ভ্যানে করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথে রাস্তাতেই আচমকা প্রসব হয়ে যায় ধাপার খানাবেড়িয়ার মায়াদেবীর। রাস্তায় পড়ে মৃত্যু হয়েছিল সেই সদ্যোজাতের। দিন কয়েক আগে বিষধর সাপের কামড়ে বেঘোরে প্রাণ দিতে হয়েছে অনন্তবাদালের শিবরাম প্রসাদকে। কারণ, তাঁকে সময় মতো হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার জন্যে কোনও বাস বা অটো মেলেনি। কোনও বিচ্ছিন্ন ছবি নয়। যোগাযোগের নির্দিষ্ট মাধ্যম না থাকায় কলকাতা পুরসভার ৫৭ নম্বর ওয়ার্ডের মাকালতলা এবং ৫৮ নম্বর ওয়ার্ডের উঁচুপোতা, খানাবেড়িয়া, ধাপা-দূর্গাপুর, বোঁইচতলা, অনন্তবাদল, সাহেবাবাদ, আরুপোতার বাসিন্দারা এ ভাবেই নিত্য দুর্ভোগের শিকার হন।
ইএম বাইপাসের পূর্ব দিকের এই অঞ্চলে প্রায় দশ-বারো হাজার মানুষের বাস। এর পশ্চিমে বাইপাসের মাঠপুকুর। পূর্বে বাসন্তী হাইওয়ের উপরে কয়লা ডিপো। আর রয়েছে চৌভাগার মোড়। বাসিন্দাদের অভিযোগ, এমনিতেই বাস পেতে অনেক ক্ষণ অপেক্ষা করতে হয়। কয়লা ডিপো বাসস্টপ না হওয়ায় বাস দাঁড়াতে চায় না। সন্ধ্যা সাতটার পরে কয়লা ডিপো কিংবা চৌভাগার মোড় থেকে কোনও বাস মেলে না। উঁচুপোতার লক্ষ্মণ সামন্ত বলছেন, “বাইপাস থেকে বাসন্তী হাইওয়ে ধাপার ভিতরে এই বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে কোনও যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়েই ওঠেনি। নিজস্ব গাড়ি না থাকলে বাস রাস্তায় পৌঁছতে ভরসা ধাপায় ময়লা ফেলতে আসা গাড়ি অথবা সব্জিভ্যান।”
অন্য দিকে, উত্তর কলকাতার বিটি রোডের উপরে চিড়িয়ামোড় থেকে কাশীপুরে ঢুকলে কোনও বাস মিলবে না। এখানে কোথাও যেতে হলে রিকশা বা অটোর জন্য দীর্ঘ ক্ষণ অপেক্ষা করতে হয় বলে অভিযোগ বাসিন্দাদের। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, কাশীপুর উদ্যানবাটীর সামনে থেকে চিড়িয়ামোড়ের অটো পেতে আধ ঘণ্টারও বেশি অপেক্ষা করতে হয়। এখানে একটি বেসরকারি রুটের বাস অনিয়মিত ভাবে চলে। তবে সপ্তাহখানেক হল অন্য একটি বেসরকারি রুটের বাস চালু হয়েছে। কিন্তু এতেও সমস্যা কমবে না বলে আশঙ্কা স্থানীয় বাসিন্দাদের।
ধাপা এলাকায় কাজ করা স্থানীয় একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা সূত্রে খবর, শুধুমাত্র এই বেহাল যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণেই ধাপার বাসিন্দারা নানা পরিষেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। বাসিন্দাদের দাবি, মাঠপুকুর, শিয়ালদহ, বিধাননগর, সায়েন্স সিটির সঙ্গে তাঁদের যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে মাঠপুকুর থেকে বাসন্তী হাইওয়ে প্রায় চার কিলোমিটার এই রাস্তায় বাস চালু করা হোক। সেই সঙ্গে কয়লা ডিপোতে বাসস্টপ করা হোক।
রাজ্য পরিবহণ দফতর সূত্রে খবর, এ বছর ডিসেম্বরের মধ্যে অনেকগুলি নতুন রুট চালু হবে। ৮০০টির বেশি বাস নামবে। পরিবহণমন্ত্রী মদন মিত্র বলেন, “উদ্যানবাটীর সামনে থেকে আরও বাস চালু করার ব্যাপারে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। ধাপা এলাকার নাগরিক প্রতিনিধিরা আমার সঙ্গে যোগাযোগ করুন। সব দিক বিবেচনা করে ডিসেম্বরের মধ্যে ওখানেও নতুন বাস রুট শুরু করা যায় কি না সে ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।”