লরির মর্জিমাফিক যাতায়াত, দুর্বিষহ বি টি রোড

রাত সাড়ে ৮টা: মোটরবাইকে ডানলপ থেকে দক্ষিণেশ্বরের দিকে যাচ্ছিলেন বেলুড়ের বাসিন্দা সৌমেন কুশারী। আলমবাজারের কাছে রাস্তার অর্ধেকাংশ জুড়ে সার দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা লরিকে পাশ কাটাতে গিয়েই ঘটল দুর্ঘটনা। রাস্তায় পড়ে থাকা বালিতে মোটরবাইকের চাকা পিছলে গিয়ে দূরে ছিটকে পড়লেন ওই যুবক। প্রাণে বেঁচে গেলেও হাতে-পায়ে বেজায় চোট পেলেন।

Advertisement

কাজল গুপ্ত ও শান্তনু ঘোষ

শেষ আপডেট: ০৭ মে ২০১৪ ০২:১০
Share:

ডানলপ মোড়ে যান-যন্ত্রণা। ছবি: সজল চট্টোপাধ্যায়

রাত সাড়ে ৮টা: মোটরবাইকে ডানলপ থেকে দক্ষিণেশ্বরের দিকে যাচ্ছিলেন বেলুড়ের বাসিন্দা সৌমেন কুশারী। আলমবাজারের কাছে রাস্তার অর্ধেকাংশ জুড়ে সার দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা লরিকে পাশ কাটাতে গিয়েই ঘটল দুর্ঘটনা। রাস্তায় পড়ে থাকা বালিতে মোটরবাইকের চাকা পিছলে গিয়ে দূরে ছিটকে পড়লেন ওই যুবক। প্রাণে বেঁচে গেলেও হাতে-পায়ে বেজায় চোট পেলেন।

Advertisement

দুপুর সাড়ে ১২টা: ডানলপ মোড়ে তীব্র যানজট। বিষয়টা কী দেখতে গিয়ে দেখা গেল, তিন রাস্তার মোড়ে আটকে গিয়েছে একটি বড় লরি। কোনও ভাবেই তা র্স্টাট নিচ্ছে না। ওই লরির পিছনে অন্য গাড়ির লম্বা লাইন। যার ফলে ডানলপ মোড় পেরিয়ে দক্ষিণেশ্বর ও সিঁথির মোড়ের দিকে যাওয়া যাচ্ছে না।

এ ভাবেই সকাল থেকে রাত পর্যন্ত বিটি রোডে মর্জি মতো দাপিয়ে বেড়াচ্ছে লরি-ট্রাক। ফলে নিত্যদিন যানজটের শিকার হচ্ছেন সাধারণ মানুষ। তাঁদের অভিযোগ, সব জেনেশুনেও পুলিশ কোনও ব্যবস্থা নেয় না। কলকাতা লাগোয়া বরাহনগর, কামারহাটি, বেলঘরিয়া এলাকায় যানজট কমাতে উড়ালপুল, বাসের জন্য আলাদা লেন, বাসস্টপ নির্দিষ্ট করা-সহ বহু কাজ করেছে ব্যারাকপুর কমিশনারেট। কিন্তু লরির চাকায় যে লাগাম পরানো সম্ভব হয়নি, তা কার্যত মেনে নিয়েছেন পুলিশকর্তাদের একাংশ। তাঁরাও মনে করেন, লরির বেনিয়মের জন্যই যানজট হচ্ছে।

Advertisement

এই বেনিয়মের ছবিটার শুরু দক্ষিণেশ্বর থেকেই। স্থানীয়েরা জানাচ্ছেন, নিবেদিতা সেতু পেরিয়ে কিংবা বেলঘরিয়া এক্সপ্রেসওয়ে ধরে প্রতিদিন ভোর থেকে অসংখ্য বালি-বোঝাই লরি দক্ষিণেশ্বর থেকে ডানলপের মাঝে পিডব্লিউডি রোডে গিয়ে দাঁড়াচ্ছে। সেখান থেকেই বরাত অনুযায়ী শহরের বিভিন্ন জায়গায় রওনা দিচ্ছে লরি-ট্রাকগুলি। স্থানীয় বাসিন্দাদের কথায়, “পিডব্লিউডি রোড এখন অলিখিত ভাবে বালি-ব্যবসার পরিচিত জায়গা হয়ে উঠেছে। রাস্তার দু’ধার দখল করে লরি পার্কিং করা থাকলেও কেউ কিছু বলেন না।”

এখানেই সমস্যার শেষ নয়। ডানলপ থেকে সিঁথির মোড় পর্যন্ত বিভিন্ন জায়গায় দিনে বা রাতে রাস্তার ধারে দাঁড়িয়ে থাকে লরি, টেম্পো। কয়েক বছর আগে বনহুগলি এলাকায় এমনই এক দাঁড়িয়ে থাকা লরিতে কাগজকুড়ানি এক মহিলাকে তুলে গণধর্ষণ করে বালিতে এনে ফেলা হয়েছিল। আবার রাস্তার ধারে পার্কিং-এর ফলে বনহুগলি এলাকাতেই দুর্ঘটনায় মৃত্যুও হয়েছে অনেকের। তার পরেও সরেনি রাস্তার ধারের লরি-ট্রাক-টেম্পোর পার্কিং।

এর সঙ্গেই গোদের উপরে বিষফোঁড়ার মতো রয়েছে যেমন খুশি লরি-চলাচল। ভোর থেকে রাত পর্যন্ত দক্ষিণেশ্বরের মোড় থেকে এক দিকে ডানলপ হয়ে বিটি রোড বা গোপাললাল ঠাকুর রোড ধরে কলকাতায় ঢোকে লরি-ট্রাকগুলি। এলাকার ভিতরের রাস্তা থেকে বড় রাস্তা সর্বত্রই ঢুকে যায় লরি-ট্রাক। ফলে যানজট হয়। চালকদের কথায়, “কলকাতায় লরি ঢোকা-বেরোনোর নির্দিষ্ট সময় রয়েছে। তাই অগত্যা বি টি রোডেই দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। আর জায়গা না পেলে বরাহনগর, বেলঘরিয়া এলাকায় চক্কর কাটতে হয়।”

কলকাতা পুলিশ এলাকায় সেই নিয়ম রয়েছে। কিন্তু ব্যারাকপুর কমিশনারেটের ক্ষেত্রে কী নিয়ম?

পুলিশকর্তারা এক কথায় উত্তর দেন, “কিচ্ছু নেই।” শহরকে গতিশীল করতে যেখানে প্রায় প্রতিটি কমিশনারেট এলাকাতেই লরি-ট্রাক চলাচলের নির্দিষ্ট সময় বেঁধে দেওয়া হচ্ছে, সেখানে ব্যারাকপুর ব্যতিক্রম কেন? ডিসি ট্রাফিক দেবাশিস বেজ বলেন, “হাওড়া, হুগলি, উত্তর ২৪ পরগনা ও কলকাতার মধ্যের একটা জায়গা ব্যারাকপুর কমিশনারেট। ওই চারটি জায়গার সীমানা এলাকায় লরি চলাচলের নির্দিষ্ট সময় বেঁধে না দিলে এবং সেখানে আটকানো না হলে ব্যারাকপুর পুলিশ কমিশনারেটের উপরে চাপ পড়বেই। সমস্ত লরিই ওই জায়গা পার করে বিটি রোডে ঢুকে পড়ে।”

কিন্তু রাস্তার ধারে পার্কিং করা হচ্ছে কেন? দেবাশিসবাবু বলেন, “হাওড়া বা কলকাতার মতো ব্যারাকপুরে কোনও সরকারি কিংবা বেসরকারি পার্কিং-এর জায়গা নেই। তাই রাস্তার উপরেই দাঁড়িয়ে থাকে লরিগুলি। তবু আমরা বারবার ধাওয়া দিয়ে সরিয়ে দিই।” তবে বিটি রোডের দু’ধারের বাসিন্দা ও নিত্যযাত্রীদের অভিযোগ, পুলিশের সঙ্গে যোগসাজশের জেরেই মর্জি মতো লরি পার্কিং করা হয়। আবার চালকদের অভিযোগ, কলকাতায় যেহেতু নির্দিষ্ট সময়ের আগে ঢোকা যায় না, তাই বাধ্য হয়েই বিটি রোডের আশেপাশে পার্কিং করতে হয়। আর সেখানেই পুলিশি জুলুমের শিকার হতে হয়। যদিও ডিসি ট্রাফিকের দাবি, নির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে অবশ্যই কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন