সকাল সাড়ে ১০টা। ইএম বাইপাসের অজয়নগর মোড়ে সার দিয়ে দাঁড়িয়ে গাড়ি। সিগন্যাল সবুজ হলেও সেগুলির এগোনোর উপায় নেই। কারণ, সামনে দাঁড়িয়ে থাকা সিমেন্ট-বোঝাই ছ’চাকার লরিটির ইঞ্জিন চালু হচ্ছে না। কিছু ক্ষণ পরে অবশ্য চালু হল ইঞ্জিন। হেলেদুলে লরি নিয়ে এগোতে শুরু করলেন চালক।
কিন্তু সকালে ইএম বাইপাসে লরি! কলকাতা পুলিশের বিধি অনুযায়ী শুধু রাত ৮টা থেকে সকাল ৯টা— এই ১৩ ঘণ্টা বাইপাসে লরি চলতে পারে। তা হলে ওই সময়ে লরিটি এল কী ভাবে! ইএম বাইপাসের নিত্যযাত্রীরা বলছেন, রোজই সকালে বাইপাসে লরি চলে। একে তো নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে যাতায়াত, তার উপরে ব্যস্ত সময়ে সেগুলি প্রবল যানজট তৈরি করে। নিউ গড়িয়া থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত মেট্রো সম্প্রসারণের কাজের জন্য বাইপাসের মাঝে প্রায় কুড়ি ফুট জায়গা ঘিরে দেওয়ায় রাস্তা সরু হয়ে এমনিই যানজট হয়। লরির যাতায়াতে তা বেড়েছে বলে অভিযোগ যাত্রীদের। সম্প্রতি দিনের বেলায় লরি চলাচলে কয়েকটি দুর্ঘটনাও ঘটেছে।
বস্তুত, বাইপাসের দু’ধারে নির্মাণের কাজ হচ্ছে, তৈরি হয়েছে বড় বড় দোকানও। দিনে-দুপুরে লরিতে সেই সব মালপত্রই সরবরাহ করা হয়। পুলিশেরই একটি সূত্র বলছে, বেশির ভাগ লরিতে সিমেন্ট-সহ নির্মাণকাজের ও মুদিখানার জিনিস থাকে। কিন্তু এ সব পুলিশের নজর এড়াচ্ছে কী করে? বাইপাসে পুলিশ নেই, তা বলা চলে না। মোড়ে মোড়ে ওয়াকিটকি হাতে দাঁড়িয়ে থাকা ট্রাফিক সার্জেন্ট সবারই চোখে পড়বে। রাস্তায় নিয়মিত গাড়ি পরীক্ষা করেন তাঁরা। এলাকাবাসীদের অভিযোগ, ট্যাক্সি, অটো বা বাস আইন ভাঙলে জরিমানা ছাড়া নিস্তার নেই। কিন্তু লরি নিয়ন্ত্রণে ওই অফিসারেরা কিছুটা নিস্পৃহ। ডিসি (ট্রাফিক) দিলীপ আদক বলেন, “সরকারি কিছু নির্মাণকাজের জন্য দিনে কয়েকটি মালবোঝাই লরি বাইপাসে যাতায়াত করে। সেগুলির তালিকা রয়েছে। ট্রাফিক সিগন্যালে ক্যামেরার মাধ্যমে বেআইনি লরি চলাচলের উপরে নজরদারি করা হয়। নিষেধাজ্ঞা না মেনে চলা কয়েকটি লরির ক্ষেত্রে মামলাও করা হয়েছে।”
রুবি মোড়ের এক পান-সিগারেট ব্যবসায়ীর কথায়, “রোজই মালবোঝাই বেশ কিছু লরি বাইপাস দিয়ে যায়। হয়তো পুলিশের সঙ্গে বোঝাপড়া থাকায় তাদের কখনও আটকানো হয় না।” অথচ, নির্দিষ্ট সময়ের বাইরে লরি চলাচল করলে দু’হাজার টাকা জরিমানা হওয়ার কথা। যা থেকে রোজ সরকারি কোষাগারে কয়েক লক্ষ টাকা জমা হতে পারে। এ বিষয়ে ডিসি (ট্রাফিক) বলেন, “এই সংক্রান্ত সুনির্দিষ্ট কোনও অভিযোগ জমা পড়েনি। পরিস্থিতির উপরে নজর রাখছি।”