কেষ্টপুর-কাণ্ড

বধূকে খুনের অভিযোগে পাকড়াও ফেসবুকের বন্ধু

কেষ্টপুরের রবীন্দ্রপল্লির গৃহবধূ সোমা ঘোষকে (৪৫) খুনের অভিযোগে অভিষেক মজুমদার ওরফে নন্দন সেন নামে এক যুবককে গ্রেফতার করল পুলিশ। তার বাড়ি বোলপুরে। মঙ্গলবার গভীর রাতে নিজের বাড়ি থেকেই অভিষেককে গ্রেফতার করা হয়। পুলিশের দাবি, জেরায় অভিষেক খুনের ঘটনা স্বীকার করেছে। ধৃতের কাছ থেকে মিলেছে সোমার মোবাইল ও কিছু গয়না। পুলিশ সূত্রের খবর, ফেসবুকের মাধ্যমে দিন ১৫ আগে সোমার সঙ্গে আলাপ হয়েছিল অভিষেকের। ফেসবুকে অবশ্য অভিষেক নন্দন সেন নামে একটি ভুয়ো অ্যাকাউন্ট খুলেছিল। চ্যাটিংয়ের মাধ্যমে সেই আলাপ ক্রমশ গড়ায় বন্ধুত্বে। পুলিশের দাবি, ওই বন্ধুত্বের সূত্র ধরেই সোমবার অভিষেক সোমার ফ্ল্যাটে আসে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ৩১ জুলাই ২০১৪ ০১:১৮
Share:

অভিষেক মজুমদার

কেষ্টপুরের রবীন্দ্রপল্লির গৃহবধূ সোমা ঘোষকে (৪৫) খুনের অভিযোগে অভিষেক মজুমদার ওরফে নন্দন সেন নামে এক যুবককে গ্রেফতার করল পুলিশ। তার বাড়ি বোলপুরে। মঙ্গলবার গভীর রাতে নিজের বাড়ি থেকেই অভিষেককে গ্রেফতার করা হয়। পুলিশের দাবি, জেরায় অভিষেক খুনের ঘটনা স্বীকার করেছে। ধৃতের কাছ থেকে মিলেছে সোমার মোবাইল ও কিছু গয়না।

Advertisement

পুলিশ সূত্রের খবর, ফেসবুকের মাধ্যমে দিন ১৫ আগে সোমার সঙ্গে আলাপ হয়েছিল অভিষেকের। ফেসবুকে অবশ্য অভিষেক নন্দন সেন নামে একটি ভুয়ো অ্যাকাউন্ট খুলেছিল। চ্যাটিংয়ের মাধ্যমে সেই আলাপ ক্রমশ গড়ায় বন্ধুত্বে। পুলিশের দাবি, ওই বন্ধুত্বের সূত্র ধরেই সোমবার অভিষেক সোমার ফ্ল্যাটে আসে।

কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে, মাত্র ১৫ দিনের আলাপে কী এমন হল, যা খুন পর্যন্ত গড়াল? সোমা ও অভিষেকের ফেসবুক প্রোফাইল ঘেঁটে পুলিশ জেনেছে, সোমা, তাঁর বন্ধু পূরবী ও ধৃত অভিষেক প্রত্যেকেই ফেসবুকে ‘মিউচুয়াল ফ্রেন্ড’ ছিল। তবে কারও ফেসবুক প্রোফাইলেই নিজের ছবি ছিল না।

Advertisement

পুলিশ জানিয়েছে, দিন কয়েকের আলাপেই সোমা ও অভিষেক তাদের ফোন নম্বর ও বাড়ির ঠিকানা একে অপরকে দিয়ে দেয়। পুলিশের দাবি, অভিষেক জেরায় জানিয়েছে, সোমাই তাকে সোমবার দুপুরে বাড়িতে ডাকেন। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের অনুমান, সেখানে অভিষেকের কিছু আচরণ ঘিরে দু’জনের মধ্যে মতভেদ হয়। এর পরেই অভিষেক বেলনচাকি দিয়ে সোমার মাথায় মারে, পরে ছুরি দিয়ে তাঁর দেহে আঘাত করে। এর পরে মৃত্যু নিশ্চিত করতে সে সোমার মুখে বালিশ চাপা দিয়ে দেয়।

তবে তদন্তে উঠে আসা এই ব্যাখ্যারও কিছু ফাঁক আছে বলে মনে করছে পুলিশ। বিধাননগর কমিশনারেটের এডিসিপি সন্তোষ নিম্বলকর বুধবার বলেন, “সব দিকই খতিয়ে দেখা হচ্ছে। অভিষেককে আরও জেরা করা প্রয়োজন। ধৃত ব্যক্তি তোতলা হওয়ায় অনেক সময়েই তার সঙ্গে লিখে কথা বলতে হচ্ছে। সোমার সঙ্গে ওই যুবকের কত দিনের আলাপ, তা-ও আমরা খতিয়ে দেখছি। সোমার ফেসবুক আরও খুঁটিয়ে দেখা দরকার।” তদন্তকারীরা জানান, সোমার সঙ্গে অভিষেকের বন্ধুত্বের পিছনে টাকা-পয়সার লেনদেন ঘটিত কোনও সমস্যা ছিল কি না, তা-ও খতিয়ে দেখা হবে।

মঙ্গলবার রাতেই অভিষেককে বাগুইআটি থানায় আনা হয়। বিধাননগর কমিশনারেটের এসিপি অর্ক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “সোমার বন্ধু পূরবীর কাছ থেকে আমরা ওদের ফেসবুকের বন্ধুত্বের কথা জানতে পারি। তার পরে ফেসবুক ঘেঁটে সোমার বন্ধুদের তালিকায় অভিষেক ওরফে নন্দন নামে ওই যুবকের খোঁজ পাই। তার ফোন নম্বর ও ঠিকানা মেলে সোমার চ্যাট দেখে।” তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, ওই ফ্ল্যাটের এক বাসিন্দা তাঁদের জানিয়েছিলেন, ঘটনার দিন এক তোতলা যুবক সোমার বাড়িতে এসেছিলেন। এর পরেই ওই যুবককে খুঁজে পেতে সুবিধা হয়ে যায় বলে তদন্তকারীদের দাবি।

পুলিশ জানিয়েছে, অভিষেক বোলপুরে তার পাড়ায় তোতলা রানা হিসেবেও পরিচিত। সে প্রথমে বোলপুর স্টেশন এলাকায় লটারি বিক্রি করত। কয়েক মাস আগে ওই ব্যবসা ছেড়ে চুঁচুড়ায় কাপড়ের ব্যাগের ব্যবসায় হাত লাগায়। ব্যবসার কাজে মাঝেমধ্যেই কলকাতায় আসত হত অভিষেককে। যদিও এই ঘটনায় তাঁদের ছেলের যোগ নেই বলে দাবি অভিষেকের বাবা নন্দন মজুমদার ও মা গৌরীদেবীর। তাঁরা বলেন, “আমার ছেলে নির্দোষ। আমরা জানি না কী ঘটেছে। গভীর রাতে কেন পুলিশ ওকে গ্রেফতার করল, জানি না।”

বিধাননগর কমিশনারেটের এসিপি অর্ক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “ফেসবুকে কারও সঙ্গে বন্ধুত্ব করার সময়ে নিজের সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য দেওয়ার আগে ভাল করে সেই অপরিচিতের সম্পর্কে যাচাই করতে আমরা বারবার অনুরোধ করছি। সেই সঙ্গে বহুতল বাড়িগুলিতেও সিসিটিভি বসানোর ব্যাপারে বারংবার আবেদন করেছি। এমন সতর্কীকরণ ব্যবস্থা নিলে এই ধরনের অপরাধ অনেকটাই কমে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন