শনিবার বিকেলের বিমানে কলকাতা ফিরে রাজ্য বিজেপি দফতরে যাওয়ার কথা অর্জুনের। ছবি: পিটিআই।
যাঁদের হাত ধরে তিনি জোড়াফুল থেকে পদ্মশিবিরে গেলেন, সেই নেতারা এবংতাঁর সতীর্থরা ফিরে এসেছেন। কিন্তু গেরুয়া শিবিরে যোগ দেওয়ার২৪ ঘণ্টা পরেও দিল্লি থেকে রাজ্যে ফেরেননিভাটপাড়ার বিধায়ক অর্জুন সিংহ। বরং রাজ্য সরকারের দেওয়া নিরাপত্তা আর না থাকায় শুক্রবার বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহ এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহের সঙ্গে দেখা করে নিরাপত্তা চাইলেন ব্যারাকপুরের এই ‘বাহুবলী’ নেতা।
আজ, শনিবার বিকেলের বিমানে কলকাতা ফিরে রাজ্য বিজেপি দফতরে যাওয়ার কথা অর্জুনের। আর এ দিনইভাটপাড়ার বিধায়ক ও ভাটপাড়া পুরসভার চেয়ারম্যান অর্জুনকে ছ’বছরের জন্য সাসপেন্ড করল তৃণমূল। অর্জুনের বিজেপি-যাত্রার মোকাবিলায় উত্তর ২৪ পরগনার তৃণমূল নেতৃত্বকে একসঙ্গে ময়দানে নামতে হয়েছে। এ দিন তপসিয়ার তৃণমূল ভবনে অর্জুনের বিরুদ্ধে গোষ্ঠীর কয়েক জন তৃণমূলে যোগ দানের পরে তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘অন্য দলের অনেক নেতা-কর্মীই তৃণমূলে যোগ দিতে চাইছেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবি নিয়ে ভোটে জিতে যাঁরা নেতা হয়েছেন, তাঁরা পিছন থেকে ছুরি মারলেন। তাঁদের বিরুদ্ধে স্বতঃস্ফূর্ত বিক্ষোভই এই যোগদান।’’ভাটপাড়ায় তৃণমূলের সাংগঠনিক সব কমিটি ভেঙে দেওয়া হয়েছে। এ দিন যাঁরা সিপিএম, কংগ্রেস এবং বিজেপি থেকে তৃণমূলে যোগ যোগ দিলেন, জেলার নির্বাচনী কমিটিতে তাঁদের রাখা হয়েছে।
আর এলাকায় অর্জুনের না ফেরা নিয়ে দিনভরই নানা জল্পনা চলেছে। যদিও অর্জুন নিজে বলছেন, “দিল্লিতে আমার কিছু কাজ রয়েছে। সেটা শেষ করে শনিবার বিকেল চারটেতে কলকাতায় ফিরব। কয়েক দিনের মধ্যেই বিধায়ক পদে ইস্তফা দেব। বিজেপি প্রার্থী হিসেবে লড়তে গেলে তৃণমূলের বিধায়ক তো থাকা যাবে না।’’
অর্জুনের কোনও কোনও অনুগামী বলছেন, “দিল্লিতে বসে নেতাজি (এলাকায় অর্জুনকে এই নামেন ডাকেন তাঁর ঘনিষ্ঠেরা) আসলে জল মাপছেন।” অর্জুনের ছায়াসঙ্গী গুড্ডু সিংহ বলছেন, “নেতাজিবিজেপিতে যোগ দেওয়ার পরেই পুলিশ তাঁর ঘনিষ্ঠদের নানাভাবে হেনস্থা করতে শুরু করেছে। অকল্যান্ড জুট মিলের শ্রমিক ইউনিয়নের সম্পাদক জব্বর আনসারিকে বৃহস্পতিবারই পুলিশ তুলে নিয়ে গিয়েছে। তাঁর কোনও খবর নেই।” পুলিশ অবশ্য জানিয়েছে, জব্বরের বিরুদ্ধে পুরনো মামলা ছিল, তাঁকে দীর্ঘদিন ধরেই ডাকা হচ্ছিল। তিনি দেখা করছিলেন না। শুক্রবার তাঁকে ব্যারাকপুর আদালতেও তোলা হয়। অর্জুনের অভিযোগ, তৃণমূল রাজনৈতিক লড়াইয়ে তাঁর সঙ্গে এঁটে উঠতে পারবে না বুঝে তাঁর বিরুদ্ধে পুলিশ লেলিয়ে দিচ্ছে।
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
জগদ্দলের যে মজদুর ভবনে অর্জুনের জনতার দরবার বসত, সেখানে সব সময় ভিড় থিকথিক করত। এ দিন বিকেলে দেখা গেল, সেই ভবন কার্যত জনশূন্য। জোড়াফুলের পতাকার বদলে সে বাড়ির চারদিকে পদ্মফুলপতাকা। গুড্ডু সিং-সহ কয়েকজন রয়েছে অর্জুনের গড়ের পাহারায়। এ দিন পুরসভাও ছিল সুনসান। অর্জুন যদিও দাবি করেছেন, তাঁর সঙ্গে ২২ জন কাউন্সিলর রয়েছেন। এ দিন ব্যারাকপুরের সব পুরসভার কাউন্সিলরদের সঙ্গে বৈঠক করেন ওই আসনের তৃণমূল প্রার্থী দীনেশ ত্রিবেদী। তাঁর দাবি, ‘‘বেশিরভাগ কাউন্সিলরই তৃণমূলের সঙ্গে রয়েছেন।’’