মোবাইলে টাকা রিচার্জ করিয়ে দিন, ফোন কমিশনে

মুর্শিদাবাদে নির্বাচন কমিশনের কমপ্লেন মনিটরিং সেলের টোল ফ্রি নম্বরে আসা ফোনের আবদারে ঘুম ছুটেছে সেলের কর্তাদের।

Advertisement

সামসুদ্দিন বিশ্বাস

বহরমপুর শেষ আপডেট: ০১ এপ্রিল ২০১৯ ০১:১৩
Share:

প্রতীকী ছবি।

এমনটা যে হবে, কে জানত!

Advertisement

ব্যাপারটা অনেকটা দাঁড়িয়ে গিয়েছে সেই উল্টো বুঝলি রামের মতো। মুর্শিদাবাদে নির্বাচন কমিশনের কমপ্লেন মনিটরিং সেলের টোল ফ্রি নম্বরে আসা ফোনের আবদারে ঘুম ছুটেছে সেলের কর্তাদের।

সাগরদিঘির এক যুবক ফোন করে বলেছেন, ‘‘আমার মোবাইলে টাকা শেষ হয়ে গিয়েছে। কিছু টাকা রিচার্জ করিয়ে দেবেন?

Advertisement

কান্দির এক যুবক ফোন করে জানতে চেয়েছেন, ‘‘মুর্শিদাবাদ থেকে ওড়িশার দূরত্ব কত? মুর্শিদাবাদ থেকে কলকাতার দূরত্ব কি আরও বেশি না কম?’’

ডোমকলের এক মহিলা আবার ফোন করে জানিয়েছেন, ‘‘আমার পড়শি এক দম্পতির খুব ঝগড়া চলছে। যে কোনও সময়ে তারা মারপিটে জড়িয়ে পড়তে পারে। একটু ব্যবস্থা নেবেন প্লিজ!’’

নির্বাচন কমিশনের টোল ফ্রি নম্বরে কাজের সঙ্গে সঙ্গে এমন অকাজের ফোনও আসছে বলে প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে।

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

মুর্শিদাবাদের জেলাশাসক পি উলাগানাথন বলছেন, ‘‘ফোনে, সি-ভিজিল অ্যাপে অভিযোগ জানানোর ব্যবস্থা রয়েছে। অভিযোগে পেয়ে দ্রুত ব্যবস্থাও নেওয়া হচ্ছে। তবে সি-ভিজিল অ্যাপে নির্বাচন সংক্রান্ত বিষয় নয় এমন কিছু বিষয়ও আসছে। আবার টোল ফ্রি নম্বরের অপ্রয়োজনীয় ফোন আসছে।’’

নির্বাচন কমিশনের নির্দেশে ২৪ ঘণ্টার কমপ্লেন মনিটরিং সেল তৈরি হয়েছে জেলাশাসকের অফিসে। ‘সি-ভিজিল অ্যাপের’ মাধ্যমেও অভিযোগ জানানো যাচ্ছে। ভোট সংক্রান্ত বিষয়ে যে কোনও অভিযোগ জানানো যেতে পারে। নির্বাচন কমিশনের সেই অভিযোগ দ্রুত খতিয়ে দেখে নিষ্পত্তি করার কথা। এ জন্য জেলাশাসকের অফিসের কন্ট্রোল রুমে ২৪ ঘণ্টা সেই অভিযোগ খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

কমপ্লেন মনিটরিং সেলের কর্মীদের জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ফোন ধরার সময় কোনও ভাবেই মাথা গরম করা যাবে না। যতই অপ্রয়োজনীয় বা হাস্যকর অভিযোগ আসুক না কেন ঠান্ডা মাথায় হাসিমুখে উত্তর দিতে হবে। ক্ষুব্ধ এক কর্মী বলছেন, ‘‘সত্যিই যদি জরুরি বিষয় হয় তা হলে হাসিমুখেই বুঝিয়ে বলা যায়। কিন্তু ফোন রিচার্জ করা কিংবা মুর্শিদাবাদ থেকে ওড়িশার দূরত্ব বলতে গেলে ঠোঁটে হাসি ঝুলিয়ে রাখা কঠিন।’’

কমপ্লেন মনিটরিং সেলের এক কর্মী বলছেন, ‘‘ এক জন ফোন করে জঙ্গিপুর কেন্দ্রের এক রাজনৈতিক দলের প্রার্থীর নাম জানতে চাইছেন। সেই নাম বললাম। তার পরে তাঁর নামের বানান জানতে চাইছেন। বানান করে দিলে সেই বানান ভুল বলছেন। এ ভাবেই কেউ কেউ অভিযোগ জানানোর এই ব্যবস্থার অপব্যবহার করছেন।’’

আর এক কর্মীর কথায়, ‘‘এক জন ফোন করে জানতে চাইছেন, তিনি কী খাবেন— চপ-মুড়ি নাকি মাছভাত? এর কী উত্তর দেওয়া যায়, বলুন তো!’’ সি-ভিজিল অ্যাপেও অনেকে আবার সেলফি তুলেও পাঠিয়ে দিচ্ছেন।

কেউ বাড়ির ছবি, ঘরের সিলিং ফ্যানের ছবি দিয়ে লিখছেন— ‘হাই’। কেউ স্কুলের ক্লাসঘরে পডুয়াদের ছবি দিয়ে লিখেছেন— ‘টেস্টিং’। এ ভাবে কেউ টিভি মেরামতের দোকানের ছবি, কভার ফাইলের ছবিও পাঠিয়েছেন। কেউ বা আবার নিজের ছবি পাঠিয়ে নীচে লিখে দিয়েছেন— ভোটের দিন যেন পরিবহণ ব্যবস্থা সচল থাকে।

জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে সি-ভিজিল অ্যাপে ৯৫টি ছবি-সহ অভিযোগ এসেছে। তার মধ্যে ৭৪টি অভিযোগের ভিত্তি রয়েছে। বাকি ২১টি সেলফি-সহ নানা অপ্রয়োজনীয় ছবি ও কথা। অন্য দিকে, কমপ্লেন মনিটরিং সেলের টোল ফ্রি নম্বরে এখনও পর্যন্ত ৫৮টি অভিযোগ এসেছে। এ ছাড়াও ১১৭টি পরামর্শ এসেছে। তবে কমপক্ষে ৩০টি ফোন কল এসেছে যেগুলির সঙ্গে নির্বাচনের কোনও সম্পর্কই নেই!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন