মমতার ধাক্কায় রাজ্যসভা দুঃস্বপ্ন বামের

লোকসভায় নেমে দাঁড়িয়েছে দুই। রাজ্যসভায় ছিল তিন। বিধানসভা ভোটের ধাক্কায় এ বার সেই তিন প্রদীপও নিভে যাওয়ার আতঙ্কের মুখে দাঁড়িয়ে সিপিএম!

Advertisement

সন্দীপন চক্রবর্তী

কলকাতা শেষ আপডেট: ৩০ মে ২০১৬ ০৪:১৩
Share:

লোকসভায় নেমে দাঁড়িয়েছে দুই। রাজ্যসভায় ছিল তিন। বিধানসভা ভোটের ধাক্কায় এ বার সেই তিন প্রদীপও নিভে যাওয়ার আতঙ্কের মুখে দাঁড়িয়ে সিপিএম!

Advertisement

স্মরণযোগ্য কালের মধ্যে এই প্রথম পশ্চিমবঙ্গ থেকে রাজ্যসভায় সাংসদ পাঠানোর ক্ষমতা হারিয়ে ফেলছে সিপিএম। তামিলনাড়ু বা অন্ধ্রপ্রদেশের মতো এখনই এ রাজ্য থেকে রাজ্যসভায় নির্বাচন নেই ঠিকই। কিন্তু আগামী পাঁচ বছর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যখন বিপুল সংখ্যার জোরে রাজ্য শাসন করবেন এবং সাংসদ-সংখ্যার জেরেই জাতীয় রাজনীতিতে গুরুত্ব বাড়িয়ে নেওয়ার চেষ্টা করবেন, বঙ্গ সিপিএমকে তখন বাঁচতে হবে রাজ্যসভায় শূন্য হয়ে যাওয়ার দুঃস্বপ্ন নিয়ে!

বিধানসভায় এ বার ৩৩ জন বিধায়ক পেয়েছে বামফ্রন্ট। যার মধ্যে সিপিএম ২৬। মোট ২৯৪ সদস্যের বিধানসভা থেকে রাজ্যসভায় প্রতিনিধি জেতাতে হলে আগামী বার অন্তত ৪২ জন বিধায়কের সমর্থন লাগবে। রাজ্যসভার ক’টি আসনের জন্য নির্বাচন হচ্ছে, তার উপরে অবশ্য জয়ের ন্যূনতম অঙ্ক নির্ভর করে। তবু ৩৩ জনের সমর্থন নিয়ে বামেদের পক্ষে যে নিজেদের জোরে রাজ্যসভার মুখ দেখা সম্ভব নয়, সেই সত্য উপলব্ধি করতে পারছে আলিমুদ্দিন স্ট্রিট এবং দিল্লির এ কে জি ভবন। অন্য দিক থেকে দেখলে যার মানে দাঁড়াচ্ছে, বাংলা থেকে রাজ্যসভায় সাংসদ পাঠাতে গেলে আগামী দিনে বামেদের ভরসা সেই কংগ্রেসের সঙ্গে জোট!

Advertisement

সিপিএমের এক পলিটব্যুরো সদস্যের কথায়, ‘‘গভীর সঙ্কট। আগামী বছর সীতারাম ইয়েচুরির রাজ্যসভায় মেয়াদ শেষ হবে। তখন আদৌ আমরা এ রাজ্য থেকে সাংসদ পাব কি না, বলার জায়গায় এখনই আমরা নেই!’’

সিপিএমের রাজ্যসভার দলনেতা এবং সাধারণ সম্পাদক ইয়েচুরির সাংসদ পদের মেয়াদ শেষ হবে ২০১৭ সালে। রাজ্যসভায় গত দু’বছরে তাঁর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা মাথায় রেখে প্রথা ভেঙে তাঁকে তৃতীয় বারের জন্য মনোনয়ন দেওয়ার পক্ষে সওয়াল করতে শুরু করেছিল দলের
একাংশ। কিন্তু এ বারের বিধানসভা ভোটের অঙ্কই সব হিসেব গোলমাল করে দিয়েছে!

ইয়েচুরির পরের বছরে রাজ্যসভায় মেয়াদ ফুরোবে সিটুর সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক তপন সেনের। তার পরে ২০২০ সালে ফুরোবে তরুণ সাংসদ ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়ের মেয়াদ। সোজা অঙ্কে এঁদের কাউকেই পুনর্নির্বাচিত বা তাঁদের বিকল্প পাঠানোর শক্তি আর থাকছে না বামেদের। সেই সময় রাজ্যসভায় এক জনকে নির্বাচিত করতে সমর্থন লাগবে অন্তত ৪৯ জন বিধায়কের। সমঝোতা বজায় রেখে এক বার কংগ্রেস এবং অন্য বার বামেরা প্রতিনিধি পাঠাতে চাইলে তখন অন্য কথা।

জোট হিসাবে লড়েই কংগ্রেস এ বার ৪৪টি আসন পেয়েছে বিধানসভায়। তাদের পক্ষে প্রথম বার একক শক্তিতেই রাজ্যসভায় প্রতিনিধি পাঠানো সম্ভব। গত পাঁচ বছরে আব্দুল মান্নানকে প্রার্থী করেও মনোনয়ন প্রত্যাহার, প্রদীপ ভট্টাচার্যকে রাজ্যসভায় পাঠানো বা সৈয়দ আহমেদ মালিহাবাদীকে নির্দল প্রার্থী করেও জেতাতে না পারা— এই রকম ঘটনা নিয়ে কংগ্রেসের অন্দরে জলঘোলা হয়েছে। স্বভাবতই এ বার প্রধান বিরোধী দলের মর্যাদা পাওয়ার পরে এবং সংখ্যা হাতে পেয়ে তারা নিজেদের প্রার্থীকেই আগে রাজ্যসভায় পাঠাতে চাইবে। জোট-ধর্ম তো তার পরের কথা!

কংগ্রেসের এক বর্ষীয়ান বিধায়কের কথায়, ‘‘বিরোধী দলের থেকে রাজ্যসভায় প্রতিনিধি নির্বাচনের যে সুযোগ আসবে, আমাদের দল প্রথমে নিশ্চয়ই তা ব্যবহার করতে চাইবে! তবে এই নিয়ে এখনই কোনও আলোচনা হয়নি।’’

আলিমুদ্দিনের নেতাদের সঙ্গে ইয়েচুরির ঘরোয়া আলোচনায় অবশ্য ইতিমধ্যেই রাজ্যসভার আতঙ্কের প্রসঙ্গ এসেছে। দলের এক সাংসদের মন্তব্য, ‘‘নরেন্দ্র মোদীর সরকারের বিরুদ্ধে দু’বছর ধরে খুব ভাল লড়াই হচ্ছে রাজ্যসভায়। আগামী দিনে সেখানেই বামপন্থীদের শক্তি কমে যাওয়া অত্যন্ত উদ্বেগজনক ঘটনা হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
আরও পড়ুন