মাধ্যমিক শুরু হয়ে গিয়েছে। এরপর উচ্চ মাধ্যমিকের পালা। ইংরেজি মাধ্যম স্কুলগুলির দশম ও দ্বাদশ শ্রেণির পরীক্ষাও শুরু হবে আর কিছু দিনের মধ্যেই। সব মিলিয়ে এই সময়টা হল পরীক্ষার মরসুম। পরীক্ষা মানেই বাড়তি উদ্বেগ, টেনশন। তাই বাতাসে বসন্তের ছোঁয়া লাগলেও পরীক্ষার্থী আর তাদের অভিভাবকদের কানে বাজছে—‘পরীক্ষা এসে গেছে।’ মনোবিদ জয়রঞ্জন রামঅবশ্য বলছেন, চিন্তার কিছু নেই।
পরীক্ষার্থী আর অভিভাবকদের মানসিক প্রস্তুতির জন্য কিছু পরামর্শ দিলেন তিনি—
পরীক্ষার্থীর জন্য
মনে রেখো, পরীক্ষার আগে বুক ধড়ফড় করবে, একটু চিন্তা হবে—সেটাই স্বাভাবিক। পরীক্ষা নিয়ে একেবারে হেলদোল না থাকাটা কাম্য নয়। তবে, পরীক্ষার ভয়কে মনের উপর চেপে বসতে দিলেও চলবে না। বছরভর যা পড়েছো, পরীক্ষার খাতায় তার ষোলো আনা দিতে হলে মনের জোরটাই আসল। পরীক্ষাকে সহজ ভাবে নিতে হবে। দশম বা দ্বাদশ শ্রেণির পরীক্ষা অন্য শ্রেণির পরীক্ষা থেকে আলাদা কিছু নয়। এর জন্য বাড়তি জ্ঞানার্জনের প্রয়োজন হয় না। এত দিন যা পড়েছো, প্রশ্নপত্রে তার অতিরিক্ত কিছু জানতে চাওয়া হবে না। তবে পরীক্ষাকেন্দ্রের পরিবেশটা আলাদা হবে এবার। তাই এর সঙ্গে মানিয়ে নিতে হবে। পরীক্ষাকেন্দ্র কেমন, যাতায়াতে কতটা সময় লাগবে, তার আগাম ধারণা থাকলে ভাল। পরীক্ষা শুরুর কয়েক দিন আগে পরীক্ষাকেন্দ্রটি নিজে এক বার ঘুরে দেখে এলে ভাল হয়। মাধ্যমিকে পরপর পরীক্ষা থাকে। বিকেলে পরীক্ষা দিয়ে ফিরে খোলা মনে থাকাটা জরুরি। প্রয়োজনে টিভি বা কম্পিউটারের সামনেও বসা যেতে পারে। এতে যদি মানসিক চাপ কমে, তুমি একটু রিল্যাক্স বোধ করো—তা হলে ক্ষতি কী? পরীক্ষার আগের রাতে ৭-৮ ঘণ্টা ঘুম আবশ্যক। রাত জেগে পড়া বা পরীক্ষার দিন ভোর ৪টে থেকে পড়তে বসে যাওয়ার দরকার নেই। পরীক্ষার আগের রাতে প্রচুর পড়ার চাপ না নেওয়াই ভাল। এত দিন যা পড়েছো, ২-৩ ঘণ্টায় তা উল্টে-পাল্টে নাও। শেষবেলা না পড়লে পরীক্ষার সময় কিছু মনে পড়বে না—এই আতঙ্ক ঝেড়ে ফেলো। পরীক্ষার ক’দিন খাওয়াদাওয়া নিয়মমাফিক করা উচিত। অঙ্ক পরীক্ষা ভাল হয়েছে মানেই পেট পুরে চিকেন কষা—এটা ঠিক নয়। হাল্কা শরীরচর্চা কিংবা কয়েক পাক হেঁটে এলে দেখবে শরীর ঝরঝরে লাগছে। মন হবে ফুরফুরে, তাজা।
অভিভাবকের জন্য
সন্তানের পরীক্ষা নিয়ে উদ্বেগ থাকাটা স্বাভাবিক। কিন্তু সেটিকে এমন পর্যায়ে নিয়ে যাবেন না, যাতে বাড়িতে ‘যুদ্ধে যাচ্ছি’ পরিস্থিতি তৈরি হয়। সন্তানের পরীক্ষাকে যেমন অবহেলা করবেন না, তেমনই তা নিয়ে অতিরিক্ত উৎকণ্ঠা প্রকাশেরও দরকার নেই। সবাইকে ফোন করে ‘পরীক্ষা নিয়ে টেনশন হচ্ছে’ বলে বেড়াবেন না। আপনাদের উৎকণ্ঠা প্রকাশের ভঙ্গি কিন্তু সন্তানের উপর বাড়তি চাপ তৈরি করে। পরীক্ষা দিয়ে ফেরার পরে সেই প্রশ্নপত্র নিয়ে কাটাছেঁড়া একেবারে করবেন না। এই নিয়ে যাবতীয় আলোচনা হবে সমস্ত পরীক্ষা মিটে যাওয়ার পরে। সন্তানের উপর প্রত্যাশার চাপ চাপিয়ে দেবেন না। কারও সঙ্গে প্রতিযোগিতা নয়। সন্তানকে বিচার করুন ওর নিজের মাপকাঠিতে। ছেলেমেয়েকে বোঝান, এটাই জীবনের শেষ পরীক্ষা নয়। তাতে সন্তানের মানসিক জোর বাড়বে। সন্তানকে এটা বোঝানোও জরুরি যে পরীক্ষা দেওয়াটা তার হাতে, কিন্তু পরীক্ষার ফল কী হবে সেটা সকলেরই অজানা। এই ভাবে বিষয়টি দেখলে মনের চাপ কমে। পরীক্ষার ক’দিন কর্মক্ষেত্র থেকে ছুটি নিয়ে সন্তানের সঙ্গে থাকা যেতেই পারে। এতে ওর মনের জোর বাড়বে। বাবা-মা সবসময় সন্তানের ভরসাস্থল। কোনও পরীক্ষা খারাপ হলে রাগারাগি, কান্নাকাটি একদম নয়। এতে পরের পরীক্ষাও খারাপ হয়ে যাবে। ছেলেমেয়েকে শেখান ‘ভাল-মন্দ যাহাই ঘটুক/ সত্যরে লও সহজে।’
সব শেষে ‘থ্রি ইডিয়টস’ সিনেমার সেই বিখ্যাত সংলাপ—‘কাবিল
বননে কি কোশিস করো, কামিয়াবি খুদবো-খুদ আ জায়েগি।’ যোগ্যতা থাকলে সাফল্য আসবেই।