আনুগত্যেই টিকিট কুজুরের, ধূপগুড়িতে দাবি প্রতিবাদীদের

ছাত্রীকে ধর্ষণ করে খুনের মামলা লঘু করে দেওয়ার পুরস্কার হিসেবেই শাসকদলের প্রার্থীপদ পেয়েছেন জলপাইগুড়ির পুলিশ কর্তা জেমস কুজুর। ধূপগুড়ির প্রকাশ্য সভায় এমনই অভিযোগ তুললেন ‘আক্রান্ত আমরার’ সদস্যরা।

Advertisement

নমিতেশ ঘোষ

ধূপগুড়ি শেষ আপডেট: ০৭ মার্চ ২০১৬ ০২:৪১
Share:

ফালাকাটা বাসস্ট্যান্ডে সভায় অম্বিকেশ মহাপাত্রা। নিজস্ব চিত্র।

ছাত্রীকে ধর্ষণ করে খুনের মামলা লঘু করে দেওয়ার পুরস্কার হিসেবেই শাসকদলের প্রার্থীপদ পেয়েছেন জলপাইগুড়ির পুলিশ কর্তা জেমস কুজুর। ধূপগুড়ির প্রকাশ্য সভায় এমনই অভিযোগ তুললেন ‘আক্রান্ত আমরার’ সদস্যরা।

Advertisement

বিধানসভায় কুমারগ্রাম আসন থেকে যে দিন জেমস কুজুরের নাম তৃণমূল প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে, সেদিনও তিনি জলপাইগুড়ির অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের দায়িত্বে ছিলেন। কর্তব্যরত পুলিশ অফিসারকে শাসক দলের প্রার্থী করায় রাজনৈতিক মহলে বির্তকের ঝড় ওঠে। নির্বাচন কমিশনের দ্বারস্থ হন বামেরা। প্রার্থী হওয়ার আগে উর্দি পরে জেমস কুজুর তৃণমূলেরই কাজ করেছেন বলে অভিযোগ তুলেছিলেন বিরোধীরা।

রবিবার ধূপগুড়িতে ‘আক্রান্ত আমরা’র সদস্যরা অভিযোগ করেন, ধুপগুড়ি কাণ্ডের সময় জেমস কুজুরই অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ছিলেন। তিনি নানাভাবে মামলাটিকে লঘু করে দেন। অম্বিকেশ মহাপাত্র বলেন, ‘‘ধূপগুড়ির মামলাটিকে লঘু করে নষ্ট করে দেওয়া হয়েছে। ছাত্রীর বাবাকে পুলিশ ক্রমাগত হেনস্থা করছে। এ সবের পেছনেই তৎকালীন অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের তৈরি চিত্রনাট্য ছিল। সে কারণেই তৃণমূল তাঁকে বিধানসভায় প্রার্থী করে পুরস্কৃত করেছে।’’

Advertisement

ওই সংগঠনের সদস্যরা ধূপগুড়ি থানায় গিয়ে আইসি সঞ্জয় দত্তের সঙ্গে দেখা করেও লিখিত প্রতিবাদ জানান। অভিযোগ, ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বর মাসে তৃণমূল নেতার ডাকা সালিশি সভায় বাবাকে মারধরের প্রতিবাদ করেছিল ছাত্রীটি। এরপরেই সভার মাতব্বররা ছাত্রীকে থুতু চাটানোর হুমকি দেয় বলে অভিযোগ। ভয়ে ছাত্রীটি সালিশি সভা থেকে পালিয়ে গেলেও, তার মা-বাবাকে সভায় আটকে রাখা হয় বলে পুলিশকে জানিয়েছে ছাত্রীর পরিবার। হুমকির ভয়ে ছাত্রীটি সভা থেকে পালিয়ে গেলে, কয়েকজন পিছু নেয় বলে দাবি। পরদিন রেল লাইনের পাশ থেকে ছাত্রীর বিবস্ত্র দেহ উদ্ধার হয়। চোদ্দ জনের বিরুদ্ধে মেয়েকে ধর্ষণ করে খুনের অভিযোগ দায়ের করে ছাত্রীর বাবা। সে অভিযোগের তদন্ত নিয়ে পুলিশ ক্রমাগত টালবাহানা করে বলে অভিযোগ।

এ দিন অবশ্য জেমস কুজুর কোনও মন্তব্য করতে চাননি। তবে তৃণমূলের জলপাইগুড়ি জেলার সভাপতি সৌরভ চক্রবর্তী বলেন, “বিষয়টি ভাল করে না জেনেই অম্বিকেশবাবুরা মন্তব্য করেছেন। ওই ঘটনায় জেমস কুজুরের কোনও ভুমিকায় ছিল না। বিষয়টি রেল পুলিশের অধীন ছিল। তাঁরাই তদন্ত করে চার্জশিট জমা দেয়।”

এ দিন দুপুরে ‘আমরা আক্রান্ত’র চারজন সদস্য অম্বিকেশ মহাপাত্র, অরুণাভ গঙ্গোপাধ্যায়, বালির নিহত তপন দত্তের স্ত্রী প্রতিভা দত্ত এবং সুটিয়ার বরুণ বিশ্বাসের দিদি প্রমিলা বিশ্বাস ধূপগুড়িতে পৌঁছন। তাঁদের সঙ্গে ছিলেন মালবাজারের রোহিত পাশিও। প্রথমে তাঁরা নিহত দশম শ্রেণির ওই ছাত্রীর মামাবাড়িতে যান। সেখানে ওই ছাত্রীর মা, বাবা, মামা এবং পরিজনদের সঙ্গে কথা বলেন। সেখান থেকে থানায় গিয়েছিলেন তাঁরা। ছাত্রীর বাবাকে ক্রমাগত হেনস্থা করা নিয়ে আইসিকে ক্ষোভ জানান ‘আক্রান্ত আমরা’র সদস্যরা।

বিতর্কের পরে রবিবার সকালে অবশ্য বাংলো ছাড়েন জেমস কুজুর। চাকরি থেকে ইস্তফা দিয়েছেন বলে দাবি করলেও, তিনি অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের বাংলোয় ছিলেন বলে বিরোধীরা অভিযোগ তোলেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন