তাঁর কাছে যে সব ‘তথ্যপ্রমাণ’ রয়েছে, সিবিআই তা নিয়ে অনুসন্ধান না করলে আদালতের মধ্যেই আত্মহত্যা করার হুমকি দিলেন সারদা মামলায় অভিযুক্ত তৃণমূলের সাসপেন্ডেড সাংসদ কুণাল ঘোষ। এক বার নয়, দু’-দু’বার। প্রথম বার কুণাল যখন আত্মহত্যার হুমকি দেন, তখন এজলাসে তাঁর আইনজীবী হাজির ছিলেন না। আইনজীবীর উপস্থিতিতে দ্বিতীয়বার হুমকি দেওয়ার সময় কেঁদেও ফেলেন কুণাল।
এর আগে কুণাল জেলের মধ্যে ঘুমের ওষুধ খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিলেন। আর সোমবার কলকাতার ব্যাঙ্কশালের সিবিআই আদালতে তিনি বলেন, ‘‘আমার পরিবার ছত্রভঙ্গ। ২০১৩ সালের ২৩ নভেম্বর থেকে জেলে রয়েছি। আমি জামিন বা প্যারোলে মুক্তি চাইছি না। হয়তো জেলেই মরে যাব। আমার কাছে তিনটি ভিডিও ফুটেজের সিডি রয়েছে। আমি চাই সেগুলি সিবিআইয়ের তদন্তকারী অফিসার তদন্ত করে দেখুন। সিবিআই যদি সেগুলি নিয়ে অনুসন্ধান না করে, তা হলে জেলে নয়, আদালতের মধ্যেই আত্মহত্যা করব।’’ সিবিআইয়ের তদন্ত সম্পর্কে তাঁর কটাক্ষ, ‘‘আমি মৃত সৈনিক। আর সিবিআই আমার উপরে তলোয়ার চালাচ্ছে!’’ সিবিআইয়ের কৌঁসুলি কুণালের আবেদনের বিরোধিতা করেন।
সারদা ট্যুরস অ্যান্ড ট্রাভেলস মামলায় কুণালের হাজিরা ছিল বিচারক অরবিন্দ মিশ্রের এজলাসে। দুপুরে কুণালকে এজলাসে তোলার সময় তাঁর আইনজীবী অয়ন চক্রবর্তী ছিলেন না। বিচারক এজলাসে বসতেই কুণাল বলতে শুরু করেন, ‘‘প্রভাব খাটানোর ক্ষমতা আমার নেই। এই আদালতে ৪৪ বার হাজির হয়েছি। আদালতে হাজিরা দেওয়ার দিনগুলিতে ৪ হাজার ৪০০ মিনিট ফোনে কথা বলার সুযোগ পেয়েছি। মাননীয় বিচারক, একটা ফোনও কি করেছি তথ্যপ্রমাণ লোপাটের জন্য? তদন্তকারী অফিসারের কাছে তিনটি ভিডিও ফুটেজের সিডি দিতে চাই। সেই ফুটেজ গুরুত্ব দিয়ে অনুসন্ধান করা হোক।’’ বিচারক বলেন, ‘‘আপনি আপনার কথা আপনার আইনজীবী মারফত বলুন।’’ বলে তখনকার মতো উঠে যান বিচারক।
বিকেলে কুণালের আইনজীবী আদালতে এলে বিচারক মিশ্র ফের এজলাসে বসেন। কুণালের আইনজীবী অয়ন জানান, তাঁর মক্কেলের হয়ে তিনটি সিডি আদালত মারফত তিনি তদন্তকারীর হাতে তুলে দিতে চান। সিডি-তে কী রয়েছে, তদন্তের স্বার্থেই তা তদন্তকারীদের জানা প্রয়োজন। বিচারক অয়নের উদ্দেশে বলেন, ‘‘এখনই সিডি জমা নেওয়া যাবে না। আগে আবেদন করুন।’’ অয়নের প্রশ্ন, ‘‘সিবিআই বারবার বলছে, আরও তদন্ত প্রয়োজন। কিন্তু সেই তদন্ত হচ্ছে কোথায়?’’ সিবিআইয়ের আইনজীবী ডি এন পাণ্ডে বলেন, কোন তথ্য যাচাই করতে হবে, কোনটি নয়, তা বুঝবেন তদন্তকারী। অভিযুক্তের নির্দেশে তদন্ত হবে না।
এর পরেই এজলাসে কেঁদে ফেলেন কুণাল। বিচারকের সামনেই আবার বলেন, ‘‘জেলে ভাল ব্যবহার পাই। এর আগে জেলে ঘুমের ওষুধ খাওয়ার জন্য দুই জেলকর্মীকে সাসপেন্ড হতে হয়েছে। তার পুনরাবৃত্তি চাই না। কিন্তু এ বার সুবিচার না পেলে আদালতেই আত্মহত্যা করব।’’