বাড়তি যাত্রীর লোভেই অটো লাগামহীন

উল্টোডাঙা ট্রাম গুমটি থেকে রেললাইনের পাশের রাস্তা ধরে, ভিতরের গলি, তস্য গলি দিয়ে দেদার অটো চলছে। গন্তব্য কাঁকুড়গাছি হয়ে ফুলবাগান। একেবারে পুলিশের নাকের ডগা দিয়ে। অথচ, কলকাতায় সরকারি বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী যে ১২৫টি অটোর রুট রয়েছে, তার মধ্যে কোথাও এই ‘রুটের’ কোনও উল্লেখ নেই।

Advertisement

অত্রি মিত্র

কলকাতা শেষ আপডেট: ৩০ জানুয়ারি ২০১৪ ১৯:০০
Share:

উল্টোডাঙা ট্রাম গুমটি থেকে রেললাইনের পাশের রাস্তা ধরে, ভিতরের গলি, তস্য গলি দিয়ে দেদার অটো চলছে। গন্তব্য কাঁকুড়গাছি হয়ে ফুলবাগান। একেবারে পুলিশের নাকের ডগা দিয়ে। অথচ, কলকাতায় সরকারি বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী যে ১২৫টি অটোর রুট রয়েছে, তার মধ্যে কোথাও এই ‘রুটের’ কোনও উল্লেখ নেই।

Advertisement

শুধু উল্টোডাঙা থেকে ফুলবাগান নয়, কলকাতা শহরে অটোর এমন বেআইনি চিত্র ভূরি ভূরি। কোথাও সরকারি বিজ্ঞপ্তিকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে চলছে বেআইনি আস্ত একটি অটোর রুট। কোথাও একটা রুটকেই ইউনিয়ন ভেঙে দিয়েছে একাধিক রুটে। তা ছাড়া, ইউনিয়নের দাক্ষিণ্যে অটোচালকদের কাটা রুটে যাত্রী নিয়ে যাওয়া তো আছেই।

এক অটোচালকের কথায়, “ক্ষমতার রং পাল্টে গিয়েছে। কিন্তু মূল হিসেবটা একই রয়ে গিয়েছে। ইউনিয়ন যা ঠিক করে, সেটাই সব। তার উপরে প্রশাসনও কিছু করতে পারে না।” পরিবহণ দফতরের কর্তাদের দাবি, বেআইনি রুটের এই চিত্রটা কলকাতার উত্তর থেকে দক্ষিণ— সব জায়গাতেই এক।

Advertisement

যেমন ধরা যাক, উল্টোডাঙা মোড়ের কথাই। সেখান থেকে যাত্রী বেশি মেলে। সেই কারণে অনেক রুটের শেষ গন্তব্য না হওয়া সত্ত্বেও তারা চলে আসে উল্টোডাঙায়। আর সেখানে রাস্তা জুড়ে চলে শয়ে শয়ে অটোচালকদের দৌরাত্ম্য। একই অবস্থা বালিগঞ্জ স্টেশন চত্বরেও। কসবা, বোসপুকুর কিংবা রুবি থেকে যে সব অটোর যাওয়ার কথা, বেশি লাভের আশায় তারা সবাই ভিড় জমাচ্ছে বালিগঞ্জ স্টেশনের কাছে। এর মধ্যে কোনও অটোচালক যাচ্ছেন বেহালা, কেউ রাসবিহারী, কেউ হাজরা।

একই চিত্র ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ মোড়েরও। পার্ক সার্কাস থেকে যে সব অটোর যাত্রী তোলার কথা, সেই সব অটোর চালকেরা বেশি যাত্রী পাওয়ার লোভে চলে আসছেন ওই হাসপাতালের সামনে।

তবে বহু বছর ধরে বেআইনি ভাবে অটো চলছে যাদবপুর থেকে তারাতলা রুটে। সরকারি বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, দু’টি রুট রয়েছে। একটি যাদবপুর থানা থেকে টালিগঞ্জ ফাঁড়ি। অন্যটি, যাদবপুর থানা থেকে তারাতলা। কিন্তু তার বদলে ওখানে অটো চলছে বিভিন্ন রুটে। যাদবপুর থেকে রবীন্দ্র সরোবর মেট্রো, যাদবপুর থেকে আনোয়ার শাহ রোড, যাদবপুর থেকে টালিগঞ্জ ফাঁড়ি এবং যাদবপুর থেকে তারাতলা। ওই দুই রুটে ইউনিয়ন নিজেদের মতো করে রুট তৈরি করে নিয়েছে। এ তো গেল ইউনিয়নের অনিয়ম। এর উপরে আবার বেআইনি পথে হাঁটছেন চালকেরাও। ইউনিয়নের নিজেদের মতো করে তৈরি বেআইনি রুটগুলোকেও তাঁরা ভেঙে নিয়েছেন কাটা রুটে। রবীন্দ্র সরোবর মেট্রো স্টেশন থেকে চালকেরা কেউ আসছেন লেক গার্ডেন্স, কেউ সাউথ সিটি, কেউ বা যাদবপুর থানা পর্যন্ত। যদিও অটোর গায়ে লেখা থাকছে সরকারের বেঁধে দেওয়া রুটের নামই।

পরিবহণ দফতরের কর্তারা বলছেন, “যেখানেই অটোর তুলনায় যাত্রীর সংখ্যা বেশি, সেখানেই কাটা রুটের অভিযোগও বেশি। কিন্তু এ ব্যাপারে পুলিশ যতক্ষণ না ব্যবস্থা নিচ্ছে, ততক্ষণ কিছুই হবে না।”

তবে পরিবহণমন্ত্রী মদন মিত্রের দাবি, অটোর সব রকম বেআইনি কাজের বিরুদ্ধেই প্রশাসন ব্যবস্থা নেবে। সেই লক্ষ্যেই প্রশাসন গত সোমবার থেকে অভিযানে নেমেছে। তিনি বলেন, “কোনও রকম বেআইনি কাজ বরদাস্ত করা হবে না। পুলিশকে বলা হয়েছে, সব রকম অনিয়মের বিরুদ্ধেই অভিযান চালাতে। তবে ইউনিয়নগুলো যদি রুট নিয়ে সরকারের সঙ্গে আলোচনায় বসতে চায়, আমাদের কোনও আপত্তি নেই।”

অটোর রুট নিয়ে লাগামছাড়া এই অনিয়ম নিয়ে অটো ইউনিয়নের নেতারা কী বলছেন? আইএনটিটিইউসি-র নেতা মেঘনাদ পোদ্দার বলেন, “কাটা রুটের আমরা একশো শতাংশ বিরোধী। কিন্তু যেখানে রুট বাড়ানো বা কমানো হয়েছে, সেগুলি করা হয়েছে যাত্রীদের সুবিধার জন্যই। সেগুলি নিয়ে সরকার ভাবনাচিন্তা করলে ভাল হয়।” তবে সিটু-র অটো ইউনিয়নের নেতা বাবুন ঘোষের দাবি, “যে রুটের অটো, সে রুটে চালাতে হবে। কাটা রুটেও চালানো যাবে না। প্রশাসন এই বিষয়গুলি নিশ্চিত করতে পারলে অটোর অধিকাংশ সমস্যাই মিটবে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন