কলকাতা মেট্রো

স্টেশনে স্টেশনে দাগি মোবাইল চোরদের ছবি

একটা বড় চার্টে ১৬ জনের খুদে খুদে রঙিন ছবি। এক জন মহিলা, বাকিরা পুরুষ। পুলিশ থেকেই ওই চার্ট টাঙিয়ে সাধারণ মানুষকে সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে। পোস্টারটি পড়েছে শহরের ১০টি মেট্রো স্টেশনে। পোস্টারে মহম্মদ সিরাজ, সইফুল শেখ, সুরোচনাদেবীদের পরিচয়ও সরাসরি লিখে দিয়েছে কলকাতা মেট্রোরেল পুলিশ।

Advertisement

সুপ্রিয় তরফদার

শেষ আপডেট: ০৭ জুলাই ২০১৪ ০৩:১৮
Share:

অপরাধীদের চেনাতে পোস্টার। ছবি: শুভাশিস ভট্টাচার্য।

একটা বড় চার্টে ১৬ জনের খুদে খুদে রঙিন ছবি। এক জন মহিলা, বাকিরা পুরুষ। পুলিশ থেকেই ওই চার্ট টাঙিয়ে সাধারণ মানুষকে সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে।

Advertisement

পোস্টারটি পড়েছে শহরের ১০টি মেট্রো স্টেশনে। পোস্টারে মহম্মদ সিরাজ, সইফুল শেখ, সুরোচনাদেবীদের পরিচয়ও সরাসরি লিখে দিয়েছে কলকাতা মেট্রোরেল পুলিশ। এরা সবাই দাগি ‘মোবাইল ফোন লিফটার’ বা মোবাইল ফোন চোর।

কলকাতার প্রায় কোনও থানাতেই সেই এলাকার দাগি অপরাধীদের চিনিয়ে দেওয়ার জন্য এমন কোনও ব্যবস্থা নেই। লালবাজারের গোয়েন্দা বিভাগের গুন্ডা দমন বা ডাকাতি দমন শাখাতেও নেই এই ধরনের ব্যবস্থা। সে দিক দিয়ে কলকাতা মেট্রো রেল পুলিশের এই উদ্যোগ অভিনব বলে মেনে নিচ্ছেন লালবাজারের কর্তারা।

Advertisement

পুলিশ সূত্রের খবর, বাধ্য হয়েই ওই পোস্টার দিতে হয়েছে। কারণ, প্রতি মাসে গড়ে ১০-১১টি মোবাইল চুরির অভিযোগ জমা পড়ে মেট্রোয়। তবে পুলিশই স্বীকার করে নিচ্ছে, মেট্রোয় মোবাইল চুরির ঘটনা ঘটে আরও বেশি। অনেকেই অভিযোগ জানান না। আবার এমনও কেউ কেউ আছেন, যাঁদের মোবাইল মেট্রোর মধ্যে বা স্টেশনে চুরি হলেও ঝামেলা এড়াতে নিজেদের কর্মস্থল বা বাড়ির আশপাশে সেই মোবাইল চুরি হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট থানায় অভিযোগ নথিভুক্ত করেন। কাজেই, কাগজে-কলমে মোবাইল চুরির সংখ্যাটা যা-ই হোক, প্রকৃতপক্ষে মাসে গড়ে ২০-২৫টি মোবাইল চুরি হয় মেট্রোয়, জানাচ্ছেন পুলিশকর্তাদেরই একাংশ।

সেই সঙ্গে পুলিশের দাবি, তদন্তে দেখা গিয়েছে, মেট্রোয় মোবাইল চুরির অধিকাংশ ঘটনায় ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে ওই ১৫-১৬ জনের মধ্যেই কারও না কারও নাম উঠে আসছে। পুলিশের অনুমান, গ্রেফতার হওয়ার কিছু দিনের মধ্যেই জামিনে মুক্তি পেয়ে ফের মোবাইল চুরি করছে ওই ‘মোবাইল-চোরেরা’। আবার সাজা পেলেও কয়েক বছর পরে জেল থেকে ছাড়া পেয়ে তারা ফের একই কাজ করে। এক পুলিশকর্তার কথায়, “ওই ১৫-১৬ জন সম্পর্কে সতর্ক থাকলেই মেট্রোয় মোবাইল চুরি অনেকটাই কমবে।”

মোবাইল চুরির ঘটনা মাসের পর মাস চলতেই থাকায় গত ফেব্রুয়ারিতে মেট্রোরেল পুলিশ ও মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষের এক বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছিল, মেট্রোয় মোবাইল চুরি করা দাগি অপরাধীদের ছবি সংগ্রহ করে স্টেশনে স্টেশনে টিকিট কাউন্টারের সামনে তাদের নাম-সহ ঝুলিয়ে দেওয়া হবে।

সে জন্য প্রথমে আটটি মেট্রো স্টেশনে ওই পোস্টার দেওয়া হয়। কালীঘাট, যতীন দাস পার্ক, রবীন্দ্র সদন, ময়দান, পার্ক স্ট্রিট, এসপ্ল্যানেড, চাঁদনি চক ও সেন্ট্রাল। পুলিশের বক্তব্য, ওই স্টেশনগুলি থেকেই মোবাইল চুরির অভিযোগ বেশি মেলে। এর মধ্যে রবীন্দ্র সদন, ময়দান, চাঁদনি চক ও সেন্ট্রালে চুরির ঘটনা সব চেয়ে বেশি। তার পরে মহানায়ক উত্তমকুমার ও রবীন্দ্র সরোবর স্টেশনেও চোরেদের ছবি-সহ পোস্টার দেওয়া হয়।

পুলিশকর্তারা মনে করছেন, এর ফলে যাত্রীরা মোবাইল চোরদের ছবি নিয়মিত দেখে মুখগুলো মনে রাখবেন এবং সতর্ক থাকতে পারবেন। আবার একই সঙ্গে, ওই মোবাইল চোরেরাও অপরাধ করার আগে দু’বার ভাববে। গত এপ্রিলে চোরেদের ছবি স্টেশনে স্টেশনে ঝোলানোর পরে মে মাসে মেট্রোর কোথাও কোনও মোবাইল চুরির অভিযোগ জমা পড়েনি বলে জানিয়েছে পুলিশ। পুলিশের নথি অনুযায়ী, কোনও মাসে মেট্রোয় মোবাইল চুরির একটিও অভিযোগ জমা না পড়া ইদানীং কালের মধ্যে এ-ই প্রথম।

কিন্তু পুলিশ ও যাত্রীদের একাংশের প্রশ্ন, মোবাইল চোরেদের চিনে নিয়ে সতর্ক হওয়ার ক্ষেত্রে এই ভাবে ছোট ছোট ছবি ঝোলানোর কার্যকারিতা আসলে কতটা? রোজকার যাতায়াতের পথে এক সঙ্গে ১৫-১৬টি ছবি কয়েক মুহূর্তের জন্য দেখে সেই মুখগুলো কি আদৌ মনে রাখা সম্ভব? এর চেয়ে মেট্রো স্টেশনের টিভি ও ট্রেনের কামরায় ছবি দিলে তা আরও বেশি কার্যকর হত বলে তাঁদের অভিমত।

পুলিশ ও বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার চিত্রশিল্পী হিসেবে কাজ করা দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “কোনও ব্যক্তি বা তার ছবিকে এক বার দেখার পরে সেই চেহারার ৫০ থেকে ৬০ শতাংশ মনে রাখতে পারেন এক জন সাধারণ মানুষ। কিন্তু টেলিভিশনে একাধিক বার দেখলে তা মনে রাখা তুলনায় সহজ।” তবে পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক রবি মহাপাত্রও বলেন, “টেলিভিশন বা মেট্রোর কামরায় ছবি দেওয়ার চিন্তাভাবনা এখনই নেই।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন