চোখের সামনে ঠাকুমাকে সে খুন হতে দেখেছে। খুনিরা তাকেও হত্যার চেষ্টা করেছিল। সে-ই একমাত্র প্রত্যক্ষদর্শী। কিন্তু ঠাকুমার খুনিদের সম্পর্কে বছর বারোর নাতনির বিভিন্ন সময়ে ভিন্ন বয়ান চিন্তায় ফেলেছে গোয়েন্দাদের।
২৫ ডিসেম্বর গার্ডেনরিচের রামনগর লেনের একটি ফ্ল্যাট থেকে ষাট বছরের জহুরা খাতুনের দেহ উদ্ধার হয়। পাশেই গুরুতর জখম অবস্থায় অবস্থায় পড়ে ছিল তাঁর নাতনি ফারিয়া। তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে, জানুয়ারির মাঝামাঝি সুস্থ হয়ে বাড়ি ফেরে সে। ময়না তদন্তের রিপোর্ট থেকে পুলিশ জেনেছে, বৃদ্ধার শরীরে ৩০টিরও বেশি ধারালো অস্ত্রের আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। গোয়েন্দা সূত্রের খবর, ফারিয়া হাসপাতালে ভর্তি থাকাকালীন তদন্তকারীদের জানিয়েছিল, দুই আততায়ীর এক জন মহিলা, অন্য জন পুরুষ। তাদের মুখ ছিল কালো কাপড়ে ঢাকা, হাতে ধারালো অস্ত্র, তারা হিন্দি টান মেশানো বাংলায় কথা বলছিল।
কিন্তু সুস্থ হয়ে বাড়ি ফেরার পরেই বদলে গেল সেই নাতনির বয়ান। পুলিশের বক্তব্য, এখন সে আততায়ী হিসেবে নাম করছে এমন কয়েক জনের, যাঁদের সঙ্গে নিহত বৃদ্ধার পরিবারের দীর্ঘ দিনের বিবাদ রয়েছে।
কেন এই বয়ান বদল? কী ভাবেই বা সে মুখোশ পরা আততায়ীদের চিনতে পারল? এ নিয়ে তদন্তকারীদের মনে দানা বাঁধছে সন্দেহ। প্রথমে গোয়েন্দাদের ধারণা হয়েছিল, দুষ্কৃতীরা জহুরাকেই খুন করতে গিয়েছিল, কিন্তু ফারিয়া টের পেয়ে যাওয়ায় তাকেও খুন করতে চেয়ে আঘাত করা হয়।
তদন্তকারীদের দাবি, ঘটনার দু’সপ্তাহ পরে হাসপাতালে শুয়ে ফারিয়া জানিয়েছিল, মাঝ রাতে ঘুম ভেঙে সে শৌচালয়ে যায়। তখনই সে দরজা খোলার আওয়াজ শুনতে পায়। বেরিয়ে দেখে, মুখ ঢাকা দুই আততায়ী ধারালো অস্ত্র দিয়ে ঠাকুমাকে আঘাত করছে। ফারিয়ার বক্তব্য ছিল, সে চিৎকার শুরু করলে ওই দু’জন তার দিকে ছুটে আসে এবং তাকেও মারধর শুরু করে। তার পর আর কিছু তার মনে নেই।
পুলিশ জানায়, ঘটনাস্থল থেকে ভাঙা চুড়ি মেলায় মনে করা হয়েছিল, সেগুলি জহুরা বা ফারিয়ার। পরে জানা যায়, জহুরা বা ফারিয়া চুরি পড়তেন না। হাসপাতাল থেকে বাড়ি এলে ফারিয়াকে ফের জিজ্ঞাসাবাদ করেন গোয়েন্দারা। তখন সে জানায়, দুষ্কৃতীদের সে চিনতে পেরেছে এবং আততায়ী হিসেবে এলাকার কয়েক জনের নামও বলে। গোয়েন্দারা জিজ্ঞেস করেন, মুখ ঢাকা আততায়ীদের সে চিনল কী ভাবে? এর উত্তর অবশ্য ফারিয়া দিতে পারেনি। গোয়েন্দাদের অনুমান, পরিবারের সদস্যদের একাংশের নির্দেশে বয়ান বদল করেছে সে। পুলিশের দাবি, ফারিয়া যাঁদের নাম বলেছে, প্রাথমিক ভাবে তাঁদের ওই হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার প্রমাণ বা যোগসূত্র মেলেনি।
জহুরার তিন ছেলেকেই পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। গোয়েন্দাদের দাবি, ছোট ছেলের কথায় কিছু অসঙ্গতি মিলেছে। লালবাজার সূত্রে খবর, ছোট ছেলে প্রথমে জানান, তাঁর গাড়ির ব্যবসা রয়েছে ও একটি গাড়ি মাঝ রাস্তায় খারাপ হওয়ায় ২৫ ডিসেম্বর ভোরে তিনি বাড়ি ফেরেন। তার পরে আর ঘুমোননি। সেই সকালেই মেলে জহুরার দেহ। পরে তদন্তকারীরা জানতে পারেন, সে দিন গাড়ি খারাপের কোনও ঘটনা ঘটেনি। বৃদ্ধার তিন ছেলেরই মোবাইলের কল ডিটেল রেকর্ড (সিডিআর) খুঁটিয়ে দেখছেন গোয়েন্দারা। পুলিশের দাবি, একটি নম্বরের সিডিআর-এ মিলেছে এমন কয়েকটি মোবাইল নম্বর, যেগুলি স্থানীয় কয়েক জন দুষ্কৃতী ব্যবহার করে। খুনের তদন্তে এগোতে আপাতত সেটাই গোয়েন্দাদের সূত্র।