অনেক চেষ্টা করেও ঠেকানো যাচ্ছে না মেট্রোর লাইনে ঝাঁপ দেওয়ার প্রবণতা। আচমকা চলন্ত ট্রেনের সামনে কেউ ঝাঁপিয়ে পড়লে বিভ্রান্ত চালক মুহূর্তের ভুলে বড় কোনও দুর্ঘটনাও যে ঘটিয়ে ফেলতে পারেন, মেট্রোকর্তারা সে আশঙ্কাও উড়িয়ে দিচ্ছেন না।
মেট্রো সূত্রের খবর, মেট্রোকর্মীদের তৎপরতায় সম্প্রতি আত্মহত্যা করতে আসা কয়েক জনকে বাঁচানো সম্ভব হয়েছে। শুক্রবার সকালেই এক ঘণ্টার মধ্যে দুই স্টেশনে চলন্ত মেট্রোর সামনে ঝাঁপ দিয়েছিলেন দুই ব্যক্তি। এ দিন বাঁচানো গিয়েছে দু’জনকেই। তবে এই দুই ঘটনার জেরে বেশ কিছুক্ষণ বিপর্যস্ত হয়েছে ট্রেন চলাচল।
কী ঘটেছিল এ দিন? মেট্রো সূত্রের খবর, প্রথম ঘটনাটি ঘটে সকাল সাড়ে ৮টা নাগাদ শহিদ ক্ষুদিরাম স্টেশনে। বছর বিয়াল্লিশের এক ব্যক্তি কবি সুভাষমুখী ট্রেনের সামনে ঝাঁপ দেন। ট্রেনটি তখন প্ল্যাটফর্মে ঢুকছে। চালক জয়ন্ত কুণ্ডু ও সহকারী চালক পি কে গিরি ওই ঘটনা বুঝতে পেরে আপৎকালীন ব্রেক কষেন। ট্রেনটির গতি বেশি না থাকায় সঙ্গে সঙ্গে তা থেমেও যায়। বেঁচে যান ওই ব্যক্তি।
মেট্রো সূত্রে খবর, লাইনে ঝাঁপানোয় সামান্য চোট পেয়েছেন তিনি। সঙ্গে সঙ্গে মেট্রোকর্মীরাও চলে আসেন। তাঁকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। কী কারণে তিনি ওই কাণ্ড ঘটনালেন, পুলিশ অবশ্য সে বিষয়ে কিছু জানতে পারেনি।
এই ঘটনায় প্রায় মিনিট ২০ বিপর্যস্ত হয় ট্রেন চলাচল। এই ঘটনার জের কাটিয়ে পরিষেবা কিছু স্বাভাবিক হওয়ার কিছু ক্ষণের মধ্যেই সাড়ে ৯টা নাগাদ ময়দান স্টেশনে ঘটে দ্বিতীয় ঘটনাটি। ট্রেন আসছে বুঝতে পেরেই বছর পঁচিশের এক যুবক ডাউন লাইনে ঝাঁপ দিয়ে নেমে পড়েন। ওই সময়ে স্টেশনের প্ল্যাটফর্মে এক মহিলা-সহ যে তিন জন আরপিএফ কর্মী ছিলেন, তাঁরা বিষয়টির গুরুত্ব বুঝে দৌড়ে যান। এক আরপিএফ কর্মী নিজেই প্ল্যাটফর্মের শুরুর দিক থেকে লাইনে নেমে চালকের দৃষ্টি আকর্ষণ করার চেষ্টা করেন। চালক শোভন বন্দ্যোপাধ্যায়ও ওই আরপিএফ কর্মীর ইঙ্গিত বুঝতে পারেন। তিনিও ইমার্জেন্সি ব্রেক কষে ট্রেন থামিয়ে দেন। এড়ানো যায় দুর্ঘটনা। পরে আরপিএফ কর্মীরাই ওই যুবককে লাইন থেকে তুলে আনেন। তাঁকেও জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। এই ঘটনাতেও প্রায় ১০ মিনিট ট্রেন চলাচল বিপর্যস্ত হয়েছে।
হয়তো এ দিন মৃত্যু ঠেকানো গিয়েছে। বিশেষ কোনও ঝামেলাও হয়নি। কিন্তু চলন্ত অবস্থায় চোখের সামনে এই সব ঘটনা ঘটলে চালকদের মনঃসংযোগ বিঘ্নিত হতে পারে। আর সেটাই আতঙ্কের কারণ ট্রেনে থাকা যাত্রীদের। এমনটাই মনে করছেন মেট্রোর কর্তারা। কিন্তু বারবার প্রচারের পরেও কোনও ভাবে থামছে না এ সব ঘটনা। মেট্রোর কর্তারা জানিয়েছেন, এ সবের বিরুদ্ধে বিজ্ঞাপন, মেট্রো টিভিতে সিনেমা, পথনাটিকা অনেক কিছুই করা হচ্ছে তবু অবস্থার পরিবর্তন হচ্ছে না। তবে মন্দের ভাল, এখনও পর্যন্ত মেট্রোয় মোট ২৬৩ জন ঝাঁপ দিয়েছেন। মেট্রোর তৎপরতায় প্রাণে বাঁচানো গিয়েছে প্রায় ৫০ শতাংশের।