বিপদ-বার্তা পেতে এ বার অ্যাপ কলকাতা পুলিশের

দিল্লি, মুম্বই, গুড়গাঁও আগেই পেরেছে। এ বার একই জুতোয় পা গলাচ্ছে কলকাতা! নির্ভয়া কাণ্ডের পরে মহিলাদের নিরাপত্তা নিয়ে নানা অ্যাপ্লিকেশন (অ্যাপ) চালু হয়েছিল। শহরের তরুণী-যুবতীদের নিগ্রহের হাত থেকে বাঁচাতে সেই অ্যাপসের হাত ধরেছে দিল্লি-মুম্বই পুলিশ। লালবাজার সূত্রের খবর, টহলদারি, সিসিটিভি পেরিয়ে নিরাপত্তায় এ বার একই রকমের একটি অ্যাপ চালু করছে কলকাতা পুলিশও।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ৩০ ডিসেম্বর ২০১৪ ০৩:৩৭
Share:

দিল্লি, মুম্বই, গুড়গাঁও আগেই পেরেছে। এ বার একই জুতোয় পা গলাচ্ছে কলকাতা!

Advertisement

নির্ভয়া কাণ্ডের পরে মহিলাদের নিরাপত্তা নিয়ে নানা অ্যাপ্লিকেশন (অ্যাপ) চালু হয়েছিল। শহরের তরুণী-যুবতীদের নিগ্রহের হাত থেকে বাঁচাতে সেই অ্যাপসের হাত ধরেছে দিল্লি-মুম্বই পুলিশ। লালবাজার সূত্রের খবর, টহলদারি, সিসিটিভি পেরিয়ে নিরাপত্তায় এ বার একই রকমের একটি অ্যাপ চালু করছে কলকাতা পুলিশও। মোবাইল থেকে এই অ্যাপ মারফত লালবাজারের কন্ট্রোল রুমে বিপদ-সঙ্কেত পাঠাতে পারবেন নাগরিকেরা। সেই সঙ্কেত পেয়ে তড়িঘড়ি সাড়া দেবে পুলিশ, এমনটাই দাবি লালবাজারের কর্তাদের।

পুলিশকর্তারা জানাচ্ছেন, ‘আইওয়াচ পুলিশ’ নামে এই অ্যাপ গুগ্ল প্লে-স্টোরে বিনামূল্যে মিলবে। স্মার্টফোনে তা ডাউনলোড করে নিতে হবে। এর পরে নিজের পরিচিত আট জনের নাম, মোবাইল নম্বর ও ই-মেল আইডি দিয়ে রেজিস্ট্রেশন করলেই কলকাতা পুলিশের সঙ্গে জুড়ে যাবেন ব্যবহারকারী। পুলিশ সূত্রের খবর, এর পরে অ্যাপে থাকা সঙ্কেত ব্যবস্থা চালু করতে হবে। পথেঘাটে বিপদে পড়লে ওই সঙ্কেত ব্যবস্থায় আঙুল ছোঁয়ালেই ইন্টারনেট মারফত বিপদ-বার্তা পৌঁছে যাবে লালবাজারের কন্ট্রোল রুমে। পুলিশ জানতে পারবে বিপন্ন ব্যক্তির অবস্থান। স্বয়ংক্রিয় ভাবে ফোনের ক্যামেরা চালু হয়ে ৩০ সেকেন্ডের একটি অডিও-ভিডিও-ছবিও চলে যাবে পুলিশের কাছে। একই রকম বার্তা যাবে অ্যাপস ব্যবহারকারীর পরিচিতদের কাছেও।

Advertisement

লালবাজারের বক্তব্য, এই বার্তা পেলেই ঘটনাস্থলের কাছে থাকা টহলদার পুলিশ ও থানাকে জানানো হবে। তারা রুখতে পারবেন বিপদ। কলকাতা পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (৩) দেবাশিস রায় বলেন, “মানুষের বিপদে সাহায্য করতেই এই প্রযুক্তিকে হাতিয়ার করা হচ্ছে।”

পুলিশের অনেকেই স্বীকার করে নিচ্ছেন, জীবনযাত্রা পাল্টেছে। এখন তরুণী-যুবতীরা অনেক ক্ষেত্রেই রাত করে বাড়ি ফেরেন। তার সুযোগে নিয়ে কোথাও তাঁদের মোবাইল-ব্যাগ ছিনতাই হয়, কখনও যৌন নিগ্রহ ঘটে। রবিবারই গভীর রাতে বাঘাযতীনে এক অভিনেত্রীর উপরে দুষ্কৃতী হামলার অভিযোগ ওঠে। লালবাজারের এক কর্তার বক্তব্য, এখন প্রায় সবার হাতেই স্মার্টফোন। নানা অ্যাপস ব্যবহারেও সড়গড় তরুণ-তরুণীরা। “তাই তাঁদের সঙ্গে খাপ খাইয়েই অ্যাপস-সুরক্ষার ভাবনা।”বলছেন ওই কর্তা। সোমবার পুলিশ কমিশনারের মাসিক অপরাধ দমন বৈঠকে থানার ওসিদের এই অ্যাপ নিয়ে প্রচার চালাতে নির্দেশ দেন শীর্ষকর্তারা।

অনেকে অবশ্য বলছেন, কলকাতা পুলিশের এলাকা বাড়ার পর থেকে নানা ধরনের অপরাধ বেড়ে গিয়েছে। তা ঠেকাতে নিত্যনতুন প্রকল্প চালু করে লালবাজার। কখনও মোটরবাইক নিয়ে গলিঘুঁজিতে টহল দিতে পাঠানো হয় কর্মী-অফিসারদের, কখনও বা রাস্তায় নতুন গাড়িতে চাপিয়ে টহল দিতে পাঠানো হয় সশস্ত্র জওয়ানদের। কিন্তু অনেকেরই অভিজ্ঞতা বলছে, গাড়ি যখন উত্তরে থাকে, তখন দক্ষিণে অপরাধ করে পালায় দুষ্কৃতীরা। আবার কখনও শহরতলির গলিতে ঘুরপাক খেয়ে যায় পুলিশ-ই! তা হলে এ বার অ্যাপ-সুরক্ষায় কতটা লাভ হবে?

কলকাতার মতো মহানগরের নির্জন রাস্তা পাহারা দিতে যে শুধু টহলদার ভ্যান যথেষ্ট নয়, তা কার্যত মানছেন পুলিশকর্তাদের অনেকেই। বলছেন, সমাজের জীবনযাত্রা বদলের সঙ্গে সঙ্গে অপরাধের ধরনও বদলাচ্ছে। প্রযুক্তিতে সড়গড় অপরাধীও এখন বিরল নয়। সে ক্ষেত্রে পুলিশকেও নতুন প্রযুক্তি ব্যবহারে সড়গড় হতে হবে। “তাই সাবেকি পুলিশের সঙ্গে সঙ্গে প্রযুক্তি পুলিশেরও দরকার হয়ে পড়েছে।”মন্তব্য এক পুলিশকর্তার।

যদিও বিপদবার্তা পেয়ে পুলিশ কতক্ষণে সাড়া দেবে, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন অনেকেই। কেউ কেউ বলছেন, থানায় ফোন করলেও ঠিক মতো সাড়া মেলে না এমন উদাহরণ শহরে প্রচুর রয়েছে। তাই এ বার সঙ্কেতে লালবাজার কতটা সক্রিয় হয়, সেটাই দেখার।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন