রাজ্য আধাসেনা চায় না, সংঘাতে নেই কমিশনও

আসন্ন পুরসভা নির্বাচনে কেন্দ্রীয় বাহিনী চেয়েছিল রাজ্য নির্বাচন কমিশন। কিন্তু রাজ্য সরকার সে-পথে হাঁটছে না। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে সরকারের সঙ্গে সংঘাতের রাস্তায় যাচ্ছে না কমিশনও। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার কেন্দ্রীয় বাহিনীর পাহারায় ভোটের প্রস্তাব খারিজই করে দিতে চলেছে বলে নবান্ন সূত্রের খবর। কাল, শুক্রবার নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে বৈঠকে সরকারের তরফে তা জানিয়ে দেওয়া হবে। কলকাতা-সহ ৯৪টি পুরসভার ভোটে সব স্পর্শকাতর বুথে আধাসেনা মোতায়েন করার প্রস্তাব দিয়েছিল কমিশন। নবান্ন সূত্রের খবর, তা নাকচ করে সরকারের পাল্টা প্রস্তাব, সব বুথে রাজ্যেরই সশস্ত্র পুলিশ দিয়ে ভোট নেওয়া হোক।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১২ মার্চ ২০১৫ ০৩:১০
Share:

আসন্ন পুরসভা নির্বাচনে কেন্দ্রীয় বাহিনী চেয়েছিল রাজ্য নির্বাচন কমিশন। কিন্তু রাজ্য সরকার সে-পথে হাঁটছে না। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে সরকারের সঙ্গে সংঘাতের রাস্তায় যাচ্ছে না কমিশনও।

Advertisement

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার কেন্দ্রীয় বাহিনীর পাহারায় ভোটের প্রস্তাব খারিজই করে দিতে চলেছে বলে নবান্ন সূত্রের খবর। কাল, শুক্রবার নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে বৈঠকে সরকারের তরফে তা জানিয়ে দেওয়া হবে। কলকাতা-সহ ৯৪টি পুরসভার ভোটে সব স্পর্শকাতর বুথে আধাসেনা মোতায়েন করার প্রস্তাব দিয়েছিল কমিশন। নবান্ন সূত্রের খবর, তা নাকচ করে সরকারের পাল্টা প্রস্তাব, সব বুথে রাজ্যেরই সশস্ত্র পুলিশ দিয়ে ভোট নেওয়া হোক।

কেন্দ্রীয় বাহিনী না-পেলেও আপাতত সরকারের সঙ্গে সংঘাতের রাস্তায় যেতে চাইছে না কমিশন। সে-ক্ষেত্রে শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের জন্য তারা স্পর্শকাতর বুথগুলিতে ওয়েবক্যামেরা বসানো এবং কিছু কিছু এলাকায় মোবাইল ভিডিওগ্রাফি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। রাজ্য নির্বাচন কমিশনার সুশান্তরঞ্জন উপাধ্যায় বুধবার দক্ষিণবঙ্গের আটটি জেলার পুলিশ সুপার এবং জেলাশাসকদের নিয়ে পুরভোটের প্রস্তুতি-বৈঠকে বসেন। সোমবার উত্তরবঙ্গের জেলাশাসকদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন তিনি। কমিশন জেলাশাসক ও পুলিশ সুপারদের কাছে স্পর্শকাতর বুথে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েনের কথা বললেও ডিএম, এসপি-রা এই বিষয়ে কোনও মন্তব্যই করেননি বলে কমিশন সূত্রের খবর।

Advertisement

কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন নিয়ে টানাপড়েনের পরিপ্রেক্ষিতে কমিশন এ বার আদালতের দ্বারস্থ হওয়ার কথাও ভাবছে না। নিরুপদ্রবে পঞ্চায়েত ভোট করার জন্য কেন্দ্রীয় বাহিনী চেয়ে সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত লড়াই চালিয়েছিলেন তখনকার রাজ্য নির্বাচন কমিশনার মীরা পাণ্ডে। পুরভোটের ক্ষেত্রে কমিশন সেই পথ নিচ্ছে না কেন? রাজ্য নির্বাচন কমিশনার সুশান্তবাবু বলেন, “পুরভোট নিয়ে এমনিতেই চারটি মামলা চলছে। আদালত সেই সব মামলায় কমিশনের মতামত জানতে চাইলে তা জানিয়ে দেওয়া হবে। কিন্তু বাহিনীর প্রশ্নে এখনই নিজে থেকে কোনও মামলা করার পথে যাবে না কমিশন।”

মীরাদেবীর উত্তরসূরি হিসেবে সুশান্তবাবুকে যখন মনোনীত করা হয়েছিল, তখন অনেকেই ওই আইনি লড়াইয়ের প্রসঙ্গ তুলে বলেছিলেন, রাজ্য নির্বাচন কমিশনার পদটির গরিমা লঘু করে দিয়েছে সরকার। কারণ, অতীতে রাজ্য নির্বাচন কমিশনারের পদে প্রাক্তন মুখ্যসচিব বা সমপর্যায়ের কোনও সিনিয়র আইএএস অফিসারকে বসানো হত। মীরাদেবীও ছিলেন অতিরিক্ত মুখ্যসচিব-পদে কর্মরত আইএএস অফিসার। কিন্তু তিনি অবসর নেওয়ার পরে রাজ্য নির্বাচন কমিশনারের পদে সুশান্তরঞ্জন উপাধ্যায়কে বসিয়েছে সরকার। তিনি ডব্লিউবিসিএস ক্যাডারের অফিসার। আইএএস বা প্রাক্তন আইএএস বাদ দিয়ে বিসিএস কেন, প্রশ্ন উঠেছিল তখনই। পুরভোটে কেন্দ্রীয় বাহিনীর ব্যাপারে সুশান্তবাবুর বক্তব্যের পরে আবার সেই প্রশ্ন তুলছে বিরোধী শিবির।

বিরোধীদের প্রশ্নে কটাক্ষ আর অভিযোগ দু’টোই মিশে আছে। যেমন সিপিএম নেতা মহম্মদ সেলিমের কথায়, “রাজ্য সরকারের নীতি হল, হামলা, মামলা এবং গামলা!” তাঁর ব্যাখ্যা, বিরোধীদের উপরে প্রথমে হামলা করা, তার পরে মিথ্যা মামলা করা আর তার পরে গামলাভর্তি টাকা ছড়িয়ে ভোট কেনার নীতি নিয়েছে তৃণমূল সরকার। আর তাতে যোগ্য সঙ্গত করছে রাজ্য নির্বাচন কমিশন। এরা মনে করে, নিরাপত্তার কোনও ব্যবস্থা না-থাকলেই ভাল। “তবে এ বার মানুষ মান কবুল এবং জান কবুল করে ভোট দেবে,” আশাবাদী সেলিম।

আধাসেনার পক্ষে কমিশনারের সওয়াল করা দরকার বলে মনে করেন কংগ্রেস নেতা মানস ভুঁইয়া। তিনি বলেন, “সুশান্তবাবু রাজ্যের পরিস্থিতি জানেন এবং তাঁর পূর্বসূরির ভূমিকাও জানেন। এ রাজ্যে সুষ্ঠু ভাবে নির্বাচন করাতে হলে কেন্দ্রীয় বাহিনী প্রয়োজন। কমিশনার হিসেবে রাজ্যকে রাজি করাতে না-পারলে তাঁর উচিত আদালতের হস্তক্ষেপ চাওয়া।”

রাজ্য পুলিশ দিয়ে এ রাজ্যে ভোট করলে রক্তপাত এড়ানো যাবে না বলে মনে করেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহ। তিনি বলেন, “কেন্দ্রীয় বাহিনী ছাড়া এখানে সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন অসম্ভব। এ রাজ্যে পুলিশের আর কোনও মর্যাদা নেই। কমিশনও এ ব্যাপারে একমত ছিল। কেন্দ্রীয় বাহিনী ছাড়া তাই হিংসামুক্ত ভোট হবে না।”

তিন প্রধান বিরোধী শিবিরের এই বক্তব্যের পরে রাজ্য নির্বাচন কমিশনার কী করেন, সেটাই দেখার।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন