অজয় নায়েক
পশ্চিমবঙ্গে তৃতীয় দফার ভোটে অশান্তি এড়ানোই চ্যালেঞ্জ ছিল নির্বাচন কমিশনের কাছে। একটি দুর্ভাগ্যজনক মৃত্যু ছাড়া মঙ্গলবার নির্বিঘ্নেই ভোট হয়েছে বলে দাবি কমিশনের। তাদের বক্তব্য, এ ক্ষেত্রে গোলমাল পাকাতে পারে, এমন লোকজনকে কোণঠাসা করেই সাফল্য মিলেছে। এবং এই পরিকল্পনা মূলত করেছিলেন কমিশনের পাঠানো বিশেষ পর্যবেক্ষক অজয় ভি নায়েক।
প্রথম দু’দফার থেকে তৃতীয় দফায় সতর্কতামূলক পদক্ষেপ হিসেবে বেশ কিছু লোককে আগাম গ্রেফতার করেছে পুলিশ। প্রথম দফার নির্বাচনে আগাম পদক্ষেপ হিসেবে গ্রেফতার করা হয়েছিল আট জনকে। দ্বিতীয় দফায় ধৃতের সংখ্যা বেড়ে হয় ৩০। তৃতীয় দফায় এক লাফে তা বেড়েছে কয়েক গুণ। এ দিনের নির্বাচনে আগাম সতর্কতামূলক হিসেবে ২২৪ জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
প্রশাসনিক সূত্রের খবর, এ দিনের ভোটের জন্য মালতীপুর, রতুয়া, ফরাক্কা, ডোমকল, শমসেরগঞ্জ, তপন, ইটাহার-সহ বিভিন্ন জায়গায় সোমবার রাত থেকেই সক্রিয় হয় পুলিশ। গোলমাল পাকাতে পারে, এমন লোকেদের গ্রেফতার করা হতে থাকে। পাশাপাশি, অতীতের নির্বাচনে গোলমাল পাকানোর ঘটনায় যারা অভিযুক্ত, তাদের কোণঠাসা করার নির্দেশ দেয় কমিশন। এ ক্ষেত্রে পুলিশ পর্যবেক্ষকেরা বিশেষ ভূমিকা নেন। এ দিনের ভোটে গোলমাল করতে পারে বলে যাদের সম্পর্কে আশঙ্কা ছিল, তাদের ‘নেটওয়ার্ক’ অকেজো করার জন্য জেলা পুলিশ-প্রশাসনকে সক্রিয় হতে বলেন পুলিশ পর্যবেক্ষকেরা।
বিহারে মুখ্য নির্বাচনী অফিসার (সিইও) থাকাকালীন সেখানে শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের জন্য ব্যবস্থা নিয়েছিলেন বর্তমানে বঙ্গের বিশেষ পর্যবেক্ষক নায়েক। ভোটের দিন গোলমাল রুখতে অশান্তি পাকানো লোকজনকে গ্রেফতার করার পাশাপাশি তাদের নেটওয়ার্ক কার্যত অকেজো করে দেওয়ার পরিকল্পনা করেছিলেন তিনিই। তাঁর পরিকল্পনা অনুযায়ী বালুরঘাট, মালদহ উত্তর, মালদহ দক্ষিণ, মুর্শিদাবাদ এবং জঙ্গিপুরের পুলিশ পর্যবেক্ষকেরা জেলা পুলিশ-প্রশাসনের উপরে ‘চাপ’ তৈরি করেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রের খবর। কমিশন একই ভাবে উত্তরপ্রদেশের নির্বাচনে গোলমাল এড়াতে অনেকাংশে সফল হয়েছিল। চলতি লোকসভা ভোটে বঙ্গে তৃতীয় দফায় সেই ফর্মুলাই ব্যবহার করেছিলেন বিশেষ পর্যবেক্ষক। তাতে অনেকটা সাফল্য মিলেছে বলে কমিশনের একাংশের দাবি। এক কর্তার কথায়, ‘‘ভগবানগোলার ঘটনাটি এড়ানো গেলে ভাল হত। ওই ঘটনা ছাড়া শান্তিপূর্ণ ভোট হয়েছে। ভোটারদের ভোট দিতে অসুবিধা হয়নি।’’
পশ্চিমবঙ্গের অন্যতম দুই বিরোধী দল বিজেপি এবং সিপিএম প্রথম ও দ্বিতীয় দফার ভোট নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছিল। এ দিন বিজেপি নেতারা জানান, আস্তে আস্তে ভোট ভালর দিকে যাচ্ছে। সিপিএম নেতারা জানান, ভোটদাতারা ক্রমশ সাহসী হচ্ছেন। ভোট দিতে আসছেন।