ভর্তি করতে টাকা, সালিশিতে অভিযুক্ত থানা

টাকা নিয়ে কলেজে ভর্তি করানোর অভিযোগ পেয়েও পুলিশ অভিযুক্তকে ধরেনি, এমন অভিযোগ আগেও উঠেছে। এ বার অভিযুক্তকে থানায় এনে অভিযোগকারিণীর সামনে বসিয়ে মধ্যস্থতা করার অভিযোগ উঠল পুলিশের বিরুদ্ধে। চাপের মুখেও অভিযোগকারিণী অবশ্য অভিযোগ তুলে নেননি। কিন্তু তার পরেও অভিযুক্তকে গ্রেফতার না-করে থানা থেকে চলে যেতে দিয়েছে পুলিশ। ঘটনাটি ঘটেছে খাস কলকাতাতেই।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৯ জুলাই ২০১৪ ০২:৫১
Share:

টাকা নিয়ে কলেজে ভর্তি করানোর অভিযোগ পেয়েও পুলিশ অভিযুক্তকে ধরেনি, এমন অভিযোগ আগেও উঠেছে। এ বার অভিযুক্তকে থানায় এনে অভিযোগকারিণীর সামনে বসিয়ে মধ্যস্থতা করার অভিযোগ উঠল পুলিশের বিরুদ্ধে। চাপের মুখেও অভিযোগকারিণী অবশ্য অভিযোগ তুলে নেননি। কিন্তু তার পরেও অভিযুক্তকে গ্রেফতার না-করে থানা থেকে চলে যেতে দিয়েছে পুলিশ। ঘটনাটি ঘটেছে খাস কলকাতাতেই।

Advertisement

ঠিক কী ঘটেছিল? শিল্পী নন্দী নামে এক ছাত্রী বৃহস্পতিবার রাতে শ্যামপুকুর থানায় অভিযোগ জানাতে গিয়েছিলেন। তাঁর অভিযোগ, কাশীশ্বরী বা বিদ্যাসাগর কলেজে ভর্তি করিয়ে দেওয়ার জন্য তাঁর কাছ থেকে পাঁচ হাজার টাকা নিয়েছিলেন মৌমিতা নামে এক তরুণী। মৌমিতা কাশীশ্বরী কলেজের প্রাক্তন ছাত্রী হিসেবে নিজের পরিচয় দিয়েছিলেন। শিল্পী জানান, ভর্তি করাতে না-পেরে মাত্র দু’হাজার টাকা ফেরত দিয়েছিলেন মৌমিতা। বাকি টাকা চাইলে হুমকি দেওয়া হয়। পুলিশি সূত্রের খবর, সব শুনে থানার অফিসারদের একাংশ তৎপর হয়ে ওঠেন। শিল্পী বলেন, “অভিযোগ দায়ের করলে সমস্যা বাড়বে, এ কথা বলে মিটিয়ে নেওয়ার উপদেশ দেন শ্যামপুকুর থানার অফিসারেরা।”

পুলিশের একাংশ বলছে, বৃহস্পতিবার রাতে অবশ্য লিখিত অভিযোগপত্র জমা দিয়েই থানা ছাড়েন শিল্পী। কিন্তু শুক্রবার দুপুর পর্যন্ত অভিযোগ তুলে নেওয়ার জন্য তাঁর উপরে নানা ভাবে চাপ সৃষ্টি করা হয়েছে বলে অভিযোগ।

Advertisement

কী ভাবে চাপ দেওয়া হয়? শিল্পীর অভিযোগ, বৃহস্পতিবার রাতে থানায় বসে অভিযোগ লেখার সময় বাইরের দুই যুবক এসে পুলিশের সামনেই তাঁকে অভিযোগ করতে নিষেধ করে। শিল্পী বলেন, “ওই দু’জনের মধ্যে এক জন মৌমিতার পরিচিত।” শিল্পীর অভিযোগ, শুক্রবার সকালে শ্যামপুকুর থানা থেকে তাঁকে ফোন করা হয়। জানতে চাওয়া হয়, মৌমিতা ফোন করেছিল কি না! তার কিছু পরেই শিল্পীকে ফোন করেন মৌমিতা। প্রথমে মৌমিতা বলেন, তিনি শিল্পীর বাড়ি গিয়ে বাকি টাকা দিয়ে আসবেন। পরে ফের ফোন করে বলেন, শিল্পী যেন থানায় গিয়ে টাকা ফেরত নিয়ে যান। অভিযোগ তোলার জন্যও তাঁকে হুমকি দেওয়া হয় বলে শিল্পীর অভিযোগ।

পুলিশি সূত্রের খবর, শিল্পী এ দিন বাবাকে নিয়ে থানায় যান। এক বন্ধুকে নিয়ে মৌমিতা অবশ্য তার আগেই থানায় পৌঁছে গিয়েছিলেন। তবে পুলিশের একাংশ ক্রমাগত চাপ সৃষ্টি করলেও অভিযোগ প্রত্যাহার করেননি শিল্পী। ওই ছাত্রী জানান, বাবাকে নিয়ে তিনি থানা থেকে বেরোনোর আগেই চলে যান মৌমিতা।

প্রশ্ন উঠেছে, পুলিশ অভিযোগ নেওয়ার বদলে সালিশি করছিল কেন? অভিযোগকারিণীকে মিটিয়ে নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছিল কেন? তা কি হলে থানার একাংশের সঙ্গে অভিযুক্তের যোগাযোগ আছে? অভিযোগ দায়ের করার পরেও কাউকে গ্রেফতার করা হয়নি কেন?

লালবাজার সূত্রের খবর, অভিযুক্ত হিসেবে যে-তরুণীর নাম উঠে এসেছে, সেই মৌমিতা তৃণমূল ছাত্র পরিষদ বা টিএমসিপি-র কর্মী। তিনি টিএমসিপি-র রাজ্য সাধারণ সম্পাদক তমোঘ্ন ঘোষের পরিচিত। যদিও তমোঘ্ন বলেন, “মৌমিতা বলে কাউকে চিনি না। কেউ দোষ করে থাকলে তার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হোক।” এ ব্যাপারে মৌমিতার বক্তব্য জানা যায়নি। কারণ, বারবার ফোন করা সত্ত্বেও তিনি ফোন তোলেননি। এসএমএস করা সত্ত্বেও জবাব দেননি অভিযুক্ত তরুণী।

পুলিশের এক শ্রেণির অফিসার-কর্মীর বক্তব্য, কলেজে ভর্তি নিয়ে শাসক দলের নেতাদের নাম জড়িয়ে যাওয়ায় পুলিশেরই একাংশ বিষয়টি নিয়ে অভিযোগ দায়ের করতে চাননি। বরং চাপ দিয়ে বিষয়টি মিটিয়ে নেওয়ার ব্যবস্থা করতেই তৎপর ছিলেন তাঁরা। তাই অভিযোগ দায়ের হওয়ার পরেও অভিযুক্ত তরুণী নির্ভয়ে থানায় হাজির হয়েছিলেন এবং গ্রেফতারি এড়িয়ে বেরিয়েও যান।

কলকাতা পুলিশের ডিসি (উত্তর) বাস্তব বৈদ্য অবশ্য পুলিশের এই মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, “ওই ছাত্রীর অভিযোগের ভিত্তিতে সব কিছুই খতিয়ে দেখা হচ্ছে।” কিন্তু অভিযোগ দায়ের হওয়ার পরে অভিযুক্ত থানায় এসে কী করছিলেন, কী ভাবেই বা তিনি বেরিয়ে গেলেন, সেই ব্যাপারে কিছু বলতে চাননি ওই পুলিশকর্তা।

শুধু কাশীশ্বরী বা বিদ্যাসাগর কলেজ নয়, ভর্তি করিয়ে দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে টাকা নেওয়ার অভিযোগ উঠছে অন্যান্য কলেজেও। শ্যামাপ্রসাদ কলেজের প্রথম বর্ষের কলা বিভাগের এক ছাত্রী সম্প্রতি ভবানীপুর থানায় অভিযোগ করেছিলেন, ভর্তি করিয়ে দেওয়ার জন্য তাঁর কাছে পাঁচ হাজার টাকা চেয়েছেন ওই কলেজের দু’জন ছাত্রনেতা। তাঁরা নিজেদের তৃণমূল ছাত্র পরিষদের সঙ্গে কর্মী বলে পরিচয় দিয়েছিলেন। পুলিশ সেই ঘটনাতেও কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি। এক শ্রেণির পুলিশকর্মীর বক্তব্য, সব জেনেশুনেও চোখ বন্ধ করে থাকছে পুলিশ। শ্যামপুকুর থানার ক্ষেত্রেও একই ঘটনা ঘটতে পারে বলে লালবাজারের একাংশের আশঙ্কা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন