হোমেই লক্ষ্মীলাভ লক্ষ্মীছাড়া মেয়ের

বাড়ি থেকে কেউ আর খোঁজ করে না। কিন্তু বাড়ির স্মৃতি তো ছেড়ে যায় না।

Advertisement

অনির্বাণ রায়

জলপাইগুড়ি শেষ আপডেট: ০৬ অক্টোবর ২০১৭ ০৩:১০
Share:

প্রতীকী ছবি।

এমনই চাঁদ উঠত কোজাগরীর রাতে। পুজো হত বাড়িতে। মা ডাকত হাতে হাতে এটা সেটা জুগিয়ে দেওয়ার জন্য। আলসেমি করলেই বলত, ‘‘লক্ষ্মীছাড়া মেয়ে কোথাকার!’’

Advertisement

সেই বাড়ি হারিয়ে গিয়েছে। মা কেমন রয়েছেন, তা পর্যন্ত জানে না জলপাইগুড়ির ক্লাব রোডের অনুভব হোমের ডলি। লক্ষ্মীছাড়া কথাটা শুনতে শুনতেই এক দিন কাজের খোঁজে বাড়ি ছেড়ে বেরিয়ে পড়েছিল সেই কিশোরী। কিন্তু গিয়ে পড়ে পাচারকারীদের কবলে। বহু দিন অত্যাচার সহ্য করতে হয়েছে। তারপরে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা তাকে উদ্ধার করে। ঠাঁই হয় জলপাইগুড়ির এই হোমে।

বাড়ি থেকে কেউ আর খোঁজ করে না। কিন্তু বাড়ির স্মৃতি তো ছেড়ে যায় না।

Advertisement

ডলি বলেন, ‘‘এমন সব দিনে বাড়ির কথা মনে পড়ে। মনে পড়ে মা পুজো করতেন। তাই এ বার হোমেই পুজো করছি।’’ যে মায়ের উপরে অভিমানে বা়ড়ি ছেড়েছিল, এখন হোমে লক্ষ্মীপুজোর সময় সেই মাকেই মনে পড়েছে তার। তার কথায়, ‘‘মা-র মতো করেই আলপনা দিচ্ছি। অন্য কোনও আলপনা তো আর দেখিওনি কখনও।’’ হোম কর্তৃপক্ষও চেয়েছেন ভাল করেই লক্ষ্মীপুজোর আয়োজন করতে। সেই আয়োজনে হাত লাগিয়েছে পারভিন, আফসানারাও। বুধবার বিকেল থেকে নাড়ু পাকিয়েছে পারভিন। সন্ধ্যায় মুড়ি মাখা হয়েছিল হোমে। পারভিন, আফসানারা কেউই খেতে যায়নি। পারভিনের কথায়, ‘‘শুনেছি পুজোর নাড়ু বানানোর সময় কিছু খেতে নেই। তাই আমরাও খাইনি।’’ সেই নাড়ুই সন্ধ্যায় সাজানো হয়েছিল নৈবেদ্যের থালায়। প্রতিমা ছিল না। পটে পুজো হয়েছে। তাতে শাড়িও পরানো হয়। ডলি-আফসানারা সকলে মিলে সাজিয়েছে হোমের লক্ষ্মীকে।

অনুভব হোমে থাকে অনাথ-ভবঘুরে এবং উদ্ধার হয়ে আসা বালিকা-কিশোরীরা। অনেকের বাড়ির ঠিকানাই মনে নেই। অনেকের ফিরে যাওয়ার উপায় নেই। সম্বৎসর কেটে যায় হোমেই। হোমের কর্ণধার দীপশ্রী রায়ের কথায়, ‘‘হোমের মেয়েরাই প্রতি বছর লক্ষ্মী পুজো করে। এ বছর বড় করে পুজো করার আব্দার করেছিল। সবাই কাজে হাত লাগিয়ে পুজো সম্পন্ন করেছে।’’

ফুল তোলা, মালা গাঁথা, নৈবেদ্য সাজানো থেকে ভোগ রান্না সব মেয়েরাই করে। প্রসাদ ছিল লুচি-সুজি, খিচুড়ি। ছিল নাড়ু মোয়া নিমকি। পুজোর পরে আবাসিকরা নাচ-গান-আবৃত্তি শুনিয়েছে।

ডলির কথায়, ‘‘পুজোর পরে মা গান গাইত। সুরটা মনে রয়েছে, কথাগুলো ভুলে গিয়েছি।’’

(হোমের আবাসিকদের নাম পরিবর্তিত)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন