Padma River

চার দিন ধরে পদ্মাদেবীর পুজোয় মাতেন ভাঙন দুর্গতেরা

গঙ্গা ও পদ্মা নদী আলাদা হয়ে গিয়েছে শমসেরগঞ্জের ধুসুরিপাড়া থেকে কিছুটা দূরে। পদ্মা নদীর নামে এখানে দেবীর নামকরণ। আশ্বিন মাসে শুক্লপক্ষে ষষ্ঠী থেকে দশমী— চার দিন ধরে এই পুজো হয়।

Advertisement

জীবন সরকার 

শমসেরগঞ্জ শেষ আপডেট: ০৮ অক্টোবর ২০২৩ ০৮:১৭
Share:

—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

গঙ্গার ভাঙনে বাড়িঘর, ভিটে-মাটি খুইয়েছেন ওঁরা। প্রতি বছর বর্ষায় ফুঁসতে থাকা নদী যত এগিয়েছে, একটু একটু করে সরে এসেছেন তাঁরা। এক সময় গ্রামের প্রাচীন মন্দিরে আশ্রয় নিয়েছিলেন মুর্শিদাবাদের শমসেরগঞ্জের ধুসুরিপাড়ার ভাঙন দুর্গতেরা। গঙ্গা থেকে প্রায় ৫০০ মিটার দূরে ওই মন্দির অক্ষত থাকবে, এই বিশ্বাসে তাঁরা নিশ্চিন্ত ছিলেন। প্রশাসন কোনও ব্যবস্থা না নেওয়ায় সেই মন্দিরও ২০২০ সালে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়। নতুন করে মন্দির গড়ে অধিষ্ঠাত্রী পদ্মাদেবীকে পুজো করছেন ভাঙন দুর্গতেরা।

Advertisement

গঙ্গা ও পদ্মা নদী আলাদা হয়ে গিয়েছে শমসেরগঞ্জের ধুসুরিপাড়া থেকে কিছুটা দূরে। পদ্মা নদীর নামে এখানে দেবীর নামকরণ। আশ্বিন মাসে শুক্লপক্ষে ষষ্ঠী থেকে দশমী— চার দিন ধরে এই পুজো হয়। কত দিন আগে, কে এই পুজো শুরু করেছিলেন, গ্রামবাসীরা কেউ-ই বলতে পারেন না। তবে তাঁদের দাবি, পুজো তিনশো বছরেও বেশি পুরনো। প্রবীণেরা জানান, পদ্মা নদীর ধারে বিশালাকার এক মন্দিরে এক সময় এই পুজো হত। বসত মেলা। সব ধর্মের মানুষ তাতে যোগ দিতেন। ভাঙনে মন্দির ধ্বংস হয়ে যাওয়ার পর গ্রামের একটি জায়গায় নতুন করে মন্দির নির্মাণ করা হয়েছে। সেখানেই এখন পুজো হচ্ছে। স্থানীয় বাসিন্দা তরুণ সরকার বলেন, ‘‘পদ্মার ভাঙনের হাত থেকে দেবী রক্ষা করবেন— এই বিশ্বাসে পুজো শুরু হয়েছিল। দেবী দুর্গার আরাধনার সময়ে মা পদ্মাও পূজিত হন। এক সময় এই পুজো দেখতে পড়শি জেলা থেকেও লোকজন আসতেন। এখন সে সব অতীত। কোনও রকমে টিমটিম করে পুজো হচ্ছে।’’

গত চার বছর ধরে বর্ষার সময় শমসেরগঞ্জের হিরানন্দপুর, প্রতাপগঞ্জ, মহেশটোলা, ধানঘড়া, শিবপুর, ধুসুরিপাড়ায় ভাঙন হচ্ছে। বর্তমানে এই সব গ্রামের অধিকাংশই নদীগর্ভে চলে গিয়েছে। ভাঙন চলছেই। শুক্রবারও উত্তর চাচণ্ড গ্রামে গঙ্গা তীরবর্তী এলাকায় ৫০০ মিটার জমিতে ফাটল ধরেছে। আতঙ্কে ঘুম নেই বাসিন্দাদের। তার মধ্যেও কয়েকটি পরিবার এখনও অন্যত্র চলে যায়নি। তারাই উদ্যোগী হয়ে এই পুজো করছে। গ্রামের প্রবীণ বাসিন্দা অপূর্ব মণ্ডল বলছিলেন, ‘‘আমাদের অভাবের শেষ নেই। খোলা আকাশের নীচে রাত কাটে। তবে পুজোর চার দিন সে সব ভুলে যাই। ভাঙনে গ্রামের যাঁরা অন্যত্র চলে গিয়েছেন, তাঁরাও এই সময় গ্রামে আসেন। সকলে মিলে হইহই করে চার দিন কেটে যায়।’’

Advertisement
(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন