ছাত্রদের মতোই পেঁচাও কথা শোনে শিক্ষকের

ছকে বাঁধা পড়ার মধ্যেই পড়ুয়াদের সৃজনশীল চিন্তাকে উৎসাহ দিতে এবং যাদের প্রকাশ্যে লিখতে লজ্জা, তাদের জন্য বসান ‘আইডিয়া বক্স’।, যা খুলতেই বেরিয়ে এসেছে সোলার শক্তিতে চলা ট্রেন ও গাড়ির নকশা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৬ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০২:৫৩
Share:

রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ জাতীয় শিক্ষক পুরস্কার দিলেন সুভাষচন্দ্র দত্তকে।। নিজস্ব চিত্র

তার পড়ুয়াদের মতোই পাখিটাও তাঁর কথা শোনে। পাখি আবার যে-সে নয়, একেবারে লক্ষ্মী পেঁচা। হেডস্যর বললে সে শিস দেয়, উড়ে এসে দাঁড়ে বসে। যাঁর নির্দেশে পাখিটি এ সব করে, বর্ধমানের কাঞ্চননগরের দীননাথ দাস উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সেই সুভাষচন্দ্র দত্তকে এ দিন জাতীয় শিক্ষক পুরস্কার দিলেন রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ। প্রাথমিক ভাবে পশ্চিমবঙ্গ থেকে ছ’জন শিক্ষককে বাছা হলেও চূড়ান্ত পর্যায়ে পুরস্কার পেলেন সুভাষবাবু।

Advertisement

সুভাষবাবুর বাবা জয়দেব দত্তও ছিলেন শিক্ষক। ১৯৯৬ সালে কাঁকসায় একটি স্কুলে যোগ দেন সুভাষবাবু। ২০০৭ সালে প্রধানশিক্ষক হিসেবে যোগ দেন ডি এন দাস স্কুলে। দায়িত্ব নিয়ে স্কুলের ভগ্নদশা ঠিক করার পাশাপাশি উদ্ধার করেন স্কুলেরই বেদখল হয়ে যাওয়া বেশ কিছুটা জমি। ক্রমশ স্থানীয় মধ্য ও নিম্ন মধ্যবিত্তদের ভরসার জায়গা হয়ে ওঠে স্কুলটি। সুভাষবাবুর কথায়, ‘‘এটা আসলে গোটা স্কুলের সম্মান। আমি প্রতিনিধি মাত্র।’’

ছকে বাঁধা পড়ার মধ্যেই পড়ুয়াদের সৃজনশীল চিন্তাকে উৎসাহ দিতে এবং যাদের প্রকাশ্যে লিখতে লজ্জা, তাদের জন্য বসান ‘আইডিয়া বক্স’।, যা খুলতেই বেরিয়ে এসেছে সোলার শক্তিতে চলা ট্রেন ও গাড়ির নকশা। কেউ আবার বানিয়ে ফেলেছে আস্ত একটি ড্রোন। সুভাষবাবুর কথায়, ‘‘ওই পড়ুয়ার লক্ষ্য হল, ড্রোন দিয়ে ঘর রঙ করবে সে।’’ নিত্যনতুন ভাবনায় এসেছে সাফল্য। জেলা থেকে রাজ্যস্তর— বিজ্ঞানের বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় পুরস্কার এনেছে পড়ুয়ারা।

Advertisement

স্কুল চত্বরেই বসেছে ‘বায়ো ডাইভারসিটি বক্স’ এবং পাখির বাসা। আপাতত পায়রার সঙ্গে পেঁচাদের সহাবস্থান সেখানে। সুভাষবাবু বলেন, ‘‘আগে ইঁদুর এসে মিড-ডে মিলের চাল খেয়ে যেত। যখন তখন বেরিয়ে পড়ত সাপ। বাদুড় এসে দেওয়াল নোংরা করত। কিন্তু পেঁচা আসার পরে সব কমে গিয়েছে।’’ দু’টি পেঁচার মধ্যে একটি লক্ষ্মী পেঁচা, যা রীতিমতো কথা শোনে সুভাষবাবুর। আজ দিল্লির বিজ্ঞান ভবনে ‘বাধ্য’ পেঁচার ভিডিয়ো দেখিয়ে সুভাষবাবু তাক লাগিয়ে দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি-সহ বাকিদের।

তাঁর স্কুলে অনেকেই প্রথম প্রজন্মের পড়ুয়া। রয়েছে দারিদ্রের হাতছানিও। তাই পড়ার পাশাপাশি হাতে-কলমে কাজ শিখে পড়ুয়ারা যাতে নিজের ও পরিবারের হাল ধরতে পারে, সে জন্যও সক্রিয় হয়েছেন হেডস্যর।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন