রাস্তায় হাঁটুজল। দেখেই উল্লাসে বল হাতে নেমে পড়লেন শহরের মেসি-নেইমারেরা। বুধবার, ধর্মতলায়। ছবি: দেশকল্যাণ চৌধুরী।
নিম্নচাপের কারসাজিতে ফের জলবন্দি মহানগর! অফিস থেকে বাড়ি ফেরার পথে নাকাল শহরবাসী। হাওয়া অফিস বলছে, বুধবারের বৃষ্টির পরেও রেহাই মিলবে না। আজ, বৃহস্পতিবারেও কলকাতা-সহ দক্ষিণবঙ্গে ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে।
সোমবার রাতের বৃষ্টিতে জল জমেছিল শহরে। সারা সকাল জল ঠেলেই অফিস যেতে হয়েছিল বাসিন্দাদের। মঙ্গলবার দুপুরের পরে জল সরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেও রাতের বৃষ্টিতে ফের কিছুটা জল জমে। এ দিন সকাল থেকে তেমন বৃষ্টি না হওয়ায় জলবন্দি দশা থেকে মুক্তির আশা জেগেছিল শহরবাসীর মনে। কিন্তু তা টিকল না। বিকেল থেকে দফায় দফায় মুষলধারে বৃষ্টিতে কার্যত বানভাসি টালা থেকে টালিগঞ্জ। জমা জলে থমকে গেল যানবাহনের গতিও। তড়িঘড়ি গন্তব্যে পৌঁছতে মেট্রোর পথ বাছলেন অনেকে। ফলে উপচে পড়া ভিড়েও মেট্রোরও দফারফা।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, কলকাতার আকৃতি অনেকটা গামলার মতো। তাই কয়েক ঘণ্টার মধ্যে অতিবৃষ্টি হলে জল জমাটাই এখানে স্বাভাবিক। কিন্তু সেই জমা জল যাতে দ্রুত বার করা যায়, সেটাই পুরসভার মূল উদ্দেশ্য হওয়া প্রয়োজন। সেটা এ দিন মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশেও প্রতিফলিত হয়েছে বলে পুর-কর্তারা জানাচ্ছেন।
পুরসভা সূত্রের খবর, এ দিন তৃণমূল ভবনে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের একটি দলীয় বৈঠক ছিল। সেখানে যাওয়ার পথে পার্ক সার্কাস কানেক্টর এবং ই এম বাইপাসের জলমগ্ন চেহারা দেখেন তিনি। তার পরেই বৈঠকে হাজির কলকাতা পুরসভার মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায় ও কয়েক জন মেয়র পারিষদকে পুরসভায় ফিরে গিয়ে জল-পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার নির্দেশ দেন। সেই নির্দেশ মেনেই রাত পর্যন্ত পুরসভার অফিসে মেয়র-সহ একাধিক মেয়র পারিষদকে বসে থাকতে হয়েছে বলে পুর সূত্রের খবর। বালিগঞ্জ পাম্পিং স্টেশনে আটটির মধ্যে দু’টি পাম্প কাজ করেনি। পুর-কর্তৃপক্ষ জানান, মঙ্গলবারের বৃষ্টিতে জল ঢুকে ওই দু’টি পাম্পের মোটর খারাপ হয়ে যায়।
হাওয়া অফিস সূত্রের খবর, মঙ্গলবার সারা দিনে কলকাতায় ১৬৮.৪ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছিল। এ দিন বিকেল পর্যন্ত বৃষ্টি হয়েছে ৯৫.৪ মিলিমিটার। ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে এমন অতি ভারী বৃষ্টি হওয়ার ফলেই জল বার করার পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে না বলে পুর-কর্তাদের একাংশের দাবি।
কী অবস্থা ছিল এ দিন?
উত্তর থেকে দক্ষিণ, কলকাতার বেশির ভাগ এলাকাই জলমগ্ন। কোথাও তা হাঁটুর উপরে, কোথাও বা গোড়ালি ডোবা। গরফা, হালতুর মতো এলাকা দেখলে মনে হবে, রাস্তা জুড়ে খালবিল হয়ে রয়েছে। বেশির ভাগ লোকই ঘরবন্দি। নিতান্ত প্রয়োজনে কেউ কেউ ওই নোংরা জল ঠেলেই রাস্তায় বেরিয়েছেন। সুবল রায় নামে এক স্থানীয় বাসিন্দা এ দিন বলেন, “মঙ্গলবার থেকেই জল জমে রয়েছে। আজ তা আরও বেড়েছে।”
উত্তরের আমহার্স্ট স্ট্রিট কিংবা স্ট্র্যান্ড রোডেও একই অবস্থা। সেখানে অলিগলি এমনকী বড় রাস্তাতেও হাঁটুজল জমেছে। বৃষ্টির দাপটে ফ্যাসাদে পড়েছেন জাদুঘর কর্তৃপক্ষও। জাদুঘর সূত্রের খবর, বৃষ্টিতে একতলার কয়েকটি গ্যালারিতে জল ঢুকে পড়ার উপক্রম হয়। তাই তড়িঘড়ি পৌনে চারটে নাগাদ জাদুঘর বন্ধ করে দেওয়ার নির্দেশ দেন কর্তৃপক্ষ।
ট্রাফিক পুলিশ সূত্রের খবর, চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউ, পার্ক স্ট্রিট, মহাত্মা গাঁধী রোডের মতো গুরুত্বপূর্ণ রাস্তায় জল জমে যাওয়ায় গাড়ি চলাচলও থমকে যায়। ফলে বহু জায়গাতেই যানজট তৈরি হয়। রাত পর্যন্ত এই যানজট চলে।
এই পরিস্থিতিতে স্বস্তির বার্তা দিতে পারছে না আলিপুর আবহাওয়া দফতর। তারা বলছে, নিম্নচাপটি সাগর ছেড়ে বাংলাদেশ ও সন্নিহিত দক্ষিণবঙ্গের উপকূলে উঠে এসেছে। তার ফলেই এমন জোরালো বৃষ্টি হয়েছে। সাধারণত, স্থলভাগের ভিতরে ঢুকে পড়লে নিম্নচাপের শক্তি কমে যায়। কিন্তু এ ক্ষেত্রে এখনই তেমন সম্ভাবনা দেখছেন না আবহবিদেরা।
আলিপুর আবহাওয়া দফতরের অধিকর্তা গোকুলচন্দ্র দেবনাথ জানান, নিম্নচাপটি এখনও সমুদ্র লাগোয়া এলাকায় রয়েছে। তার গতিও খুবই কম। তাই তড়িঘড়ি ভিতরে ঢুকে শক্তি খোয়ানোর সম্ভাবনা নেই। “বৃহস্পতিবারেও ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলিতে তুলনায় বেশি হবে।”