CPM

এখানে ‘চোর’, দিল্লিতে ‘ডাকাত’, সরব বাম বিক্ষোভ

পুলিশ অবশ্য শুক্রবার প্রথম দিকে সিজিও কমপ্লেক্স চত্বরে মঞ্চ বাঁধার অনুমতি দেয়নি, ডেকরেটরের জিনিসপত্রও সরিয়ে দেওয়া হয়।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১০ সেপ্টেম্বর ২০২২ ০৬:২২
Share:

সিজিও কমপ্লেক্সে বামাদের বিক্ষোভ সভা। নিজস্ব চিত্র।

দুর্নীতির তদন্তের গতি বাড়ানোর জন্য ইডি, সিবিআইয়ের উপরে চাপ বাড়াতে কড়া হুঁশিয়ারি দিল বামফ্রন্ট। বিধাননগরে সিজিও কমপ্লেক্সের কাছে বড়সড় জমায়েত করে কেন্দ্রীয় সংস্থা এবং কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে তোপ দাগলেন বাম নেতারা। তাঁদের হুঁশিয়ারি, দুর্নীতি বা কেলেঙ্কারিতে ধৃত তৃণমূল কংগ্রেসের নেতাদের ফের যদি তথ্য-প্রমাণের অভাব দেখিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়, তা হলে ইডি-সিবিআইয়ের আঞ্চলিক দফতরই এখানে থাকবে না বিক্ষোভের জেরে! বামেদের এই কর্মসূচিকে অবশ্য একই সঙ্গে পাল্টা আক্রমণ করেছে বিজেপি ও তৃণমূল।

Advertisement

তদন্তের প্রক্রিয়া দ্রুত সম্পূর্ণ করা এবং দুর্নীতির চক্রের মাথা পর্যন্ত পৌঁছনোর দাবিতে সিজিও কমপ্লেক্স অভিযানের ডাক দিয়েছিল বামফ্রন্ট। পুলিশ অবশ্য শুক্রবার প্রথম দিকে সিজিও কমপ্লেক্স চত্বরে মঞ্চ বাঁধার অনুমতি দেয়নি, ডেকরেটরের জিনিসপত্রও সরিয়ে দেওয়া হয়। সিপিএম নেতারা তখন হুমকি দেন, কেন্দ্রীয় সংস্থার বিরুদ্ধে বিক্ষোভে রাজ্যের পুলিশ যদি বাধা দেয়, তা হলে বিধাননগর কমিশনারেট ঘেরাও হবে। শেষ পর্যন্ত সিজিও কমপ্লেক্সের উল্টো দিকে ছোট মঞ্চের মাপ বেঁধে দেয় পুলিশ। লেকটাউন, হাডকো এবং বৈশাখী মোড় থেকে তিনটি মিছিল করে সেখানে আসেন বাম কর্মী-সমর্থকেরা। সমাবেশে ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতোই।

বিক্ষোভ-সভায় সিপিএমের পলিটবুরো সদস্য সূর্যকান্ত মিশ্র বলেন, ‘‘দুর্নীতিগ্রস্তদের জেলে যেতে হবে। এখানে যারা আছে, তারা চুরি করেছে, ধরাও পড়ছে। কিন্তু দিল্লির সরকার যারা চালাচ্ছে, তারা ডাকাত!’’ সূর্যবাবুর মতে, ‘‘শুধু চুরি করলেই লুট হয়, তা তো নয়। অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি, কর্মসংস্থান নেই, সব সম্পদ চলে যাচ্ছে মুষ্টিমেয় কিছু ব্যক্তির হাতে— এই পরিস্থিতি দিল্লিতে যারা তৈরি করেছে, তারা আনেক বড় লুটেরা! এদের সকলের বিরুদ্ধে আমাদের লড়াই।’’

Advertisement

একই সুরে তৃণমূল এবং বিজেপিকে নিশানা করেন সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম। তাঁর বক্তব্য, ‘‘ইডি, সিবিআই এখনও চার আনা দুর্নীতি বার করেছে। আরও ১২ আনা বার করতে হবে। পুরো ১৬ আনা উসুল না হওয়া পর্যন্ত শান্তি নেই। ইডি-সিবিআই অমিত শাহদের কথায় চলে। তারা এখন কচ্ছপের মতো নড়ছে। অথচ তাদের ঘোড়ার মতো দৌড়নোর কথা!’’ তৃণমূল সরকারের পুলিশের ভূমিকার সমালোচনার সঙ্গে সঙ্গেই বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান বিমান বসুও বলেন, বিজেপিকে ছাড় দেওয়ার কোনও কারণই নেই। তাঁদের বক্তব্য, চাকরি-প্রার্থীরা ন্যায্য দাবি নিয়ে আদালতের দ্বারস্থ হওয়ায় বিচারপতিদের নির্দেশে সিবিআই-ইডি নেমেছে এবং এতে বিজেপির কোনও ‘কৃতিত্ব’ নেই। আরএসপি নেতা অশোক ঘোষের মন্তব্য, ‘‘সব তৃণমূল চোর নয় ঠিকই। কিন্তু সব চোর তো তৃণমূল!’’

অনুব্রত মণ্ডলকে ‘বীরের সম্মান’ দেওয়ার কথা বলেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। আবার মঙ্গলকোটের একটি মামলায় পুলিশ তথ্য-প্রমাণ পেশ করতে না পারায় বেকসুর খালাস পেয়েছেন তৃণমূলের বীরভূম জেলা সভাপতি। এই দুই প্রসঙ্গ উল্লেখ করে এ দিন সেলিমের হুঁশিয়ারি, ‘‘অনুব্রতকে বীর বলছেন মুখ্যমন্ত্রী কিন্তু নিহত ছাত্রদের বাড়ি গিয়ে বলতে পারলেন না, আমি লজ্জিত! দুর্জনদের পাশে এই সরকার আছে, সজ্জনদের বলছি রুখে দাঁড়ান। কাল যদি ইডি-সিবিআই বলে, পার্থ-অনুব্রতদের বিরুদ্ধে কিছু পাইনি, তা হলে তাদের অফিস এখানে থাকবে না! আরও মানুষ পথে নামবেন।’’

রাজ্য বিজেপির প্রধান মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য অবশ্য পাল্টা বলেছেন, ‘‘প্রাসঙ্গিকতা ফিরে পাওয়ার ব্যর্থ চেষ্টা! বাংলায় তদন্তের গতি বাড়াতে বলব আর বাংলার বাইরে গেলে তদন্তের বিরোধিতা করব, এই দ্বিচারিতা মানুষ মেনে নেবে না।’’ আর রাজ্য তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষের কটাক্ষ, ‘‘একটা গোটা মন্ত্রিসভাকে চোর বলে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য পদত্যাগ করেছিলেন। সে কথা ভুলে এমন নির্লজ্জ অবস্থান বামেরা ছাড়া না আর কে নেবে! এ রাজ্যে বাম-বিজেপির যৌথ কর্মসূচি দেখে মানুষ অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছেন। সেই রকম জমায়েতই করেছে সম্ভবত!’’ বুদ্ধ-কন্যা সুচেতনা ভট্টাচার্য অবশ্য ইতিমধ্যেই দাবি করেছেন, ‘চোরেদের মন্ত্রিসভা’ সংক্রান্ত তাঁর বাবার যে মন্তব্য তাঁর মুখে সংবাদমাধ্যমের একাংশে লেখা হয়েছিল, সে কথা তিনি আদৌ বলেননি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন