চলতে পারে না। কোনও রকমে ঠেলাঠেলি করে চলাফেরা করতে হয় মানুষজনকেও। টালিগঞ্জের এক বাসিন্দা সুবোধ দত্তের বক্তব্য, “রাস্তার উপরে পসরা সাজিয়ে এ ভাবে বসে থাকলে লোকের পা তো লাগতেই পারে। প্রতিবাদ করতে গিয়ে এই যদি হাল হয়, তা হলে তো চলাফেরাই সমস্যা হয়ে দাঁড়াবে!”

পুলিশ জানিয়েছে, এক সময়ে নিউ মার্কেটের ব্যবসায়ীরা ওই ঘটনার প্রতিবাদে দোকান বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। সেই খবর পেয়েই ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন নিউ মার্কেট থানার ওসি-সহ জনা দশেক পুলিশকর্মী। পুলিশকে সামনে পেয়ে ক্ষোভে ফেটে পড়েন সেখানকার ব্যবসায়ীরা। তাঁরা বলতে থাকেন, এর আগেও এমন ঘটনা বহু বার ঘটেছে। পুলিশকে বারংবার জানানো হয়েছে। কিন্তু কোনও কাজ হয়নি। তাঁদের অভিযোগ, পুলিশ ও পুরসভার মদতে রাস্তা দখল করছেন হকারেরা।

হকার তোলার দাবিতে পুলিশকে ঘিরে নিউ মার্কেটের দোকানদারদের প্রতিবাদ চলাকালীনই এক দল হকার সেখানে জড়ো হন। তাঁরাও চিৎকার করে বলতে থাকেন, ‘ব্যবসায়ীদের জুলুম মানব না।’ দু’পক্ষের তর্কাতর্কি বাড়তে থাকায় মুহূর্তেই পরিস্থিতি ঘোরালো হয়ে ওঠে। গণ্ডগোলের আশঙ্কায় আশপাশের দোকানগুলির শাটার নামতে থাকে। পুলিশও ঘিরে ফেলে পুরো এলাকা। হকারদের এলাকা থেকে সরিয়ে দেওয়া হলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে।

তবে এ ভাবে নিউ মার্কেটের রাস্তা দখল করে হকারদের ব্যবসা যে একেবারেই বেআইনি, তা জানিয়ে দিয়েছে পুর-প্রশাসনও। পুরসভার বাজার দফতরের এক আধিকারিক জানিয়েছেন, এ নিয়ে বেশ কয়েক বার আলোচনাও হয়েছে। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি। বরং হকারদের দখলদারির পরিধি বেড়েই চলেছে। এমনকী, পুরসভার প্রধান ফটকের সামনেও চলে এসেছে হকারের দল। তৃণমূলেরই এক কাউন্সিলরের কথায়, “ওই হকারদের তুলতে পুর-প্রশাসনকে কড়া পদক্ষেপ করতে হবে। তা করা হচ্ছে না বলেই সমস্যা ক্রমশই বাড়ছে।” বড় কিছু অঘটন না ঘটলে পুরসভার টনক নড়বে না বলে মনে করছেন ওই পুর প্রতিনিধিও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন