শিকারকেই টোপ সাজিয়ে প্রতারণা, শ্রীঘরে জালিয়াত

এ যেন বাঘ মারতে ছাগল পোষা! বছর দুই আগে পূর্ব মেদিনীপুরের এক যুবককে স্বাস্থ্য দফতরে ভুয়ো চাকরি দিয়েছিল এক প্রতারক। তিন মাস ধরে সেই যুবককে মাইনেও দিয়েছে সে। তার পরে হঠাৎ মাইনে বন্ধ! তত দিনে আরও ২৭ জন বন্ধুকে চাকরির জন্য সেই প্রতারকের কাছে পাঠিয়েছিল ওই যুবক। তাঁদের অবশ্য চাকরি হয়নি। কিন্তু অভিযোগ, ওই ২৭ জনের কাছ থেকে প্রায় ১৭ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেয় ওই প্রতারক।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৭ অগস্ট ২০১৪ ০২:১০
Share:

এ যেন বাঘ মারতে ছাগল পোষা!

Advertisement

বছর দুই আগে পূর্ব মেদিনীপুরের এক যুবককে স্বাস্থ্য দফতরে ভুয়ো চাকরি দিয়েছিল এক প্রতারক। তিন মাস ধরে সেই যুবককে মাইনেও দিয়েছে সে। তার পরে হঠাৎ মাইনে বন্ধ! তত দিনে আরও ২৭ জন বন্ধুকে চাকরির জন্য সেই প্রতারকের কাছে পাঠিয়েছিল ওই যুবক। তাঁদের অবশ্য চাকরি হয়নি। কিন্তু অভিযোগ, ওই ২৭ জনের কাছ থেকে প্রায় ১৭ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেয় ওই প্রতারক।

শেষরক্ষা অবশ্য হয়নি। কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দাপ্রধান পল্লবকান্তি ঘোষ জানান, চাকরি দেওয়ার নাম করে প্রতারণার অভিযোগে মঙ্গলবার রাতে গড়িয়া থেকে সমর চক্রবর্তী ওরফে তাপস হালদার নামে ওই ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তবে বুধবার রাত পর্যন্ত কোনও টাকা উদ্ধার হয়নি। পুলিশ সূত্রের খবর, তদন্তে নেমে অভিযুক্তের বান্ধবীর সন্ধান মিলেছিল। তার সূত্র ধরেই সমরকে পাকড়াও করা হয়েছে।

Advertisement

পুলিশ জানায়, গৌরহরি হাজরা নামে পূর্ব মেদিনীপুরের পটাশপুরের ওই যুবক শিয়ালদহের একটি হোটেলে চাকরি করতেন। ২০১২ সালের জুলাই মাসে সেই হোটেলেই দিন কয়েক আস্তানা গেড়েছিল সমর। অভিযোগ, তখনই তাপস হালদার নামে পরিচয় দিয়ে মাধ্যমিক পাশ গৌরহরিকে সরকারি চাকরি পাইয়ে দেওয়ার টোপ দেয় সে। তার জন্য ৩০ হাজার টাকা নিয়েছিল সমর। ভুয়ো ‘কল-লেটার’, নিয়োগপত্র, একটি সরকারি হাসপাতালে থাকার ব্যবস্থাও করেছিল। মাইনে পাওয়ার জন্য একটি ব্যাঙ্কে অ্যাকাউন্টও খুলে দেওয়া হয়। মাঝে মাঝে সল্টলেকের দু’টি সরকারি দফতরে গৌরহরিকে নিয়ে যেত সমর।

তবে এখানেই শেষ নয়। তদন্তে নেমে পুলিশ দেখেছে, নিয়োগপত্র পাওয়ার পরে তিন মাস দশ হাজার টাকা করে বেতনও পান গৌরহরি। আদতে সমরই ওই টাকা গৌরহরির অ্যাকাউন্টে পাঠিয়েছিল। কেন?

পুলিশ সূত্রের খবর, চাকরি দেওয়া নিয়ে কথা বলতে বলতেই গৌরহরির বন্ধুদের কথা জেনেছিল সমর। তখনই সে ছক কষে, গৌরহরিকে টোপ হিসেবে সাজিয়ে তাঁর গ্রামের বন্ধুদের প্রতারণার ফাঁদে ফেলবে। গোয়েন্দাপ্রধান বলছেন, “বিশ্বাস অর্জনের জন্যই তিন মাস গৌরহরিকে বেতন দিয়েছিল সমর।”

পুলিশ বলছে, গৌরহরিই তাঁর বন্ধুদের সঙ্গে সমরের পরিচয় করিয়ে দেন। বিভিন্ন সরকারি অফিসে চাকরি পাইয়ে দেওয়ার নামে মাথাপিছু মোটা টাকা হাতিয়ে নেয় সমর। সমরের হাতে টাকা আসতেই বেতন বন্ধ হয়ে যায় গৌরহরির। তদন্তকারীরা জানান, বেতন বন্ধ হওয়ায় ২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে গৌরহরি মুচিপাড়া থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন। তার পর থেকেই তক্কে-তক্কে ছিল পুলিশ। তদন্তে দেখা যায়, এই ঘটনা নিয়ে এক মহিলা প্রতারিত যুবকদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন। কোনও অভিযোগ হল কি না, তা নিয়েও খোঁজ করছেন। তদন্তকারীরা খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন, ওই মহিলা অভিযুক্ত সমরের বান্ধবী। এর পরে তাঁর উপরে নজরদারি শুরু হয়। লালবাজারের গোয়েন্দা দফতর জানতে পারে, ফোনে সমরের সঙ্গে ওই মহিলার যোগাযোগ রয়েছে। সেই সূত্র ধরেই মঙ্গলবার রাতে গড়িয়ায় সমরের বাড়িতে হানা দেয় পুলিশ। বাড়ির সামনে থেকেই পাকড়াও করা হয় তাকে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন