সমস্যা বহু, তবু প্রত্যয়ী অরূপ 

হুগলি, আরামবাগ এবং শ্রীরামপুর— হুগলির তিনটি লোকসভা আসনেই এ বার চতুর্মুখী লড়াই।

Advertisement

গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায়

চুঁচুড়া শেষ আপডেট: ০৬ মে ২০১৯ ০৪:১৫
Share:

অরূপ বিশ্বাস। —নিজস্ব চিত্র।

জেলার তিনটি কেন্দ্রই ধরে রাখতে হবে। বাড়াতে হবে জয়ের ব্যবধানও। সেই লক্ষে প্রচারের শেষ লগ্ন পর্যন্ত হুগলিতে মাটি কামড়ে পড়ে ছিলেন তৃণমূল বিধায়ক, মন্ত্রী তথা দলের তরফে নিযুক্ত জেলা পর্যবেক্ষক অরূপ বিশ্বাস। তবে তাঁর কাজ যে সহজ নয়, তা শোনা যাচ্ছে জেলা তৃণমূলের অন্দরে কান পাতলেই। কারণ, লড়াই ঘরে-বাইরে।

Advertisement

হুগলি, আরামবাগ এবং শ্রীরামপুর— হুগলির তিনটি লোকসভা আসনেই এ বার চতুর্মুখী লড়াই। হুগলি কেন্দ্রের পান্ডুয়ায় গত বিধানসভা ভোটে তৃণমূল প্রার্থী, ফুটবলার রহিম নবি হেরে গিয়েছিলেন সিপিএমের আমজাদ হোসেনের কাছে। স্থানীয় নেতৃত্বের কাউকে প্রার্থী না-করায় সেই সময় শাসকদলের কোন্দল রাস্তায় নেমে এসেছিল। সম্প্রতি মহানাদের জনসভায় বিধানসভায় হার নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী তাঁর আপেক্ষ চেপে রাখেননি। সংখ্যালঘু এবং আদিবাসী অধ্যুষিত এই বিধানসভায় তৃণমূলের সাংসদ রত্না দে নাগ ঠিক কত ভোটে ‘লিড’ পাবেন, জেলা পর্যবেক্ষকের অন্যতম মাথাব্যথার কারণ এখন সেটা।

শ্রীরামপুর লোকসভার চাঁপদানি বিধানসভা এলাকা রয়েছে কংগ্রেসের দখলে। ওই বিধানসভায় এ বার কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় ঠিক কত ভোটে বিজেপি প্রার্থী দেবজিৎ সরকারের থেকে এগিয়ে থাকবেন, তা নিয়ে ইতিমধ্যেই জল্পনা শুরু হয়ে গিয়েছে। কারণ, মিশ্র ভাষাভাষির এই এলাকায় এ বার তৃণমূল শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখে। তার উপর জুটমিল অধ্যুষিত দু’টি ওয়ার্ডের বাসিন্দারা কতটা বুথমুখী হবেন, সে প্রশ্নও রয়েছে। কারণ, জুটমিল খোলা-বন্ধ নিয়ে ক্ষুব্ধ শ্রমিকেরা।

Advertisement

হুগলি কেন্দ্রের মধ্যে সাহাগঞ্জের ডানলপ কারখানাও বন্ধ দীর্ঘদিন। ভোটে যে এর প্রভাব পড়তে পারে তা জানেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাই তিনি ক’দিন আগেই ভদ্রেশ্বরে এসে ওই কারখানা না-খোলার জন্য দুষেছেন কেন্দ্রকে। মুখ্যমন্ত্রী বিলক্ষণ জানেন, স্থানীয় স্তরে ডানলপ বন্ধের সার্বিক প্রভাব পড়তে পারে শাসকদলের ভোটের বাক্সে। বিরোধী প্রার্থী, বিজেপির লকেট চট্টোপাধ্যায় বারবারই সেই প্রসঙ্গ টানছেন প্রচারে। বুধবার চুঁচুড়ায় বিজেপির এক জনসভায় অমিত শাহও শ্লেষের সুরে বলেন, ‘‘হুগলিতে কোনও কল-কারখানা খোলা নেই। একমাত্র বোমার কারখানা চালু আছে।’’

এ সবের সঙ্গে অরূপবাবুকে সামলাতে হচ্ছে দলের অন্দরের সমস্যাও। উঠছে একের পর এক প্রশ্ন। গোঘাটের শেখ ফরিদ আর শেখ আতাউলের মধ্যে যে সমস্যা রয়েছে তার হাল কী? সেখানকার বিধায়ক মানস মজুমদার দু’পক্ষকে বুঝিয়ে-সুঝিয়ে ‘ম্যানেজ’ করেছেন তো? তারকেশ্বরের পুরপ্রধান স্বপন সামন্ত আর উপ-পুরপ্রধান উত্তম কুণ্ডুর মধ্যে সমঝোতা ঠিক আছে তো? পান্ডুয়ার আনিসুল ইসলাম, অসিত মজুমদার, সঞ্জয় বিশ্বাসের মধ্যে যে চিড় ছিল, তা মেরামত করা গিয়েছে তো?

এই সব প্রশ্নের উত্তরে রাজ্যের ক্রীড়ামন্ত্রী গোঘাট থেকে উত্তরপাড়া, উত্তরপাড়া থেকে পান্ডুয়ার খন্যানে ছুটে বেড়াচ্ছেন। কিন্তু হুগলির তিনটি কেন্দ্রের ফলের হিসেব অরূপবাবু মেলাতে পারবেন? তাঁর এই দৌড় সেই প্রশ্নই তুলে দিয়েছে। অরূপবাবু অবশ্য দাবি করেন, ‘‘প্রতিটি লোকসভায় আমাদের ব্যবধান গতবারের চেয়ে ন্যূনতম এক লক্ষ করে বাড়বে।’’ তা শুনে বিজেপির ওবিসি মোর্চার রাজ্য সভাপতি স্বপন পালের কটাক্ষ, ‘‘দলীয় কোন্দল ম্যানেজ করতে অরূপবাবুর কালঘাম ছুটছে। এখন ওঁদের সামনে হুগলি এবং শ্রীরামপুর লোকসভার আসন ধরে রাখার লড়াই।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন