সাধক-শিল্পী কালাচাঁদ দরবেশ প্রয়াত

গত দেড় মাস ধরে বাংলার বাউল, ফকিরি, দরবেশি- মহাজনী সঙ্গীত মহলে একের পর শোক সংবাদ বয়েই চলেছে। গত ১১ অক্টোবর অকালে চলে গিয়েছিলেন কেঁদুলির তারক খ্যাপা।

Advertisement

পিনাকী বন্দ্যোপাধ্যায়

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৩ ডিসেম্বর ২০১৭ ১৫:৩৪
Share:

বাংলা দরবেশি গান তার শেষ শিল্পীকে হারাল। ছবি: দেব চৌধুরীর ফেসবুকের সৌজন্যে।

বাংলার দরবেশি গানের কিংবদন্তি শিল্পী এবং সাধক কালাচাঁদ দরবেশ আর নেই। বয়সজনিত অসুস্থতায় ভুগছিলেন অনেক দিন থেকেই। শেষ কিছু দিন শয্যাশায়ী ছিলেন জলপাইগুড়ির ধূপগুড়ির বাড়িতেই। আজ, রবিবার সকাল ৭টা নাগাদ, ৮৫ বছর বয়সে চলে গেলেন তিনি। অনেকের মতে, বাংলা দরবেশি গান তার শেষ শিল্পীকে হারাল। আজ তাঁর শেষকৃত্য ধূপগুড়িতে।

Advertisement

গত দেড় মাস ধরে বাংলার বাউল, ফকিরি, দরবেশি- মহাজনী সঙ্গীত মহলে একের পর শোক সংবাদ বয়েই চলেছে। গত ১১ অক্টোবর অকালে চলে গিয়েছিলেন কেঁদুলির তারক খ্যাপা। ১২ নভেম্বর আচমকাই, মস্তিষ্কের রক্তক্ষরণে, মারা গেলেন দুবরাজপুর ফকিরডাঙার লিয়াকত আলি। আজ রবিবার, বর্ধমানের গোগলায়, সেই লিয়াকতের স্মরণসভা শুরুর আগে খবর পৌঁছল, কালাচাঁদ দরবেশও আর নেই।

ধূপগুড়িরই এক স্কুলে প্রধান শিক্ষক ছিলেন এক সময়। তার মধ্যেই চলেছে নিজস্ব সাধনা। সারা বাংলা তো বটেই, কালাচাঁদের গানে মোহিত হয়েছে দেশের নানা প্রান্ত। ইংল্যান্ড, স্কটল্যান্ড, ফ্রান্স থেকে শুরু করে মরক্কো- অনেক দেশে আপ্যায়িত হয়েছেন, গান শুনিয়েছেন, শুনিয়েছেন দরবেশি দর্শনের কথা। ১৯৯০ সালে লন্ডনের ভারত মেলায় কালাচাঁদের সঙ্গে সঙ্গত করেছিলেন জাকির হোসেন। সে অনুষ্ঠানে সঞ্চালনার দায়িত্বে ছিলেন অমিতাভ বচ্চন। ওই বছরই ব্রিটেনের গ্লাসগো ইউনিভার্সিটিতে দরবেশি গান, দরবেশি জীবনযাপন এবং দর্শন নিয়ে একটি ওয়ার্কশপ করেন তিনি। বক্তৃতাও দেন। এর কিছু দিন আগে কালাচাঁদ কাজ করেছেন রবিশঙ্করের সঙ্গেও।

Advertisement

আরও পড়ুন: বিজেপিকে রুখতে অখিলেশ চান মমতাকে

জীবনভর সম্মান, স্বীকৃতি কম পাননি। কিন্তু ক’বছর আগে পর্যন্তও, শরীর যত দিন দিয়েছে, তাঁকে দেখা গিয়েছে ট্রেনে ট্রেনে উঠে গান শোনাতে, মাধুকরী করতে। তাঁর জীবন নিয়ে একটি পূর্ণদৈর্ঘের তথ্যচিত্রও আছে, যার পরিচালক দেব চৌধুরী। কেন্দ্র এবং রাজ্য সরকারের থেকেও পেযেছেন নানা সম্মান। কিন্তু এত সব কিছুও বদলাতে পারেনি তাঁর অনাড়ম্বর জীবনযাপনকে। বিচ্যুত করতে পারেনি তাঁর সাধনার পথ থেকে।

প্রয়াত কালাচাঁদ দরবেশের শেষকৃত্য ধূপগুড়িতে।—নিজস্ব চিত্র।

লোকসঙ্গীত বিশেষজ্ঞ লীনা চাকির কথায়, “কালাচাঁদ দরবেশ চলে যাওয়া মানে দরবেশি গানের সেই সুর আর মেজাজ বাংলার মানুষ শুনতে পাবেন না। এই গানের শেষ মানুষটা চলে গেলেন। বাংলার অফুরন্ত ক্ষতি হয়ে গেল।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন