নজরে শুধু রাজপথ, গলির দুঃখ ঘোচাবে কে

ওয়ার্ড নম্বর ১০। উত্তর কলকাতার নবকৃষ্ণ স্ট্রিট সংলগ্ন এলাকা। ফুটপাথের থেকে উঁচু রাস্তা। ফলে বৃষ্টি হলেই রাস্তার জল ফুটপাথ বেয়ে ঢুকে পড়ে আশপাশের বাড়িতে। এলাকার কোনও বাসিন্দা নন, খোদ কাউন্সিলর সিপিআই-এর করুণা সেনগুপ্ত ওই অভিযোগ করেছেন। তাঁর বক্তব্য, পুর-প্রশাসনকে জানিয়েও ফল হয়নি।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১১ মার্চ ২০১৫ ০৩:৫৩
Share:

ওয়ার্ড নম্বর ১০। উত্তর কলকাতার নবকৃষ্ণ স্ট্রিট সংলগ্ন এলাকা। ফুটপাথের থেকে উঁচু রাস্তা। ফলে বৃষ্টি হলেই রাস্তার জল ফুটপাথ বেয়ে ঢুকে পড়ে আশপাশের বাড়িতে। এলাকার কোনও বাসিন্দা নন, খোদ কাউন্সিলর সিপিআই-এর করুণা সেনগুপ্ত ওই অভিযোগ করেছেন। তাঁর বক্তব্য, পুর-প্রশাসনকে জানিয়েও ফল হয়নি।

Advertisement

রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের উল্টো দিকে মেটাল কানেক্টর রোড প্রায় ৩০ ফুটের। বাম আমলে শুরু হয়েছিল রাস্তাটি। শেষ হওয়ার আগেই বিদায় নেয় বাম বোর্ড। মাত্র ২৫ শতাংশ কাজ বাকি, জানিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দা অশোক বসু। রাস্তাটি সম্পূর্ণ হলে পূর্বে বিটি রোড, পশ্চিমে গোপাল চ্যাটার্জি রোড হয়ে কাশীপুর রোডে মিশবে। নির্মাণকাজ শেষ করার জন্য স্থানীয় কাউন্সিলর, বরো চেয়ারম্যান থেকে মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়কেও আবেদন জানানো হয়েছে। সাড়া মেলেনি কলকাতা পুরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দাদের সমবেত আবেদনে।

১০ নম্বর ওয়ার্ডে ফুটপাথের থেকে রাস্তা যে উঁচু, তা মেনে নিয়েছেন মেয়র পারিষদ (রাস্তা) সুশান্ত ঘোষও। তাঁর বক্তব্য, “উত্তর কলকাতার কিছু জায়গায় এমন সমস্যা আছে। পরবর্তী কালে সমাধানের ব্যবস্থা করা হবে।” তবে রবীন্দ্রভারতীর সামনের রাস্তা নিয়ে তেমন কোনও অভিযোগ পাননি বলেই মঙ্গলবার জানান তিনি।

Advertisement

৯৬ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা প্রণব পাল থাকেন বিজয়গড় অঞ্চলে। তাঁর অভিযোগ, “৭-৮ বছর আগে মাটির নীচে কেব্ল লাইন বসানোর জন্য খোঁড়া হয়েছিল রাস্তা। পাশেই রয়েছে একটি স্কুল। রাস্তা সারানোর আবেদন জানিয়েও কোনও কাজ হয়নি।”

ওই ওয়ার্ডের সমস্যা নিয়ে তৃণমূল কাউন্সিলর রেখা দে বলেন, “আগে যা খোঁড়াখুঁড়ি হয়েছিল, সব ঠিক করে দেওয়া হয়েছে। সম্প্রতি বিদ্যুতের কেব্ল বসাতে রাস্তা খোঁড়া হয়েছে। সে কাজ চলছে। শেষ হলেই রাস্তা ঠিক করে দেওয়া হবে।”

ব্রহ্মপুর রোডের উপরে এক জায়গায় পরপর দু’টি স্কুল। স্থানীয় বাসিন্দা সাম্যময় সেনগুপ্ত জানান, স্কুল থাকলেও সারাদিন ওই রাস্তায় দ্রুত গতিতে বড়-বড় গাড়ি চলে। যে কোনও সময়ে ভয়ঙ্কর দুর্ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে। তাঁর বক্তব্য, জরুরি ভিত্তিতে ওই রাস্তায় স্পিড ব্রেকার বসানো প্রয়োজন। এ প্রসঙ্গে মেয়র পারিষদ বলেছেন, “অভিযোগ জমা পড়লে ব্যবস্থা হবে।”

১২৫ নম্বর ওয়ার্ডের বাছারপাড়া রোডের বাসিন্দা বিষাণ মুখোপাধ্যায়ের অভিযোগ, আট ফুটের কমন প্যাসেজ পাকা করতে বারংবার পুরসভার দ্বারস্থ হয়েছেন তিনি। জবাব না পেয়ে তথ্য জানার অধিকার আইনের সাহায্যও নিয়েছেন। জানতে চেয়েছেন, কবে হবে সেই কাজ? মেলেনি জবাব। ওই ওয়ার্ডের সমস্যার জবাব চাইতে যোগাযোগ করা হয় এলাকার তৃণমূল কাউন্সিলর ঘনশ্রী বাগের সঙ্গেও। কাউন্সিলরের বক্তব্য, “রাস্তাটা খুব ছোট। পাকা করলে সমস্যা হবে।”

কলকাতা পুরসভার ১০৮ নম্বর ওয়ার্ডে চৌবাগার দক্ষিণপাড়া অঞ্চলের একদল বাসিন্দার অভিযোগ, ২৭ বছর হল তাঁদের এলাকা কলকাতা পুরসভা অধিগ্রহণ করেছে। কিন্তু কাঁচা রাস্তা এখনও পাকা হয়নি। এ নিয়ে স্থানীয় কাউন্সিলর তৃণমূলের পার্থ রায়চৌধুরী অবশ্য কাজ বাকি থাকার কথা স্বীকারও করে নিয়েছেন। তাঁর বক্তব্য, “যতটা পেরেছি কাঁচা রাস্তা পাকা করেছি। কিছু কাজ তো বাকি থাকতেই পারে।”

৯৪ নম্বর ওয়ার্ডে জুবিলি পার্কের রাস্তা চওড়া করা হবে কি না, জানতে চেয়েছেন বাসিন্দারা। জবাবে স্থানীয় কাউন্সিলর আরএসপি-র সেতাবুদ্দিন খন্দকার জানান, রাস্তা পূর্ত দফতরের। রাস্তা সম্প্রসারণের জন্য তাদের জানানো হয়। এখনও কাজ হয়নি।

পুরসভা সূত্রের খবর, কলকাতা পুর-এলাকায় ছোট-বড় মিলিয়ে চার হাজারেরও বেশি রাস্তা আছে। মেয়র পারিষদ সুশান্তবাবুর দাবি, বড় রাস্তাগুলিতে কোনও সমস্যা নেই। নিয়মিত ভাবে সেগুলি সারানো হয়। মান বাড়াতে অধিকাংশ রাস্তায় ম্যাসটিক অ্যাসফল্টও করা হয়েছে।

তবে কি কলকাতা পুরবোর্ড রাস্তা রক্ষণাবেক্ষণে সফল? পুরোপুরি তা মানতে নারাজ সিপিএমের রূপা বাগচী। তাঁর বক্তব্য, বড় রাস্তার হাল অনেকটা ঠিক হলেও ছোট রাস্তায় অনেক সমস্যা আছে। একই বক্তব্য বড়বাজার এলাকার কাউন্সিলর বিজেপি-র মীনাদেবী পুরোহিতের। যদিও ওই অভিযোগ মানতে নারাজ মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়। তাঁর দাবি, “দেশের অন্য যে কোনও শহরের চেয়ে কলকাতায় বড় রাস্তার অবস্থা ভাল। ফুটপাথও পেভার ব্লক দিয়ে গড়া হয়েছে।” তবে খোঁড়াখুড়ির কারণে ছোটখাটো রাস্তা-গলিতে সাময়িক কিছু সমস্যা থাকে বলে জানান তিনি। এ প্রসঙ্গে তাঁর বক্তব্য, পানীয় জল, বিদ্যুৎ, টেলিফোন-সহ আধুনিক প্রযুক্তির সব পরিষেবা দেওয়ার জন্য ব্যবহৃত কেব্ল পাতা আছে মাটির নীচে। হঠাৎ করে সমস্যা হলে মাটি খুঁড়েই তা সারাতে হয়। এর জন্য শহরের কোথাও না কোথাও প্রতিদিনই খুঁড়তে হচ্ছে রাস্তা। এর জন্য সমস্যায় পড়তে হয় পুর-প্রশাসনকে। সাময়িক ভোগান্তি হয় স্থানীয় বাসিন্দাদেরও।

পুরসভা সূত্রের খবর, দৈনিক এক-দেড়শো ছোট রাস্তা বা গলি খোঁড়ে বিভিন্ন সংস্থা। কিন্তু যত দ্রুত তা কাটাকাটি হয়, সারাতে সময় লাগে অনেক বেশি। পুরসভার একাধিক ইঞ্জিনিয়ারের কথায়, এক বার কাটার পরে রাস্তা সারাতে ততটা উদ্যোগী হয় না সংস্থাগুলি। পুরসভার দায়িত্বপ্রাপ্ত অফিসারেরাও ততটা জোর দেন না বলে মেরামতের কাজে ঢিলেমি থাকে।

তথ্য: অনুপ চট্টোপাধ্যায় এবং কৌশিক ঘোষ

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন