স্বনির্ভর গোষ্ঠীর ঋণ বাড়ছে চার গুণ

পঞ্চায়েত ভোট সামনে রেখে স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলিকে ঋণ দানের পরিমাণ চার গুণ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিল সমবায় দফতর। এর জন্য ১৪০০ কোটি টাকা খরচ ধরা হয়েছে।

Advertisement

দেবজিৎ ভট্টাচার্য

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৫ নভেম্বর ২০১৭ ০৩:৫৬
Share:

পঞ্চায়েত ভোট সামনে রেখে স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলিকে ঋণ দানের পরিমাণ চার গুণ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিল সমবায় দফতর। এর জন্য ১৪০০ কোটি টাকা খরচ ধরা হয়েছে। রেজিস্ট্রার অব কো-অপারেটিভ সোসাইটি (আরসিএস) সম্প্রতি এক বিজ্ঞপ্তি দিয়ে সব জেলা সমবায় ব্যাঙ্ক ও প্রাথমিক কৃষি সমবায়গুলিকে ওই নির্দেশ দিয়েছে। কেউ প্রশ্ন তুলেছেন, ঋণের পরিমাণ বাড়ানোর আগে স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলির তা পরিশোধের ক্ষমতা আছে কি না— সে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হয়েছে কি? এই প্রসঙ্গে সরকারি কর্তাদের একাংশের দাবি, ঋণ শোধের ক্ষেত্রে স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলির রেকর্ড বরাবরই ভাল।

Advertisement

আরসিএসের নির্দেশিকায় আছে, এ বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলির যে পরিমাণ টাকা সমবায়ে গচ্ছিত রয়েছে, তার চার গুণ যাতে তারা ঋণ পেতে পারে, সেই ব্যবস্থা করতে হবে। কর্তাদের অনেকেই বলেছিলেন, একটি গোষ্ঠীকে ঋণ দিলে ১০-১২টি পরিবার উপকৃত হয়। পঞ্চায়েত ভোটের আগে সেই সুযোগটাই কাজে লাগাতে চাইছে শাসক দল। তবে সমবায়মন্ত্রী অরূপ রায়ের বক্তব্য, ‘‘সারা বছরই ঋণ দিই। গ্রামীণ পরিস্থিতির উন্নয়নে স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলিকে সক্ষম করাই আমাদের লক্ষ্য। এর সঙ্গে পঞ্চায়েত ভোটের কোনও সম্পর্ক নেই।’’

স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলিকে ঋণ দানের পরিমাণ প্রতি বছরই বাড়িয়েছে সমবায় দফতর। যেমন— ২০১৪-১৫ আর্থিক বছরে ৪১৭ কোটি টাকা ঋণ দেওয়া হয়েছিল, পরের বছর ৪৮৮ কোটি টাকা এবং ২০১৬-১৭ সালে ৫২২ কোটি টাকা। তা বলে এক ধাক্কায় চার গুণ? মন্ত্রী বলেন, ‘‘স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সংখ্যা বাড়ছে। ফলে আমাদেরও ঋণের পরিমাণ বাড়াতে হয়েছে।’’ সমবায় দফতরের অধীনে দু’লক্ষের কাছাকাছি স্বনির্ভর গোষ্ঠী রয়েছে। এর ৯৮% মহিলারাই চালান। মূলত প্রাথমিক কৃষি সমবায়ের (প্যাকস) মাধ্যমে স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলিকে ঋণ দেওয়া হয়। সাত শতাংশ সুদে ঋণ পায় তারা। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ঋণ শোধ করতে পারলে সুদের তিন শতাংশ টাকা নগদে স্বনির্ভর গোষ্ঠীর অ্যাকাউন্টে ফিরিয়ে দেওয়া হয়।

Advertisement

আইআইএম কলকাতার শিক্ষক অনুপ সিংহ মনে করেন, ঋণের পরিমাণ বাড়ানোর আগে তা ফেরত দেওয়ার ক্ষমতা ও সুযোগ গোষ্ঠীগুলির আছে কি না— তা দেখা উচিত। সেই জন্যই ঋণ দেওয়ার আগে আবেদনকারীর উপার্জন সংক্রান্ত তথ্য যাচাই করে দেখে ঋণদানকারী সংস্থাগুলি। ‘‘আর তা না করে যদি কেবল পাইয়ে দেওয়ারই উদ্দেশ্য থাকে, তা হলে একে অনুদান বলাই ভাল। যেমন ক্লাবগুলিকে টাকা দিচ্ছে সরকার’’— বলছেন অনুপবাবু।

সরকারের বক্তব্য, স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলিকেই ঋণ দিতে বেশি আগ্রহী প্যাকসগুলি। এক সমবায়কর্তার কথায়, ‘‘ছোট ব্যবসায়ী ও কৃষকদেরও ব্যক্তিগত ভাবে প্যাকস থেকে ঋণ দেওয়া হয়। কিন্তু বহু ক্ষেত্রে সেই ঋণ আদায়ে নাজেহাল হতে হয়। স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলির শোধে আগ্রহ বেশি। যেখানে গত আর্থিক বছরে ব্যক্তিগত ঋণ আদায়ের পরিমাণ ৩০ শতাংশেরও কম, সেখানে এই গোষ্ঠীগুলি মোট ঋণের ৮৯.৬৬% টাকা শোধ করেছে। সেই মূল্যায়নেই ঋণের পরিমাণ বাড়ানো হয়েছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন