মর্ত্যে মদন-ভোগ, পাতালে মেট্রো: নাজেহাল মহানগর

এ যেন পথে বাঘ, পাতালে সাপ! মদন মিত্রের গ্রেফতারির বিরোধিতা-সহ দিনভর নানা রাজনৈতিক কর্মসূচিতে যখন স্তব্ধ রাজপথ, তখন শহরবাসীর একমাত্র ভরসা ছিল মেট্রো। কিন্তু ব্যস্ত সময়ে ভোগাল পাতালপথও। শনিবার দুপুরে কালীঘাট স্টেশনে ট্রেনে কাটা পড়ে এক ছাত্রের মৃত্যুর ঘটনায় কয়েক ঘণ্টা বন্ধ রইল পরিষেবা। ভোগান্তির এই জোড়া ফলায় নাজেহাল হল শহর।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৪ ডিসেম্বর ২০১৪ ০১:১১
Share:

যানজটে অচল রাজপথ। শনিবার, ধর্মতলায়।—নিজস্ব চিত্র

এ যেন পথে বাঘ, পাতালে সাপ!

Advertisement

মদন মিত্রের গ্রেফতারির বিরোধিতা-সহ দিনভর নানা রাজনৈতিক কর্মসূচিতে যখন স্তব্ধ রাজপথ, তখন শহরবাসীর একমাত্র ভরসা ছিল মেট্রো। কিন্তু ব্যস্ত সময়ে ভোগাল পাতালপথও। শনিবার দুপুরে কালীঘাট স্টেশনে ট্রেনে কাটা পড়ে এক ছাত্রের মৃত্যুর ঘটনায় কয়েক ঘণ্টা বন্ধ রইল পরিষেবা। ভোগান্তির এই জোড়া ফলায় নাজেহাল হল শহর।

সারদা-কাণ্ডে শুক্রবার সিবিআই পরিবহণমন্ত্রী মদন মিত্রকে গ্রেফতার করার পরেই শহরের বিভিন্ন এলাকায় বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন তৃণমূল সমর্থকেরা। তখনই শহর জেনে যায়, শনিবার এর প্রতিবাদে ঘোষিত কর্মসূচি পালন করবে তৃণমূল। এ দিন দুপুর ২টো নাগাদ ধর্মতলায় গোষ্ঠ পালের মূর্তির পাদদেশ থেকে তৃণমলের মিছিল শুরু হয়। ইন্দিরা গাঁধী সরণি হয়ে রানি রাসমণি অ্যাভিনিউ ধরে সেই মিছিল ডোরিনা ক্রসিং পৌঁছয় এবং একই পথ ধরে গোষ্ঠ পালের মূর্তির পাদদেশে ফিরে যায়। এর ফলে অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে জওহরলাল নেহরু রোড ও মেয়ো রোড এলাকা।

Advertisement

ঘণ্টাখানেক পরে মেয়ো রোড স্বাভাবিক হলেও জওহরলাল নেহরু রোডের উপরে বিকেল ৩টে থেকে ফের সারদা-কাণ্ড নিয়ে বামফ্রন্টের জমায়েত শুরু হয়ে যায়। প্রায় একই সময়ে শাসক ও বিরোধী, দুই দলের মিছিল-জমায়েতের জেরে মধ্য কলকাতার প্রায় প্রতিটি রাস্তা কম-বেশি যানজটে অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে। উত্তর থেকে দক্ষিণ কলকাতার দিকে কিছু বাস-ট্যাক্সি যাতায়াত করতে পারলেও দক্ষিণ থেকে উত্তরমুখী অধিকাংশ গাড়ি যানজটে আটকে যায়। বাধ্য হয়ে বহু যাত্রী বাস থেকে নেমে গন্তব্যের দিকে হাঁটতে শুরু করেন। অনেকে বাধ্য হয়ে বাসে বসে থাকেন। ট্যাক্সিতেও আটকে থাকেন বহু মানুষ।

বামফ্রন্টের মিছিল এ দিন ধর্মতলা থেকে শুরু হয়ে লেনিন সরণি দিয়ে মৌলালি পৌঁছয়। রামলীলা ময়দানের কাছে মুখ্যমন্ত্রীর কুশপুতুল পোড়ান বাম-সমর্থকেরা। এই মিছিলের জেরে রফি আহমেদ কিদোয়াই রোড, সুবোধ মল্লিক স্কোয়ার, আচার্য জগদীশচন্দ্র বসু রোডে ব্যাপক যানজট হয়। তার প্রভাব গিয়ে পড়ে শিয়ালদহের এ জে সি বসু রোড উড়ালপুলেও।

মদন মিত্রকে গ্রেফতারের প্রতিবাদে এ দিন দক্ষিণে বেলভেডিয়ার রোডও অবরোধ করেন তৃণমূল সমর্থকেরা। আবার সারদা-কাণ্ডে মুখ্যমন্ত্রীকে জেরা করতে হবে, এই দাবি তুলে কংগ্রেস সমর্থকেরা পার্ক সার্কাসের চার নম্বর ব্রিজ, হাওড়া ব্রিজ ও শ্যামবাজার মোড় বেশ কিছুক্ষণ অবরোধ করে রাখেন। একই দাবি তুলে সন্ধ্যায় যাদবপুরে পথ অবরোধ করে সিপিএম-ও।

এরই মধ্যে মানুষের ভোগান্তি বাড়ায় মুখ্যমন্ত্রীর ভাইয়ের সংগঠনের ডাকে নেতাজির জন্মদিনকে জাতীয় ছুটি ঘোষণা করার দাবিতে শহিদ মিনারের সমাবেশ। বাসে-লরিতে চেপে স্বেচ্ছাসেবকেরা ওই সভায় যোগ দিতে আসেন। শহিদ মিনার চত্বর থেকে ওই জমায়েতের লোকেরা কেউ কেউ চলে যান গোষ্ঠ পালের মূর্তির তলায়। অন্য একটি অংশ যায় আলিপুরে। ওই সমাবেশের জন্য এক সময়ে দিশাহারা হয়ে পড়ে পুলিশ।

এমনিতেই শনিবার রাস্তায় বাস-ট্যাক্সি অন্যান্য দিনের তুলনায় কিছুটা কম থাকে। তার উপরে রাজনৈতিক দলগুলির মিছিলের কারণে বহু জায়গা থেকেই বাস-ট্যাক্সি কার্যত উধাও হয়ে যায়। রাস্তায় আটকেও যায় সরকারি-বেসরকারি বহু বাস। যদিও বা ট্যাক্সি মিলেছে, গ্যাঁটের কড়ি বেশি খরচা করে গন্তব্যস্থলে পৌঁছতে হয়েছে মানুষকে। কোথাও বাসের ভিড়ে চিঁড়েচ্যাপ্টা হয়েছেন যাত্রীরা।

টালিগঞ্জ থেকে বৌবাজারে ব্যবসার কাজে যাচ্ছিলেন ইকবাল নাসের শাহ। পার্ক স্ট্রিটের উড়ালপুলের উপরে আটকে পড়েন তিনি। ক্ষুব্ধ নাসেরের বক্তব্য, “রাজনীতির ঝামেলায় আমাদের ভোগান্তি হচ্ছে। এই কষ্ট তো আর নেতারা বুঝতে পারেন না।” পার্ক স্ট্রিটের কাছে একটি বেসরকারি স্কুলের বাস আটকে ছিল। যানজটে আটকে ক্লান্ত হয়ে পড়েছিল সপ্তম শ্রেণির ছাত্র আরিয়ান অগ্রবাল। কাছে যেতেই সে বলল, “শনিবার তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরব ভেবেছিলাম। কেন যে বাসটা এগোচ্ছে না?”

মাটির উপরে যখন এই দুর্বিষহ অবস্থা, তখনই কালীঘাট স্টেশনে মেট্রোর লাইনে দুর্ঘটনা ঘটে। মেট্রো রেল সূত্রে খবর, দুপুর আড়াইটে নাগাদ ট্রেন ঢোকার সময়ে লাইনের উপরে ‘ঝাঁপ’ দেয় সন্দীপ বসু (১৭) নামে একাদশ শ্রেণির এক ছাত্র।

এর ফলে বেশ কিছুক্ষণ ওই লাইনে মেট্রো চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পরে দমদম স্টেশন থেকে ময়দান এবং রবীন্দ্র সরোবর থেকে কবি সুভাষ স্টেশন পর্যন্ত মেট্রো চালানো হয়। ট্রেন চলাচল পুরোপুরি স্বাভাবিক হতে পার হয়ে যায় বেশ কয়েক ঘণ্টা। একই সঙ্গে মেট্রো-বিভ্রাট এবং রাস্তার যানজটে চূড়ান্ত হয়রানির শিকার হতে হয় শহরবাসীকে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন