নিজের বাড়িতে খুন বৃদ্ধা, উদ্ধার পচাগলা দেহ

বরাহনগরের বহু পুরনো এক বাড়ি থেকে সোমবার উদ্ধার হল বৃদ্ধার পচাগলা দেহ। মৃতার নাম সুপ্তি শেঠ (৭২)। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের অনুমান, তাঁকে হাত-পা বেঁধে শ্বাসরোধ করে খুন করা হয়েছে। আজ, মঙ্গলবার ঘটনাটির ফরেন্সিক তদন্ত হবে। এ বিষয়ে ব্যারাকপুর পুলিশ কমিশনারেটের গোয়েন্দাপ্রধান সি সুধাকর বলেন, “খুনের মামলা হয়েছে। ঘটনাটি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।”

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২০ মে ২০১৪ ০১:৪১
Share:

বরাহনগরে সুপ্তি শেঠের বাড়ি। —নিজস্ব চিত্র

বরাহনগরের বহু পুরনো এক বাড়ি থেকে সোমবার উদ্ধার হল বৃদ্ধার পচাগলা দেহ। মৃতার নাম সুপ্তি শেঠ (৭২)। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের অনুমান, তাঁকে হাত-পা বেঁধে শ্বাসরোধ করে খুন করা হয়েছে। আজ, মঙ্গলবার ঘটনাটির ফরেন্সিক তদন্ত হবে। এ বিষয়ে ব্যারাকপুর পুলিশ কমিশনারেটের গোয়েন্দাপ্রধান সি সুধাকর বলেন, “খুনের মামলা হয়েছে। ঘটনাটি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।”

Advertisement

বরাহনগর থানার উল্টো দিকে যোগেন্দ্র বসাক রোড। কয়েক পা এগোলেই বাঁ হাতে ন’কাঠা জমির উপরে তিনতলা পুরনো বাড়ি। বাড়িটির দু’টি অংশ। সুপ্তিদেবীর অংশটি ছাড়া বাকিটা বিক্রি করে দিয়েছেন তাঁর বোনেরা। তদন্তে পুলিশ জেনেছে, ২ কাঠা ৬ ছটাক জায়গায় বৃদ্ধার পোড়ো বাড়ির অংশটির দিকে দীর্ঘ দিন ধরেই নজর ছিল জমি-ব্যবসায়ীদের। বহু বছর আগে এক প্রোমোটারের সঙ্গে এ নিয়ে কথাও হয়েছিল বলে শুনেছিলেন স্থানীয় বাসিন্দারা। কিন্তু ওই বাড়িটি ভেঙে ফ্ল্যাট করার ব্যাপারে আপত্তি জানিয়েছিলেন এলাকারই প্রবীণ কিছু বাসিন্দা। এলাকায় এমনও শোনা যায়, স্বাধীনতা আন্দোলনের সময়ে কলকাতায় এসে কিছু দিন ওই বাড়িটিতে আত্মগোপন করেছিলেন বিপ্লবী ভগৎ সিংহ। ব্রিটিশ আমলের ওই বাড়িটির ঐতিহাসিক গুরুত্ব বিচারের জন্য হেরিটেজ কমিশনেরও দ্বারস্থ হয়েছিলেন কেউ কেউ। স্থানীয়েরা জানিয়েছেন, প্রাক্তন পরিবহণমন্ত্রী সুভাষ চক্রবর্তী এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে উদ্যোগী হয়েছিলেন। ফলে, জমি-ব্যবসায়ীদের তখনকার মতো পিছু হঠতে হয়।


সুপ্তি শেঠ

Advertisement

স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, এক সময়ে বাড়িটিতে কাশির ওষুধ তৈরির কারখানা ছিল। বছর পনেরো আগে সেটাও বন্ধ হয়ে যায়। নীল রঙের লোহার গেটটি সচরাচর খোলাই হত না। অনেক ছোট ছোট ঘর বাড়িটিতে। বয়সের ভারে দরজা-জানলার পাল্লাগুলো ঝুলে পড়েছে। দেওয়ালের পলেস্তারা খসেছে, ছাদ ধসে গিয়েছে। সাপখোপের বাসা হয়েছে। প্রায় গোটা বাড়িটাই অশ্বত্থ আর বট গ্রাস করেছে। তার মধ্যেই একা থাকতেন অবিবাহিতা বৃদ্ধা সুপ্তিদেবী। বাড়িতে তাঁর নিজের অংশটি ভেঙে পড়ার উপক্রম হলে বড় বোনের বিক্রি হয়ে যাওয়া অংশেই দোতলার একটি ঘরে থাকতেন তিনি। পুলিশ জেনেছে, গত বুধবার সকালে তাঁকে শেষ দেখেছিলেন স্থানীয় বাসিন্দারা। বৃহস্পতিবার থেকে গেটে খবরের কাগজের জন্য ঝোলানো থলিতে কাগজ জমতে দেখে রবিবার সকালে প্রতিবেশী সহদেব নন্দীকে খবরের কাগজওয়ালা ব্যাপারটি জানান। তার পরে সহদেববাবুরা লক্ষ করেন, বাড়িটির গেটে তালা ঝুলছে। সোমবার সহদেববাবু বলেন, “সকাল থেকেই বাড়ির চারপাশে তীব্র পচা গন্ধ পাওয়া যাচ্ছিল।” সুপ্তিদেবীর বাড়ির উল্টো দিকে একটি বহুতল আবাসন। তার নীচে একটি দোকান আছে ইজরায়েল মণ্ডলের। তিনিও বলেন, “দোকান খোলার পর থেকেই গন্ধটা পাচ্ছিলাম। ক্রেতারাও গন্ধে দাঁড়াতে পারছিলেন না। শেষে দুপুর ১২টা নাগাদ পুলিশে খবর দেওয়া হয়।”

পুলিশ তালা ভেঙে ঢুকে দেখে, দোতলায় শোয়ার ঘর ও রান্নাঘরের মাঝে ফাঁকা জায়গায় সুপ্তিদেবীর পচা-গলা দেহটি পড়ে। হাত-পা বাঁধা। মুখে কাপড় গোঁজা। শরীরে পচন ধরায় পোকা লেগে গিয়েছিল। পুলিশ দেহটি উদ্ধার করে ময়না-তদন্তে পাঠায়। খবর পেয়ে বরাহনগরে যান মৃতার বোন সুকৃতি সরকার। তিনি বলেন, “মেজদি মায়া সেনের কাছে রবীন্দ্রসঙ্গীত শিখত। ভাল গান গাইত। রামকৃষ্ণ মিশনের সঙ্গেও যুক্ত ছিল। উপার্জন বলতে কিছ টিউশনি ছিল। মাঝেমধ্যে আমার সঙ্গে কথা হত। তবে, দিনকয়েক কথা হয়নি। মনে হয়, সম্পত্তির জন্যই খুন হল মেজদি।” সুপ্তিদেবীর এক বোনঝি সঞ্চারী চক্রবর্তী বলেন, “মাসির মোবাইল আর কিছু গয়না পাওয়া যাচ্ছে না। মাসিকে বারবার বলতাম একা না থাকতে। মাসি বলত, আমাকে নিয়ে চিন্তা করিস না।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন