—ফাইল চিত্র।
ভোটের উত্তপ্ত দুপুরে তিনিও গুড়ের বাতাসা আর ঠান্ডা জল বিলির বন্দোবস্ত করেছেন। ভোটার থেকে বিরোধী, এমনকি ‘প্রয়োজন’-এ নির্বাচনকর্মী, আধাসেনা— সকলকেই বিলোবেন সেই জল- বাতাসা।
‘অনুব্রত মডেল’-এর এই অনুসরণকারী হলেন কামারহাটি পুরসভার চেয়ারম্যান পারিষদ বিমল সাহা। যিনি বলছেন, ‘‘আমি স্বাস্থ্য দফতরের চেয়ারম্যান পারিষদ। এত রোদে, ভোটের সময় নাগরিকদের শরীরের দিকেও তো নজর রাখা আমার কর্তব্য। তাই একটু বাতাসা আর জল খাইয়ে সকলের পেট ও মাথা ঠান্ডা রাখার চেষ্টা করছি।’’
দমদম লোকসভা কেন্দ্রের প্রার্থী সৌগত রায়ের সমর্থনে কামারহাটির ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের ওই তৃণমূল কাউন্সিলর রবিবার সকালে নিজের এলাকায় খোল-করতাল সহযোগে কীর্তনের দল নিয়ে নগর পরিক্রমায় বেরিয়েছিলেন। ছোট ও বড় মিলিয়ে প্রায় ৫০০ কেজি বাতাসা বানিয়েছেন অর্ডার দিয়ে। বেতের ধামা আর ঝুড়িতে সেই বাতাসা নিয়ে পথচলতি মানুষ, গাড়িচালক, বাসিন্দাদের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। বাতাসা মুখে পোরার পরেই মুখের সামনে ধরা হয়েছে জলের বোতল। বিমল বলেন, ‘‘এটা ট্রায়াল হল। ভোটের দিন সব ক্যাম্পেই ফাইনাল ব্যবস্থা থাকবে।’’
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
তৃণমূলের বীরভূম জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের গুড়-বাতাসার ‘ফর্মুলা’ এখন পুরনো। এ বারের ভোটে তাঁর নিদান ‘নকুলদানা’। কামারহাটিতে গুড়ের তৈরি বিশেষ আয়তনের বাতাসা ও জল বিতরণের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন যিনি, সেই বিমলবাবু কি তা হলে ‘অনুব্রত নম্বর-২’?
প্রশ্ন শুনেই হেসে ফেললেন হলুদ পাঞ্জাবি, সাদা টুপি পরা, ঢেউ খেলানো চুলের বিমলবাবু। বললেন, ‘‘অনুব্রত মণ্ডল আমাদের নেতা। আগে ওঁর সঙ্গে যোগাযোগ ছিল। ইদানীং তেমনটা নেই। কিন্তু উনি মিষ্টি ভাষায় যে-ভাবে ভোটের প্রচার করেন, তা শিক্ষণীয়। তাই ওঁকে কিছুটা অনুকরণ করি।’’ অনুব্রতের অনুকরণ আগেও করেছেন বিমল। গত বিধানসভা ভোটে অনুব্রত যখন লাল মাটিতে চড়াম চড়াম ঢাক বাজানোর ডাক দেন, কামারহাটিতে ভোটের দিন সকালে গ্লুকোজের জল বিলোতে দেখা গিয়েছিল বিমল ও তাঁর বাহিনীকে। সেখানে দেখা মিলেছিল অনুব্রতের ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত বীরভূমের তৃণমূল নেতা আশিস দে-র। পরে অবশ্য সংবাদমাধ্যমের চোখে পড়ে যাওয়ায় কামারহাটি ছাড়েন আশিস।
বাতাসা বিলির পরে নিজের ওয়ার্ড অফিসে বসে মুখে একটা বাতাসা পুরে এক চুমুক জল খেয়ে বিমল বললেন, ‘‘বাতাসা ভেজানো জল বিজেপি আর সিপিএমের খুব দরকার। পেট আর মাথা খুব গরম হয়ে যাওয়ায় উল্টোপাল্টা বকছেন। তাই ওঁদেরও শরীর ভাল রাখতে খাওয়াব।’’
কিন্তু বাতাসা-জল কি নির্বাচনী বিধি ভাঙছে না? ‘‘বাড়িতে অতিথি এলেও তো জল-বাতাসা দিই। বিরোধীদের দিলে অন্যায় কোথায়? নির্বাচনকর্মী, আধাসেনাকেও দেব। পেট-মাথা ঠান্ডা থাকলে তবেই তো নির্বাচন শান্তিপূর্ণ হবে,’’ অনুব্রত-ঢঙে জবাব বিমলের।
দমদমের বিজেপি প্রার্থী শমীক ভট্টাচার্যের তির্যক উক্তি, ‘‘অনুব্রতই তো দেখছি এখন রোল মডেল! তাঁর ডায়ালগ যদি কর্মীদের কাছে এত জনপ্রিয়, তা হলে তো তাঁকেই উপমুখ্যমন্ত্রী করে দিলে ভাল হয়।’’
জল-বাতাসার উপকারিতা বোঝাতে সুগারের রোগী বিমল বলেন, ‘‘৪ জ্যৈষ্ঠ ভোটের দিন মালুম হবে, জল-বাতাসা কত উপকারী।’’