সারাই চলছে মূর্তিটিরও। —নিজস্ব চিত্র।
পাওয়া যাচ্ছিল না পুরনো সেগুন কাঠ। ব্যহত হচ্ছিল সংরক্ষণ। এ বার তাই প্রাচীন ভবনের কড়িকাঠ ব্যবহার করে শুরু হল ইডেনের প্যাগোডা সংস্কার। কাজ শেষ হওয়ার পরে মাস তিনেক বাদে ফের দর্শকদের জন্য খুলে দেওয়া হবে ঐতিহ্যপূর্ণ প্যাগোডাটি।
মায়ানমারের তৎকালীন গভর্নর মউং হুনের স্ত্রী মা কিন তৈরি করান প্যাগোডাটি। লর্ড ডালহৌসি সেটির সৌন্দর্য দেখে সেটিকে কলকাতায় স্থাপন করতে চান। বেশ কয়েক খণ্ডে ভাগ করে নিয়ে আসা হয় প্যাগোডাটি। প্রথমে ফোর্ট উইলিয়ামে সেটি রাখা হয়েছিল। পরে মায়ানমার থেকেই বেশ কয়েক জন অভিজ্ঞ কারিগর এনে ইডেনে প্যাগোডাটি স্থাপন করা হয়।
প্রায় ৫০ ফুট উঁচু প্যাগোডাটির পূর্বমুখী প্রবেশপথের দু’পাশে রয়েছে পাথরের তৈরি দু’টি চতুষ্পদ জন্তু। বাঁধানো চত্বরের চার পাশে চার রক্ষীমূর্তি। তাদের মুখ মানুষের, দেহ চতুষ্পদ জন্তুর। প্যাগোডার সীমানা ঘেঁষে ১০ ফুট উঁচু ১৬টি গোলাকার স্তম্ভ। ভিতরে আরও ৬টি। এগুলোর উচ্চতা ২০ ফুটের মতো। সব মূর্তিরই রং চটে গিয়েছে।
কমবেশি ভেঙেছে সব ক’টিই। পূর্ত ইঞ্জিনিয়ারেরা জানালেন, এগুলোরও সংস্কার প্রয়োজন।
পূর্ত দফতর সূত্রের খবর, নানা অংশ ক্ষয়ে ক্রমেই বিপজ্জনক হয়ে উঠছিল প্যাগোডাটি। সংস্কারের জন্য বছরখানেক ধরে সেটি ঘিরে রাখা হয়েছে। পূর্ত দফতরের এক্সিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার কনকেন্দু সিংহ বলেন, “বহুকাল ঠিকঠাক সংস্কার না হওয়ায় এটির একটু বেশি ক্ষতি হয়ে গিয়েছিল। চার ধাপের এই প্যাগোডার নীচের দিক থেকে সারাতে শুরু করছি।” তিনি জানান, কাঠামোর বিভিন্ন স্থানে পচে যাওয়া কাঠের অংশ বদলানো হয়েছে সমমানের সেগুন কাঠ দিয়ে। কিরণশঙ্কর রায় রোডে নবাব সিরাজদৌল্লার আমলে তৈরি ভবনটি ভেঙে সম্প্রতি একটি অন্য প্রকল্প হচ্ছে। ওই ভবনের কড়িকাঠের একাংশ ব্যবহৃত হচ্ছে প্যাগোডার বাদ দেওয়া অংশে। এ বার হাত দেওয়া হবে প্যাগোডার কারুকাজে।
কাঠের যে সব অংশ অপেক্ষাকৃত কম নষ্ট হয়েছে, সেগুলি রাসায়নিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সংস্কারের চেষ্টা করছেন ইঞ্জিনিয়ারেরা। এ কথা জানিয়ে কনকেন্দুবাবু বলেন, “তা সত্ত্বেও প্যাগোডার কাঠের কিছু অংশ বদলাতে হচ্ছে। কিন্তু সমমানের সেগুন কাঠ না পেলে পুরনো জিনিস সংরক্ষণে স্বাভাবিক ভাবেই সমস্যা হয়।” ব্যাঙ্কশাল কোর্ট ভবনের ভেঙে পড়া বিমের কিছু সেগুন কাঠও ইডেনের এই প্যাগোডা সংরক্ষণে কাজে লাগছে বলে জানান তিনি। প্যাগোডার কাজে অভিজ্ঞ সিকিম, ভুটানের কারিগরদের নিয়ে আসা হচ্ছে এই কাজের জন্য।