‘তুমি মহারাজ সাধু হলে আজ, আমি আজ চোর বটে।’
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘দুই বিঘা জমি’ কবিতা আবৃত্তি করতে করতে এই পংক্তিটি আসামাত্রই হাততালির ঝড় উঠল শ্রোতাদের মধ্যে। যিনি আবৃত্তি করছিলেন, কিছু ক্ষণের জন্য থামতে হল তাঁকে।
ঘটনাস্থল প্রেসিডেন্সি জেল। রবীন্দ্র জয়ন্তী অনুষ্ঠানে কবিতাটি আবৃত্তি করছিলেন সারদা-কাণ্ডে অন্যতম অভিযুক্ত কুণাল ঘোষ। শ্রোতার আসনে মূলত বন্দিরাই। ‘দুই বিঘা জমি’-র ওই পংক্তি তাঁদের এতই পছন্দ হল যে, হাততালি যেন আর থামতেই চায় না।
রবি ঠাকুরের কবিতায় উপেন-এর ওই বক্রোক্তি ছিল ভূস্বামী বাবু-র প্রতি। রাজনৈতিক মহলের অনেকেরই মত, রবি ঠাকুরের কবিতার আশ্রয় নিয়ে কুণাল আসলে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে খোঁচা দিলেন। গ্রেফতার হওয়ার পর থেকে আদালতে এবং তার বাইরে নানা সময়ে মুখ্যমন্ত্রীর উদ্দেশে সরাসরি বা প্রকারান্তরে নানা মন্তব্য করেছেন তিনি। সারদায় সব চেয়ে সুবিধা মুখ্যমন্ত্রীই পেয়েছেন, এ কথাও বলেছিলেন তিনি। এ দিনও তাঁর আবৃত্তির জন্য দুই বিঘা জমি কবিতাটি বেছে নেওয়ার এটাই উদ্দেশ্য ছিল বলেই অনেকের ধারণা।
সেই প্রয়াসে কম যাননি সারদা মামলার আর এক বন্দি সদানন্দ গগৈ। তিনিও গান ধরলেন— ‘এই করেছো ভাল, নিঠুর হে..।’ সহ-বন্দিদের আবদারে গান ধরতে হল কুণালকেও। গাইলেন— ‘তোরা যে যা বলিস ভাই, আমার সোনার হরিণ চাই’, ‘তোমরা যা বল তাই বল..।’
অন্যান্য বছরের মতো এ বারেও রাজ্যের সব জেলেই এ দিন রবীন্দ্র জয়ন্তী পালিত হয়েছে। বহু জেলেই বন্দিরা এর জন্য সুপারের অনুমতি নিয়ে হারমোনিয়াম-তবলা নিয়ে গান, আবৃত্তি ও নাটকের মহড়া চালিয়েছেন। প্রেসিডেন্সি জেলে কুণাল, সদানন্দ এবং আরও কয়েক জন বন্দির আবৃত্তি-গান ছাড়াও এ দিনের অনুষ্ঠানের আকর্ষণ ছিল অলকানন্দা রায়ের পরিচালনায় ‘ধ্রুবজ্যোতি তুমি যিশু’ নাটকের বিভিন্ন অংশের অভিনয়। তাতে অভিনয় করলেন বন্দিরাই। শনিবার বন্দিদের লেখা নিয়ে প্রকাশিত হয়েছে ‘জাগৃতি’ নামে একটি দেওয়াল পত্রিকাও।
এ দিন দমদম ও আলিপুর জেলেও রবীন্দ্র জয়ন্তী পালিত হয়। দমদম জেলে বন্দিদের ছেলেমেয়েরা রবীন্দ্রসঙ্গীত গায়। আলিপুরেও প্রায় ২০ জন বন্দি গান এবং কবিতার মধ্যে দিয়ে রবীন্দ্রনাথকে স্মরণ করেন। তবে সারদা মামলার অন্য দুই অভিযুক্ত সুদীপ্ত সেন ও দেবযানী মুখোপাধ্যায় সেখানে থাকলেও অনুষ্ঠানে যোগ দেননি বলেই জেল সূত্রে খবর।