Lok Sabha Election 2019

টাকা-কাণ্ডে পুলিশের বিরুদ্ধে সরব ভারতী, রিপোর্ট তলব কমিশনের

রবিবার ঘাটালে ভোট। ঘটনার সূত্রপাত বৃহস্পতিবার গভীর রাতে। পুলিশ-প্রশাসনের দাবি, রাত ১১টা নাগাদ পিংলার মুণ্ডমারিতে তল্লাশি চলাকালীন আটকানো হয় ভারতীর গাড়ি।

Advertisement

দেবমাল্য বাগচী

পিংলা শেষ আপডেট: ১১ মে ২০১৯ ০২:২৮
Share:

পিংলার মণ্ডলবাড়ে গাড়ি আটকানোর পরে পুলিশের সঙ্গে বচসা ভারতী ঘোষের। বৃহস্পতিবার রাতে। —নিজস্ব চিত্র।

প্রচারে এসে তাঁকে ‘টাকার নেতা’ বলে বিঁধেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ভোটের আগে শেষবেলায় ঘাটালের সেই বিজেপি প্রার্থী ভারতী ঘোষের গাড়ি থেকে টাকা উদ্ধার ঘিরে বাধল ধুন্ধুমার। টাকার অঙ্ক, টাকা কার কাছে ছিল, নিয়ম মানা হয়েছে কি না— এ সব নিয়ে পুলিশ-প্রশাসন এবং প্রাক্তন আইপিএসের দাবি-পাল্টা দাবিতে চড়ল পারদ।

Advertisement

কাল, রবিবার ঘাটালে ভোট। ঘটনার সূত্রপাত বৃহস্পতিবার গভীর রাতে। পুলিশ-প্রশাসনের দাবি, রাত ১১টা নাগাদ পিংলার মুণ্ডমারিতে তল্লাশি চলাকালীন আটকানো হয় ভারতীর গাড়ি। পিছনে আরও তিনটি গাড়ি। নাকা পেরিয়ে চারটি গাড়ি এগিয়ে মণ্ডলবাড়ের কাছে যেতে ফের কনভয় আটকানো হয়। ঘন্টা চারেকের তল্লাশিতে ভারতীর জিম্মা থেকে প্রায় ১ লক্ষ ১৩ হাজার টাকা বাজেয়াপ্ত করা হয়। ম্যাজিস্ট্রেট তপন জানা ভিডিয়োগ্রাফি করেন।

প্রাথমিক ভাবে পুলিশ দাবি করেছিল, চারটি গাড়িতে প্রায় দু’কোটি টাকা ছিল। বাকি টাকা কোথায়? পুলিশের ব্যাখ্যা, তল্লাশির সময় বচসা চলাকালীন টাকা সরানো হয়েছে। ভারতীর প্রতিপক্ষ ঘাটালের তৃণমূল প্রার্থী দেবও বলছেন, ‘‘আমার কাছে খবর আছে, এর চেয়েও অনেক বেশি টাকা ওঁর কাছে ছিল। ধরা পরার মুহূর্তে সেই টাকাগুলো কোনও ভাবে সরিয়ে ফেলা হয়।’’

Advertisement

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

সোনা প্রতারণা, টাকা লুটের একাধিক মামলায় বিদ্ধ ভারতী। এই ঘটনা অবশ্য পুরোটাই সাজানো বলে দাবি তাঁর। বাকবিতণ্ডার পরে ‘সিজার লিস্টে’ সই না করেই ভোররাতে ঘটনাস্থল ছাড়েন তিনি। ভারতীর দাবি, বাজেয়াপ্ত হওয়া টাকা তাঁর একার নয়। গাড়িতে একটা ব্যাগে তাঁর ৫০ হাজার টাকা ছিল। নির্বাচনী আহ্বায়ক তপন মাইতির কাছে ৪৯ হাজার টাকা ও গাড়ির চালক মুকেশ রাইয়ের কাছে ছিল ১৪ হাজার টাকা। প্রাক্তন পুলিশ সুপারের অভিযোগ, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী মেদিনীপুর সফরে এসেই নির্দেশ দিয়ে গিয়েছিলেন। সেই মতো আক্রান্ত দলীয় কর্মীদের দেখে ফেরার পথে গাড়ি দাঁড় করিয়ে পুলিশ বলে, আপনাদের সব টাকা এক জায়গায় রাখুন। কালো ব্যাগে তিনজনের টাকা রাখি। তখন গাড়ি ছেড়ে দেয়। পরে আবার পথ আটকে ভিডিয়ো চালু করে আমার ব্যাগ থেকে জিনিস নামিয়ে টাকা গোনা হয়।” সিজার লিস্টে সই করেননি কেন? ভারতীর জবাব, “যদি তিনজনের কাছে টাকা থাকে তবে তিনজনই সই করবে। কিন্তু ওরা চাপ দিচ্ছিল শুধু আমাকেই সই করতে হবে।”

অনিয়মের অভিযোগ মানতে নারাজ পুলিশ-প্রশাসন। পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলা পুলিশ সুপার অলোক রাজোরিয়া বলেন, “নাকা চলাকালীন মুণ্ডমারিতে ভারতী ঘোষের গাড়ি আটকে তল্লাশি করা হচ্ছিল। আমাদের ভিডিয়ো ক্যামেরা কেড়ে সব ছবি মুছে উনি চলে যাচ্ছিলেন। আমরা পরে মণ্ডলবাড়ে ওঁকে আটকে অনুমতি নিয়েই তল্লাশি চালাই।” পুলিশের কাজে বাধা, হুমকি-সহ একাধিক ধারায় ভারতীর বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। তার মধ্যে জামিন অযোগ্য ধারাও রয়েছে।

ভারতীর টাকা-কাণ্ডে রিপোর্ট তলব করেছে নির্বাচন কমিশনও। একই সঙ্গে কমিশন সূত্রের দাবি, ভোটের সময়ও যে যত খুশি টাকা নিয়ে ঘুরতেই পারেন। তবে সঙ্গে উপযুক্ত নথিপত্র থাকতে হবে। একমাত্র আকাশথে যাতায়াতের ক্ষেত্রে ৫০ হাজারের বেশি টাকা নিয়ে যাওয়া যাবে না। তবে ভোটের ৪৮ ঘণ্টা আগে এলাকায় নির্বাচনের কাজে কোনও টাকা ব্যবহার করা যাবে না। ভারতীর দাবি, তাঁর কাছে টাকার নথিপত্র ছিল। কিন্তু পুলিশ তা দেখতে চায়নি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন