সাবধান! হকারের মালে যেন ধাক্কা না লাগে

নিউ মার্কেটের সামনে রাস্তা জুড়ে বসে থাকা হকারদের পসরায় পা লেগে গিয়েছিল এক তরুণীর। তার জেরে ওই হকারের হাতে নিগৃহীতা হতে হয়েছিল তাঁকে। পরে অবশ্য গ্রেফতার করা হয় ওই হকারকে। কিন্তু সারা শহর জুড়েই তো ফুটপাথ আটকে হকারদের রমরমা ব্যবসা। সেই পসরা বাঁচিয়ে কী ভাবে চলছেন সাধারণ মানুষ? সরেজমিন ঘুরে দেখলেন সাবেরী প্রামাণিক। নিউ মার্কেটের সামনে রাস্তা জুড়ে বসে থাকা হকারদের পসরায় পা লেগে গিয়েছিল এক তরুণীর। তার জেরে ওই হকারের হাতে নিগৃহীতা হতে হয়েছিল তাঁকে। পরে অবশ্য গ্রেফতার করা হয় ওই হকারকে। কিন্তু সারা শহর জুড়েই তো ফুটপাথ আটকে হকারদের রমরমা ব্যবসা। সেই পসরা বাঁচিয়ে কী ভাবে চলছেন সাধারণ মানুষ? সরেজমিন ঘুরে দেখলেন সাবেরী প্রামাণিক।

Advertisement
শেষ আপডেট: ১০ মে ২০১৪ ০১:২৮
Share:

হাতিবাগান
দুপুর ২টো ৪৫

Advertisement

রোদের প্রচণ্ড তাপ আর ভ্যাপসা গরম উপেক্ষা করেই শুক্রবার ভরদুপুরে কেনাকাটা করতে হাজির বহু মানুষ। সরু ফুটপাথের অর্ধেকটা জুড়ে পসরা সাজিয়ে বসেছেন হকারেরা। অন্য পাশে ছোট-বড় নানা মাপের দোকান। দোকানের বাইরে টুলে বসে দোকানি। এক দিকে উৎসাহী ক্রেতা আর উল্টো দিকে ক্রেতার আশায় পথ চেয়ে থাকা দোকানির ফাঁক গলে এগোতে চাইছিলেন কুড়ি-বাইশের এক তরুণী। বেশ কয়েক বার এগিয়ে পিছিয়ে অবশেষে কাত হয়ে কার্যসিদ্ধি করলেন। শুধুই কি শহরের রাস্তা আটকে বিকিকিনি? এর ফাঁকে চলে পথচারীদের নিয়ে হকারদের রসালো গল্প। সাদা শর্টস আর টি-শার্ট পরা এক তরুণীকে দেখে তাঁদেরই কেউ কেউ বলে ওঠেন, “বেশ মানিয়েছে কিন্তু। ‘স্ট্রাকচার’টা ভাল তো।”

Advertisement

এসপ্ল্যানেড
বিকেল ৪টে ৩০

চিত্রটা প্রায় একই। ফুটপাথে হকারদের সাজানো দোকানে বিক্রি হচ্ছে রংবেরঙের টি-শার্ট, সস্তার ঘড়ি-সানগ্লাস থেকে নাইটি, জুতো সব। সেই সঙ্গে ক্রেতা টানতে গলা ফাটিয়ে চেঁচাচ্ছেন দোকানি। একে চলাফেরার রাস্তা নেই, তার উপরে শোরগোল। স্বামীর হাত ধরে যাচ্ছিলেন এক প্রৌঢ়া। গতি শ্লথই ছিল। তার উপরে হরেক মালের এই সম্ভার তাঁদের কার্যত থমকে দিল। বিরক্তি প্রকাশ করে প্রৌঢ়া একটু পাশ কাটিয়ে এগোনোর চেষ্টা করতেই পাশ থেকে মন্তব্য “আরে মাসিমা, গরমে তো তা-ও লোক কম। তেমন ভিড় হলে কী করতেন?”

নিউ মার্কেট চত্বর
বিকেল ৩টে ৪৫

এখানেই বৃহস্পতিবার বিকেলে তরুণীর গায়ে হাত তোলার অভিযোগ উঠেছে এক হকারের বিরুদ্ধে। এখানে আবার ফুটপাথ নয়, গাড়ি চলাচলের রাস্তার উপরেই সাজানো ব্যাগ, জুতো, পুতুল, ঝুটো গয়না, জামাকাপড়ের সম্ভার। সার দিয়ে এগোচ্ছে গাড়ি, বাইক। তার মাঝখান দিয়েই চলেছে হাতে টানা রিকশা, পুরসভার জঞ্জাল ফেলার হাতগাড়ি। এরই মধ্যে এক দম্পতি দুই ছেলেমেয়েকে কোলে নিয়ে ব্যাগ দেখছিলেন। পার্কিং লট জুড়ে দোকানের পাশেই একটি গাড়ি পার্ক করার জন্য চলে এল। কেনাকাটা তখন মাথায়, একগাদা জিনিস আর চলমান গাড়ির ফাঁকে নিজেদের সামলাতেই ব্যস্ত হয়ে পড়লেন তাঁরা। আর যাঁরা গাড়ি, বাইক, রিকশা, কেনাকাটা কোনওটাতেই নেই, কেবল হেঁটে গন্তব্যে পৌঁছনোর চেষ্টা করছেন, তাঁদের অবস্থা সব থেকে করুণ।

রাসবিহারী মোড়
বিকেল ৫টা ১৫

কালীঘাট মেট্রোয় ঢোকার সামনেই পানের দোকান। মুখোমুখি দু’টো স্টলে বিক্রি হচ্ছে মোবাইলের নানা সামগ্রী। পাশেরটিতে ফলের রস, তারও পাশে ফল। একেই তেমন চওড়া নয় ফুটপাথ। তার উপরে এত সম্ভারের ভারে তা আরও সঙ্কীর্ণ। তাতেও থমকে, কাত হয়ে এগিয়ে চলা। কিন্তু কেউ কোনও দরকারে একটু দাঁড়ালেই বিপত্তি। যেমন এ দিন নিজেদের মধ্যে কথা বলতে দাঁড়িয়েছিলেন দুই মহিলা। তাতেই থমকে গেলেন আশপাশের সকলে।

গড়িয়াহাট মোড়
সন্ধ্যা ৬টা

বাঁশ দিয়ে তৈরি করা কাঠামো। তার উপরে প্লাস্টিকের ছাউনির তলায় কাঠের তক্তার উপরে হরেক জিনিসের সম্ভার। কী নেই সেখানে! কোথাও জামাকাপড়, টেবিল ক্লথ। কোথাও কাচের কাপ-ডিশ, ঠাকুরের জিনিস, সিডি, আচার, মোবাইল ফোনের সামগ্রী, পর্দার কাপড়, টেডি বিয়ার হাজির সবই। তার মধ্যেই সন্ধ্যার বৈশাখী হাওয়ায় হাত ধরে হাঁটাহাঁটি করছেন তরুণ দম্পতি। যতই ভিড় হোক, হাত ছাড়া যাবে না। হকারদের আগ্রাসন বাঁচিয়ে যে সরু ফুটপাথটুকু সেখানে মুখ বার করেছে, তার মধ্যে দিয়েই বেঁকে দুমড়ে এগিয়ে গেলেন তাঁরা। বুঝলাম, হকার-অধ্যুষিত রাস্তা দিয়ে কী ভাবে হাঁটতে হয়, সেই কায়দাটা ইতিমধ্যেই রপ্ত করে ফেলেছেন ওই দম্পতি।

ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন