যাত্রী ফেরাতে মমতাহীন ‘নো রিফিউজাল’ ট্যাক্সিও

সোমবার দুপুর। নিউ মার্কেটের মুখে ‘ট্যাক্সি বে’-তে হন্যে হয়ে ঘুরছেন এক যুবক। ক্যানিং স্ট্রিটে যাওয়ার জন্য ট্যাক্সি চাই। গন্তব্য পছন্দ নয়, তাই মনোজ সাউ নামের ওই যুবকের দিকে হাত নাড়িয়ে না বলে দিলেন ‘ডব্লিউ বি ০৪০৬৪১২’ নম্বর গাড়ির চালক। হাত দেখালেও না থেমেই চলে গেল ‘ডব্লিউ বি ০৪এফ ৭১৯২’। দিনে-রাতে ট্যাক্সি প্রত্যাখ্যান ছিলই। মুখ্যমন্ত্রী জরিমানা কমানোর কথা ঘোষণা করার পরে এ বার ‘ট্যাক্সি বে’-তে দাঁড়িয়েও যাত্রী ফেরানোর অভিযোগ উঠছে চালকদের বিরুদ্ধে।

Advertisement

দেবাশিস দাস

শেষ আপডেট: ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০২:৩২
Share:

যাব না। অবাধ্য ট্যাক্সি আর অসহায় যাত্রী। সোমবার, ধর্মতলায়। ছবি: প্রদীপ আদক

সোমবার দুপুর। নিউ মার্কেটের মুখে ‘ট্যাক্সি বে’-তে হন্যে হয়ে ঘুরছেন এক যুবক। ক্যানিং স্ট্রিটে যাওয়ার জন্য ট্যাক্সি চাই। গন্তব্য পছন্দ নয়, তাই মনোজ সাউ নামের ওই যুবকের দিকে হাত নাড়িয়ে না বলে দিলেন ‘ডব্লিউ বি ০৪০৬৪১২’ নম্বর গাড়ির চালক। হাত দেখালেও না থেমেই চলে গেল ‘ডব্লিউ বি ০৪এফ ৭১৯২’।

Advertisement

দিনে-রাতে ট্যাক্সি প্রত্যাখ্যান ছিলই। মুখ্যমন্ত্রী জরিমানা কমানোর কথা ঘোষণা করার পরে এ বার ‘ট্যাক্সি বে’-তে দাঁড়িয়েও যাত্রী ফেরানোর অভিযোগ উঠছে চালকদের বিরুদ্ধে।

সম্প্রতি মুখ্যমন্ত্রী ট্যাক্সিচালকদের জরিমানার পরিমাণ তিন হাজার থেকে কমিয়ে একশো টাকা করার নির্দেশ দিয়েছেন। রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে পুর-ভোটের আগে ট্যাক্সিচালকদের হাতে রাখতেই এমন সিদ্ধান্ত। অভিযোগ, তার পরে যাত্রী প্রত্যাখ্যানের চিত্রটা আরও বেড়েছে। যত্রতত্র যাত্রী প্রত্যাখ্যান করছে ‘নো রিফিউজাল’ ট্যাক্সিও।

Advertisement

সোমবার দুপুরেই নিউ মার্কেট থেকে বাজার সেরে শরৎ বসু রোডে যাবেন মকসুদ আলম। সামনে এসে দাঁড়াল ট্যাক্সি। গন্তব্য পছন্দ না হতেই ‘ডব্লিউ বি ০৪ই ১৮০৭’ নম্বর ট্যাক্সির চালক মকসুদকে বললেন, ‘আমার লাঞ্চ টাইম।’ তাই যেতে পারবেন না। কিছু পরেই দেখা গেল, অন্য দিকের যাত্রী তুলে নিলেন ওই ট্যাক্সিচালক।

টালিগঞ্জ যাবেন রমেশ সিং। ‘ডব্লিউ বি ১৯জি ৪৪৮৯ নীল-সাদা রঙের ট্যাক্সিতে উঠতে গেলে চালক সটান জানিয়ে দিলেন গাড়ি যাবে না।

রাঁচি থেকে আসা বন্ধুদের নিয়ে শহরে ঘুরতে বেড়িয়েছিলেন আন্দুলের বাসিন্দা শৈবাল বন্দ্যোপাধ্যায়। সন্ধ্যায় বাড়ি ফেরার সময়ে ধর্মতলা মোড়ে ট্যাক্সি পেতে তাঁর ঘাম ছুটে যায়। দমদম পার্ক থেকে বেলগাছিয়া যাওয়ার সময়েও একই অভিজ্ঞতা হয় মধুছন্দা ঘটকের। তাঁর অভিযোগ, “কোনও ট্যাক্সি দাঁড়ালেও যাওয়ার জন্য তিন গুণ বা তারও বেশি টাকা চাইছে।”

২০১৪-র জুলাই মাস থেকে ট্যাক্সিচালকদের শৃঙ্খলায় আনার জন্য শহরের বিভিন্ন জায়গায় ‘ট্যাক্সি বে’ চালু করেছে ট্রাফিক পুলিশ। সেই তালিকায় রয়েছে নিউ মার্কেট, পার্ক স্ট্রিট, বেহালা, টালিগঞ্জ মেট্রো স্টেশন, সাউথ সিটি মল, বাইপাস সংলগ্ন বিভিন্ন জায়গা। ট্রাফিক পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, শহরের এই সব জায়গায় ‘ট্যাক্সি বে’র পরিকল্পনা সফল হলে আরও চার জায়গায় এই ব্যবস্থা চালু করার কথা ভেবেছিলেন ট্রাফিক কর্তারা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পুলিশের এক কর্তা বলেন, “অভিযোগ পেলে আমরা অবশ্যই ব্যবস্থা নেব।”

অভিযোগ, ‘গ্যারাজ’, ‘লাঞ্চ’ বোর্ড লাগানো ট্যাক্সিও ঘুরে বেড়াচ্ছে শহরের রাস্তায়। পছন্দের জায়গা হলে সে সব ট্যাক্সির চালকেরা বোর্ড নামিয়ে যাত্রী তুলছেন। শৃঙ্খলায় বাধার জন্য যে সব জায়গায় ‘ট্যাক্সি বে’ রয়েছে, তা নিয়েও অভিযোগ উঠেছে। টালিগঞ্জের বাসিন্দা গৌতম রায়ের অভিযোগ, “টালিগঞ্জ মেট্রো স্টেশনের সামনে যে ‘ট্যাক্সি বে’ আছে, অফিসের সময়েও সেখানে ট্যাক্সি পাই না।

‘ট্যাক্সি বে’ করে বা জরিমানা কমিয়ে ট্যাক্সিচালকদের ঠিক পথে আনা যাবে না। এমনটাই মত ট্যাক্সিচালক ইউনিয়নের নেতাদের। ট্যাক্সিচালক ইউনিয়নের নেতা বিমল গুহ বলেন, “এই সমস্যার সমাধানের জন্য শহরে ট্যাক্সি স্ট্যান্ডের প্রয়োজন। যা আমাদের শহরে নেই। এ ছাড়া অন্য কোনও উপায় আছে বলে আমার মনে হয় না।” সিটু সমর্থিত ট্যাক্সিচালক ইউনিয়নের নেতা প্রমোদ ঝা বলেন, “চালকদেরই একটি অংশ বিষয়টিকে খরাপ দিকে নিয়ে যাচ্ছে। এটাকে সমর্থন করা যায় না।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন