যাত্রীর ফেলে যাওয়া ব্যাগ ফেরাতে নাকাল ট্যাক্সিচালক

যাত্রী নেমে যাওয়ার পরেও এক ঘণ্টা ট্যাক্সি নিয়ে অপেক্ষা করেছেন সল্টলেকে একটি আইল্যান্ডের সামনে। ট্যাক্সিতে নিজের ল্যাপটপ ব্যাগ ফেলে রবিবার রাতে যাত্রী নেমে গিয়েছিলেন সেই আইল্যান্ডের সামনেই। কিন্তু এক ঘণ্টা পরেও সেই যাত্রীর দেখা না পেয়ে ট্যাক্সি নিয়ে রাজু সাউ গড়িয়াহাটে গ্যারাজের দিকে ফিরে যান।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২১ জানুয়ারি ২০১৫ ০২:৩৩
Share:

যাত্রী নেমে যাওয়ার পরেও এক ঘণ্টা ট্যাক্সি নিয়ে অপেক্ষা করেছেন সল্টলেকে একটি আইল্যান্ডের সামনে। ট্যাক্সিতে নিজের ল্যাপটপ ব্যাগ ফেলে রবিবার রাতে যাত্রী নেমে গিয়েছিলেন সেই আইল্যান্ডের সামনেই। কিন্তু এক ঘণ্টা পরেও সেই যাত্রীর দেখা না পেয়ে ট্যাক্সি নিয়ে রাজু সাউ গড়িয়াহাটে গ্যারাজের দিকে ফিরে যান।

Advertisement

সাধারণত ট্যাক্সিতে ব্যাগ বা অন্য মূল্যবান জিনিস ফেলে যাওয়ার পরে তা ফেরত দেওয়া হলে সততার উদাহরণ বলে তাকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। কিন্তু রবিবার রাতে শিবাশিস ভৌমিকের ফেলে যাওয়া ল্যাপটপ ফেরাতে গিয়ে রাজুকে কতটা কাঠখড় পোড়াতে হয়েছে, তা শুনে কার্যত হতবাক শিবাশিস নিজেই। তিনি ট্যাক্সি থেকে নেমে যাওয়ার পরে একটি পানের দোকানে গিয়ে দাঁড়ান রাজু। তখনই দেখেন পিছনের সিটে পড়ে রয়েছে কালো রঙের ব্যাগ। খানিকটা ঘাবড়েও যান বিহারের মতিহারি জেলার বাসিন্দা। পিছনের দু’টি জানালার কাচ তুলে লক করে দেন। কিন্তু, গড়িয়াহাট ফেরা হয়নি তাঁর। মাঝপথেই যাত্রী উঠে বসেন ট্যাক্সিতে। তিনি তাঁকে নিয়ে চলে যান আমতলা। রাজু অবশ্য বলেন, “সেই যাত্রী ট্যাক্সি ওঠার আগেই কালো ব্যাগটি ঢুকিয়ে ডিকি লক করে রেখেছিলাম।”

গুয়াহাটিতে কর্মরত শিবাশিস জানিয়েছেন, ওই ল্যাপটপে তাঁর অফিসের যাবতীয় কাজকর্ম মজুত রাখা ছিল এবং তার কোনও ‘ব্যাক-আপ’ ছিল না। রাতে সন্টলেকে আত্মীয়ের বাড়িতে পৌঁছনোর পরে তিনি যখন বুঝতে পারেন যে ব্যাগ ট্যাক্সিতে ফেলে নেমে এসেছেন, তখন মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ার মতো অবস্থা। ট্যাক্সির নম্বর খেয়াল করেননি। তাঁর কথায়, “ক’জনই বা ট্যাক্সি নম্বর খেয়াল রাখে বলুন তো!” ল্যাপটপ ব্যাগে ল্যাপটপ ছাড়াও মোডেম, পেন-ড্রাইভ, চেক বই এবং আরও কিছু জরুরি কাগজপত্র ছিল। তাঁর কথায়, “ট্যাক্সির নম্বর জেনে রাখলে তা-ও পুলিশকে জানাতে পারতাম।”

Advertisement

এ দিকে শিবাশিসের যখন এমন দিশেহারা অবস্থা তখন তাঁর ল্যাপটপ ব্যাগ ডিকিতে নিয়ে রাতের অন্ধকারে যাত্রী নামাতে আমতলা পৌঁছে যান রাজু। তিনি নিজে মোবাইল ফোন ব্যবহার করেন না। কিন্তু তাঁর ভাই অজয় সঙ্গে মোবাইল রাখেন। গড়িয়াহাটের ঝুপড়িতে রাজুর সঙ্গেই থাকেন অজয়। তিনিও ট্যাক্সি চালান। রাত প্রায় এগারোটা নাগাদ আমতলার একটি টেলিফোন বুথ থেকে অজয়ের মোবাইলে ফোন করে ব্যাগ ফেলে যাওয়ার ঘটনাটি জানান রাজু। বলেন, “ব্যাগের ভিতরে কোনও কার্ড থাকলে সেখানে ফোন নম্বর থাকতে পারে। তা হলে জানা যেতে পারে ব্যাগের মালিক কে?” রাজু জানান, তাঁর পক্ষে অত রাতে এত কিছু করা অসম্ভব। তিনি ট্যাক্সি নিয়ে রাতে ফিরে আসেন গড়িয়াহাটের ঝুপড়িতে। সেখানে দু’ভাই মিলে ব্যাগ ঘেঁটে শিবাশিসের ভিজিটিং কার্ড পান। ফোন করে জানতে চান, “আপনার কি কোনও ব্যাগ হারিয়ে গিয়েছে?” এর পরেই রাত প্রায় সাড়ে বারোটা নাগাদ ট্যাক্সি নিয়ে দুই ভাই সল্টলেকের আইএ ব্লকে এসে শিবাশিসের হাতে তুলে দেন ব্যাগ। বকশিস দেন তিনি।

পরে ফোনে অজয়কে জিজ্ঞাসা করা হয়, “বকশিস পেয়ে আপনারা নিশ্চয় খুশি?” অজয়ের প্রতিক্রিয়া, “যিনি ব্যাগ ফেরত পেলেন তাঁকে গিয়ে জিজ্ঞাসা করুন, তিনি কতটা খুশি হয়েছেন।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন