দাবি ছিল মেট্রো চলুক রাত ১১টা পর্যন্ত। দীর্ঘ অপেক্ষার পরে সময় বাড়ানোও হল। কিন্তু যেটুকু সময়সীমা বাড়ল, তাতে তেমন কোনও সুরাহা হবে না বলেই মনে করছেন যাত্রীরা।
মেট্রো সূত্রে খবর, নতুন সূচি অনুযায়ী দমদম এবং কবি সুভাষ উভয় দিকের প্রান্তিক স্টেশন থেকে প্রথম মেট্রো ছাড়বে পৌনে সাতটায় এবং শেষ মেট্রো ছাড়বে রাত ৯টা ৫৫ মিনিটে। ২৫ মার্চ থেকে নতুন সময়-সারণি মেনে মেট্রো চলবে বলে মঙ্গলবার জানান রেল প্রতিমন্ত্রী অধীররঞ্জন চৌধুরী। পাশাপাশি, এ দিন মেট্রোর সুড়ঙ্গে যাত্রীদের নিরাপত্তার জন্য লাইনে বিশেষ স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থারও উদ্বোধন করেন তিনি। এই ব্যবস্থায় চালক সিগন্যাল অমান্য করলে মেট্রো আপনা থেকেই থেমে যাবে।
যাত্রীদের বক্তব্য, সকালের সময় যাই হোক, রাত সাড়ে ১১টা পর্যন্ত চালানো হোক মেট্রো। কিন্তু তার জায়গায় দিনে-রাতে মাত্র ১৫ মিনিট করে সময় বাড়ালে কাজের কাজ কিছু হবে না। গত কয়েক বছরে কলকাতা যে ভাবে বেড়েছে, তাতে মেট্রো পরিষেবা না বাড়ালে যে শহরের গতি আর বাড়বে না, তা পরিষ্কার। তার পরে সামনেই নির্বাচন। ফলে তা মাথায় রেখে অবশেষে কম হলেও কলকাতার ‘লাইফলাইন’ মেট্রোর সময়সীমা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিলেন কর্তৃপক্ষ।
মেট্রো সূত্রের খবর, এ বারের রেল বাজেটে মেট্রোর সময়সীমা বাড়ানোর কথা ছিল। ওই সময় রাত ১১টা পর্যন্ত মেট্রো চলবে বলেই ভাবনা-চিন্তা করা হচ্ছিল। কিন্তু মেট্রো কর্তৃপক্ষ ওই প্রস্তাব মানতে চাননি। পরে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কর্মী ও ইউনিয়নগুলির দফায় দফায় বৈঠকের পরে দিনের শুরু ও শেষে মেট্রো চালানোর ক্ষেত্রে ১৫ মিনিট করে ৩০ মিনিট সময় বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
মেট্রো কর্তাদের বক্তব্য, ১০০ টাকা আয় করতে মেট্রোকে ৩০০ টাকা খরচ করতে হয়। তার উপরে রাত ১১টা পর্যন্ত মেট্রো চালাতে গেলে কর্মীদের আর একটি শিফ্ট চালু করতে হবে। খরচ বাড়বে। নতুন করে আর আর্থিক বোঝা নিতে চাইছে না মেট্রো।
কলকাতায় মেট্রো শুরু হয় ১৯৮৪-র ২৪ অক্টোবর। তখন থেকে ধাপে ধাপে স্টেশনের সংখ্যা যেমন বেড়েছে, তেমন সময়সীমাও বেড়েছে। কিছু দিনের মধ্যে শহরতলিতেও চলবে মেট্রো। মেট্রো চালানোর ক্ষেত্রে মোট ৮৭ কিমির অনুমোদন রয়েছে। মঙ্গলবার মেট্রোর অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, “নানা জটিলতায় মেট্রোকে এগিয়ে নিতে পারছি না। মাত্র ২৭ কিলোমিটারে আটকে পরিষেবা।”
পরিষেবার মান যে আরও উন্নত করতে হবে, সেটাও এ দিন জানিয়ে দেন রেল প্রতিমন্ত্রী। এ দিন বেশ কয়েকটি ছোট পরিষেবার (চলন্ত সিঁড়ি, টিকিট কাটার স্বয়ংক্রিয় যন্ত্র ইত্যাদি) উদ্বোধন করেন তিনি।
মেট্রোয় রাতের সময়সীমা শেষ বার বেড়েছিল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রেলমন্ত্রী থাকাকালীন। তখন সাড়ে ৯টা থেকে সময়সীমা বাড়িয়ে করা হয় রাত পৌনে ১০টা পর্যন্ত। মাস ছ’য়েক আগে সংসদীয় কমিটি কলকাতায় এসে মেট্রো পরিষেবা কেন রবিবার সকালে দেওয়া হবে না, তা নিয়ে মেট্রো কর্তাদের তীব্র ভর্ৎসনা করেন। এর পরেই রেল প্রতিমন্ত্রীর নির্দেশে রবিবার সকাল ১০টা থেকে চালু হয় মেট্রো। তার পরে এ দিন সোম থেকে শুক্রবার পর্যন্ত মেট্রোর শুরু ও শেষের সময়সীমাও বাড়ানো হল।
বাসভাড়া না বাড়ায় এমনিতেই রাজ্য জুড়ে বাসের সংখ্যা অনেক কমে গিয়েছে। এর ফলেই বেড়ে গিয়েছে মেট্রোর ভিড়। বর্তমানে মেট্রোতে প্রায় ৬ লক্ষাধিক মানুষ যাতায়াত করেন। এমতাবস্থায় মেট্রোয় রাতের ওই সামান্য সময়সীমা বাড়ানোয় কলকাতায় রাতের পরিবহণে কী নতুন মাত্রা যোগ হবে, সেটাই দেখার।