জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল বুধবার রাতে শুল্ক দফতর তল্লাশিতে আসবে না।
কিন্তু দূর থেকে লুকিয়ে তারা যে নজর রাখছিলেন, তা খেয়াল করেননি শ্যামল ওঁরাও। ব্যাঙ্কক থেকে আসা বিমান থেকে ততক্ষণে বেরিয়ে গিয়েছেন যাত্রীরা। তার পরে চুপি চুপি শ্যামলকে নেমে আসতে দেখা যায় বিমানের পিছনের দরজায় লাগানো সিঁড়ি দিয়ে। গভীর রাতে ওই সিঁড়িতেই হিন্দি সিনেমার কায়দায় তাঁকে পাকড়াও করেন শুল্ক অফিসারেরা। তাঁর কাছে মেলে ২৬ লক্ষ টাকার চোরাই সোনা।
কলকাতায় গত কয়েক মাসে মাঝেমধ্যেই ব্যাঙ্কক থেকে আসা বিমানের ভিতর থেকে প্যাকেটে মোড়া সোনা মিলছিল। শুল্ক অফিসারদের অনুমান, যে যাত্রী সোনা নিয়ে আসছেন, তিনি নিজে তা নিয়ে বেরোনোর ঝুঁকি নিচ্ছেন না। তাই সোনা লুকিয়ে রাখছেন নির্দিষ্ট কোনও আসনের নীচে। সেই তথ্য জানিয়ে দেওয়া হচ্ছে বিমানবন্দরের কোনও কর্মীকে। সুবিধে মতো তিনিই সোনা নামিয়ে এনে পাচার করে দিচ্ছেন বাইরে। বিমানবন্দরের এই কর্মীদের তল্লাশি না হওয়ায় এক শ্রেণির কর্মী পুরো দস্তুর সেই সুযোগ নিচ্ছিলেন।
গত কয়েক মাস ধরে ব্যাঙ্কক থেকে আসা বিমানগুলির উপর নজর রাখতে শুরু করে শুল্ক দফতর। ফেব্রুয়ারি থেকে প্রায় চারটি ক্ষেত্রে সোনা
মেলে বিমানের কোনও না কোনও আসনের তলায়। বোঝা যায়, শুল্ক দফতরের নজরদারির জন্য সোনা পাচারের ঝুঁকি নিচ্ছেন না বিমানবন্দরের এক শ্রেণির কর্মী। বুধবার রাতে তাই শুল্ক অফিসারেরা জানান, এ দিন নজরদারি হবে না। আর সেই ফাঁদেই পড়েন শ্যামল।
শুল্ক দফতর সূত্রে খবর, ব্যাঙ্কক থেকে আসা বিমানটি নামে বুধবার রাত সাড়ে ৩টের কিছু পরে। যাত্রীরা নামলে এক কর্মীকে বিমানের ককপিটে উঠতে দেখেন শুল্ক অফিসারেরা। ককপিটে উঠে অনেকেই সাফাই ও রক্ষণাবেক্ষণের কাজ করলেও দেখা যায় শ্যামল নামে ওই কর্মী একটু পরেই নীচে নেমে আসছেন। কিন্তু এত তাড়াতাড়ি উঠে যাত্রীদের আসন পেরিয়ে ককপিটে গিয়ে এত কম সময়ের মধ্যে কী করে নেমে আসছেন শ্যামল? সন্দেহ হয় অফিসারদের। শ্যামলের পথ আটকান তাঁরা। তাঁদের প্রশ্নে ঘাবড়ে যান শ্যামল। আবার উপরে উঠতে গেলে ফেলা হয় তাঁকে। তল্লাশি করে মেলে তাঁর বেল্টে গোঁজা দু’টি সোনার বার। জানা গিয়েছে, ১ কিলোগ্রাম ওজনের ওই সোনার বাজার দর প্রায় ২৬.৩ লক্ষ টাকা। গ্রেফতার হন শ্যামল। তিনি বিমানবন্দরের কাছেই থাকেন। জানা গিয়েছে, শ্যামল ওই বেসরকারি বিমান সংস্থার নিজস্ব কর্মী নন। বাইরের এক সংস্থার হয়ে এক বছর ধরে কাজ করছিলেন তিনি। ককপিটে ইঞ্জিনিয়ারদের সাহায্য করতেন।
জেরায় শ্যামল জানান, বুধবার রাতে তাঁকে ককপিটের পাশাপাশি কেবিনের দায়িত্ব দেন তাঁর সুপারভাইজার বাল্মীকি। শ্যামলের দাবি, বাল্মীকিই তাঁকে কেবিনের ১৫ই নম্বর আসনের নীচে রাখা প্যাকেট আনতে বলেন। তিনি সেটিই নিয়ে আসছিলেন। কিন্তু শুল্ক অফিসারেরা তাঁর বেল্টের ভিতর থেকে দু’টি সোনার বার পান। কিন্তু সেগুলি কোনও প্যাকেটে মোড়া ছিল না। যার অর্থ, সচেতন ভাবেই সোনা আনছিলেন শ্যামল। যদিও তাঁর ওই বয়ানের পরে বৃহস্পতিবার তদন্তকারীরা বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের আবাসনের কাছে বাল্মীকির বাড়িতে হানা দেন। তাঁর সন্ধান মেলেনি। এ দিন ব্যারাকপুর আদালতে শ্যামল জামিন পান। জানা গিয়েছে, বাজেয়াপ্ত করা সোনার মূল্য এক কোটি টাকার বেশি হলে সাধারণত জামিন পান না ধৃত ব্যক্তি।