হাতে টানা পাল্টে রিকশায় সবুজ-বিপ্লব

হাতে টানা রিকশায় মমতার স্পর্শ। মুখ্যমন্ত্রীর উদ্যোগে ‘গ্রিন রিকশা’ হয়ে ফিরে আসছে তারা। সোমবার নবান্নে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঘোষণা করেন, কলকাতার রাস্তায় যাঁরা হাতে টানা রিকশা চালাতেন, তাঁদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করবে রাজ্য সরকার। পরে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “এঁদের প্রতি আমার অন্য অনুভূতি আছে। ওঁরা চেয়েছেন, মানবিকতার কারণে একটা পুনর্বাসন প্যাকেজ দেওয়া হোক। আমরা ঠিক করেছি, ছ’হাজার রিকশার মালিক এবং সেই ছ’হাজার রিকশার চালকদের জন্য একটা পুর্নবাসন প্যাকেজ করে দেব এবং এঁদের গ্রিন রিকশা দেওয়া হবে।”

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৬ ডিসেম্বর ২০১৪ ০৩:২৬
Share:

এই দৃশ্য কি এ বার বদলাবে? নিজস্ব চিত্র

হাতে টানা রিকশায় মমতার স্পর্শ। মুখ্যমন্ত্রীর উদ্যোগে ‘গ্রিন রিকশা’ হয়ে ফিরে আসছে তারা।

Advertisement

সোমবার নবান্নে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঘোষণা করেন, কলকাতার রাস্তায় যাঁরা হাতে টানা রিকশা চালাতেন, তাঁদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করবে রাজ্য সরকার। পরে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “এঁদের প্রতি আমার অন্য অনুভূতি আছে। ওঁরা চেয়েছেন, মানবিকতার কারণে একটা পুনর্বাসন প্যাকেজ দেওয়া হোক। আমরা ঠিক করেছি, ছ’হাজার রিকশার মালিক এবং সেই ছ’হাজার রিকশার চালকদের জন্য একটা পুর্নবাসন প্যাকেজ করে দেব এবং এঁদের গ্রিন রিকশা দেওয়া হবে।” নবান্ন সূত্রের খবর, এ ব্যাপারে রিকশাচালক এবং মালিকদের পছন্দকেই প্রাধান্য দেওয়া হবে। তাঁরা প্যাডেল দেওয়া বা সৌরচালিত, যে ধরনের রিকশা চাইবেন তা কিনে দেওয়ার ব্যবস্থা করবে সরকার।

নবান্নের হিসেবে, কলকাতা শহরে আনুমানিক ছ’হাজার হাতে টানা রিকশা রয়েছে। এক জন মালিকের একটি রিকশা এবং তার এক জন করে চালক ধরলে মালিক-চালক মিলিয়ে সংখ্যাটা দাঁড়ায় বারো হাজার। গ্রিন রিকশার এই প্রকল্পে তাঁদের সকলেই উপকৃত হবেন বলে সরকারের দাবি।

Advertisement

যদিও গ্রিন রিকশা রাস্তায় নামলে রোজকার যানজটে ভোগান্তির চেহারাটা আরও বাড়বে বলেই মত রাজ্য পরিবহণের সঙ্গে যুক্ত একাংশের। এমনিতেই কলকাতায় শহরের আয়তনের তুলনায় রাস্তায় পরিমাণ অত্যন্ত কম। এই অবস্থায় ‘গ্রিন রিকশা’ যানজটের নতুন সমস্যা তৈরি করবে কি না, তা নিয়ে সন্দিহান পরিবহণের বহু কর্তাই।

নগর পরিকল্পক দীপঙ্কর সিংহের মতেও, “কলকাতার রাস্তায় অটোর মতো ট্রাফিকে নাক গলানোর আর একটি যান বাড়ল।” তাঁর আশঙ্কা, “ছ’হাজারে শুরু। এই সংখ্যা যে কোথায় গিয়ে থামবে, তা কেউ বলতে পারে না। এর থেকে সরকার গণ পরিবহণের দিকে নজর বাড়ালে ভাল হতো। সেখানে এই লোকগুলিকেও পুনর্বাসন দেওয়া যেত।”

রাজ্য প্রশাসনের শীর্ষ কর্তাদের দাবি, এই ধরনের রিকশা শহরের ছোট ও মাঝারি রাস্তায় চলবে। ফলে যানজটের সমস্যা হবে না। কিন্তু এতে অন্য আতঙ্ক বাড়বে বলেই মনে করছেন নগর পরিকল্পকেরা। দীপঙ্করবাবুর কথায়, “হাতে টানা রিকশা গলিতে পথচলতি মানুষের গতির সঙ্গে মানানসই। কিন্তু এ ধরনের যান ছোট গলিতে দুর্ঘটনার সম্ভাবনা বাড়াবে।”

এ দিন নবান্নে রিকশাপুলার অ্যাসোসিয়েশনের সঙ্গে বৈঠক করেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর কথায়, “ওই রিকশা কোথায় পাওয়া যায়, তা ওঁদেরই যোগাযোগ করে সন্ধান দিতে বলেছি। তাতে যা টাকা লাগে, আমরা দেব। মানবিকতার কারণে আমরা ওই টাকা খরচ করব।” একইসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী এ দিন জানিয়ে দেন, পুরো বিষয়টিই পরিবহণ দফতরের সঙ্গে কথা বলে করা হয়েছে। সেইমতো আজ, মঙ্গলবার রিকশাপুলার অ্যাসোসিয়েশনের নেতাদের সঙ্গে আলোচনায় বসবেন পরিবহণ সচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়-সহ অন্য কর্তারা। সেখানেই এ ব্যাপারে চূড়ান্ত রূপরেখা তৈরি করা হবে বলে জানিয়েছেন পরিবহণ কর্তারা।

রিকশাচালক সংগঠনের নেতা মোক্তার আলি জানিয়েছেন, মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনার পরে তাঁরা খুশি। তিনি বলেন, “প্রাথমিক ভাবে আমরা সৌরশক্তি-চালিত তিন চাকার রিকশা চালানোর সিদ্ধান্তই নিয়েছি। মুখ্যমন্ত্রীকে সে কথা জানানো হয়েছে। তবে পরিবহণ দফতরের সঙ্গে আলোচনার পরেই এ ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।” মোক্তার জানিয়েছেন, রিকশা-পিছু প্রায় তিরিশ হাজার টাকা খরচ হবে। তিনি বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী ওই পরিমাণ অর্থ দিতে সম্মত হয়েছেন। বাকি সব কিছুই পরিবহণ দফতরের সঙ্গে আলোচনার পরেই সিদ্ধান্ত হবে।”

তবে গ্রিন রিকশা চালু হলে অটোর সঙ্গে নতুন করে কোনও দ্বন্দ্ব তৈরি হবে কি না, তা নিয়ে এখনও কোনও সদুত্তর দিতে পারেননি পরিবহণ-কর্তারা। যদিও তৃণমূলের অটো ইউনিয়নের নেতাদের দাবি, যে রাস্তায় অটো চলে, সেখানে গ্রিন রিক্শা চলবে না। কাজেই কোনও সমস্যা হবে না। মোক্তারেরও দাবি, “এত দিন যে সব রাস্তায় হাতেটানা রিকশা চলত, সেখানেই এই গ্রিন রিকশা চলবে। এতে কোনও অসুবিধাই হবে না।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন