সোনা পাচারে সহায় বিমানবন্দরেরই কর্মী

ব্যাঙ্কক থেকে আসা বিমানের এক যাত্রী কলকাতায় নেমেই দৌড়লেন শৌচালয়ে। সেখান থেকে বেরিয়ে কনভেয়ার বেল্ট থেকে ব্যাগ নিয়ে শুল্ক দফতরের অফিসারদের নাকের ডগা দিয়ে চলে গেলেন শহরের বাইরে। কোনও সন্দেহ হওয়ার কথা নয়। নিত্যদিন তাঁর মতো আরও অনেক যাত্রীই বিমান থেকে নেমে বিমানবন্দরের শৌচালয় ব্যবহার করেন। কিন্তু শুল্ক দফতর জানাচ্ছে, কয়েক জন যাত্রী সোনা পাচারের জন্য এই পদ্ধতি ব্যবহার করছে। ওই বিমানযাত্রীর দায়িত্ব আকাশপথে সোনা বিদেশ থেকে শুধু কলকাতায় পৌঁছে দেওয়া।

Advertisement

সায়নী ভট্টাচার্য

শেষ আপডেট: ১৭ জানুয়ারি ২০১৫ ০০:২০
Share:

ব্যাঙ্কক থেকে আসা বিমানের এক যাত্রী কলকাতায় নেমেই দৌড়লেন শৌচালয়ে। সেখান থেকে বেরিয়ে কনভেয়ার বেল্ট থেকে ব্যাগ নিয়ে শুল্ক দফতরের অফিসারদের নাকের ডগা দিয়ে চলে গেলেন শহরের বাইরে।

Advertisement

কোনও সন্দেহ হওয়ার কথা নয়। নিত্যদিন তাঁর মতো আরও অনেক যাত্রীই বিমান থেকে নেমে বিমানবন্দরের শৌচালয় ব্যবহার করেন। কিন্তু শুল্ক দফতর জানাচ্ছে, কয়েক জন যাত্রী সোনা পাচারের জন্য এই পদ্ধতি ব্যবহার করছে। ওই বিমানযাত্রীর দায়িত্ব আকাশপথে সোনা বিদেশ থেকে শুধু কলকাতায় পৌঁছে দেওয়া। কলকাতা বিমানবন্দরে শুল্ক দফতরের কড়া নজরদারির সামনে পড়বেন না তিনি। তাই শৌচালয়ে ঢুকে বিমানবন্দরের কোনও কর্মীর হাতে সেই সোনা দিয়ে বেরিয়ে চলে আসবেন। ফলে শুল্ক অফিসারেরা চাইলে তল্লাশি চালিয়েও যাত্রীর কাছ থেকে কিছু পাবেন না।

শৌচালয়ে হাত-বদল হয়ে যাওয়া ওই সোনা বিমানবন্দরের বাইরে নিয়ে আসার দায়িত্ব এ বার বিমানবন্দরের ওই কর্মীর। তিনি বিমানবন্দরের ভিতরে কোনও না কোনও কাজে যুক্ত। যখন-তখন বিমানবন্দরের ভিতরে ঢোকা-বেরোনোর ছাড়পত্র রয়েছে। যাঁকে দেখে সন্দেহ হওয়ার কথা নয় শুল্ক অফিসারদের। এক শুল্ক অফিসারের কথায়, “এ ভাবে কত কোটি টাকার সোনা ইতিমধ্যেই পাচার হয়ে গিয়েছে, তা আমরা বলতে পারব না। কিন্তু এ বার তা আটকাতেই সচেষ্ট হয়েছিলাম। আমাদের চোখ খুলে গিয়েছে।”

Advertisement

বৃহস্পতিবার গভীর রাতে শুল্ক অফিসারদের চোখে পড়ে, অ্যালায়েন্স এয়ারের এক কর্মী অভিজিৎ সরকার বিমানবন্দরের টার্মিনালের আন্তর্জাতিক বিভাগের শৌচালয়ে বারবার যাতায়াত করছেন। জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, ওই এলাকায় তাঁর ডিউটিও নেই। তা হলে বারবার তিনি শৌচালয়ে কেন যাচ্ছেন? শুরু হয় তল্লাশি। তাঁর জুতোর সুখতলা কেটে মেলে ৩ কিলোগ্রাম সোনা।

বিদেশ থেকে কে এই সোনা এনেছেন, তা অবশ্য জানা যায়নি অভিজিতের কাছ থেকে। তবে সেই যাত্রী এসেছিলেন ব্যাঙ্কক থেকে। কলকাতা বিমানবন্দর দিয়ে যে সোনা পাচার হয়, তা মূলত আসে ব্যাঙ্কক থেকেই। অভিজিৎ যে সময়ে শৌচালয়ে গিয়েছিলেন, সেই সময়ে আর কোন কোন যাত্রী শৌচাগারে গিয়েছিলেন, সিসিটিভি ফুটেজ দেখে তা চিহ্নিত করা হচ্ছে। সেই যাত্রীর নাম জানেন না অভিজিৎ। তবে মুখ চিনতে পারবেন বলে শুল্ক অফিসারদের জানিয়েছেন।

জানা গিয়েছে, শৌচালয়ে পাশাপাশি দু’টি কেবিনের দেওয়াল ও সিলিং-এর মাঝে বেশ কিছুটা ফাঁকা জায়গা রয়েছে। সেখান দিয়ে অনায়াসেই এক কেবিন থেকে হাত বাড়িয়ে পাশের কেবিনে জিনিসপত্র আদানপ্রদান করা যায়। এ ভাবেই যাত্রীরা বিমানবন্দরের কর্মীদের কাছে সোনা পৌঁছে দিচ্ছেন। পরে বিমানবন্দরের বাইরে অপেক্ষারত সেই যাত্রীর কাছে ওই সোনা পৌঁছে দিচ্ছে বিমানবন্দরের এই পাচার চক্র।

সূত্রের খবর, অভিজিৎ নির্দেশ পেয়েছিলেন, ‘অমুক উড়ান নামার পরে ওই শৌচালয়ে গিয়ে অমুক দেখতে এক যাত্রীর থেকে সোনা নিয়ে বিমানবন্দরের বাইরে চলে আসবে। বাইরে ওই যাত্রীর হাতেই সেই সোনা তুলে দিতে হবে।’ একেবারে যেন হিন্দি সিনেমার চিত্রনাট্য। অভিজিৎকে জেরা করে এই পাচার চক্রে জড়িত বলে আরও দুই ব্যক্তির নাম পাওয়া গিয়েছে। তাঁরা দু’জনেও বিমানবন্দরের কর্মী।

এক জন অ্যালায়েন্স এয়ারের কর্মী, অন্য জন বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের। শুক্রবার রাতেই কর্তৃপক্ষের কর্মীকে জিজ্ঞাসাবাদ করে খোঁজ মেলে আরও এক লেনদেনের শুক্রবার রাতেই দুবাই থেকে এমিরেটস-এর বিমানে কলকাতায় আসছে আরও ৫ কিলোগ্রাম সোনা। বিমান থেকে নেমে যাত্রীর সোনা রেখে আসার কথা শৌচালয়ে। ওই রাতে সোনা সংগ্রহ করে বিমানবন্দরের বাইরে পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্বে ছিলেন বিমানবন্দর অফিসের ওই কর্মী নিজেই। এর পরে যথা সময়ে এমিরেটস-এর বিমান অবতরণ করার পরে এক যাত্রীকে শৌচালয়ে যেতে দেখে পিছু নেন শুল্ক অফিসারেরা। তল্লাশিতে তাঁর কাছে মেলে ৫ কিলোগ্রাম সোনা। যার বাজারদর প্রায় ১ কোটি ৩১ লক্ষ টাকা। মুম্বইয়ের বাসিন্দা মহম্মদ ইয়াকুব নামে ওই যাত্রীকেও আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে বলে জানা গিয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
আরও পড়ুন