general-election-2019-west-bengal

মেয়েদের বলব, তোদের বাবার প্রাণ কেড়েছে ভোট

কী হয়েছিল গত পঞ্চায়েত ভোটে?

Advertisement

শুভাশিস ঘটক

কলকাতা শেষ আপডেট: ১০ মে ২০১৯ ০২:৫৪
Share:

অসহায়: দুই সন্তানকে নিয়ে রেকসানা। ছবি: দিলীপ নস্কর

পঞ্চায়েত ভোটের দিন সকালে স্বামীর সঙ্গে দেখা হয়েছিল শেষবারের মতো। সন্ধ্যায় খবর আসে, কিছু লোক পিটিয়ে মেরে ফেলেছে রেকসানার স্বামী সুবিদ আলি মোল্লাকে।

Advertisement

তার পরে জল গড়িয়েছে অনেক দূর। স্বামীর খুনের ঘটনায় জড়িত কেউ কেউ ধরা পড়েছে। কারও কারও জামিন হয়েছে। রাজ্য সরকার চাকরি দিয়েছে রেকসানাকে। সেই চাকরির ৯ হাজার টাকা বেতনেই সংসারটা চলে আপাতত। কিন্তু ভোর ৬টা বাড়ি থেকে বেরোতে হয় কুলতলির চুপরিঝাড়া গ্রামের বাসিন্দা রেকসানাকে। অফিস সল্টলেকে, খাদ্যভবন। সেখান থেকে বাড়ি ফিরতে ফিরতে রাত ১২টা বেজে যায় বলে জানালেন। ছোট ছোট দুই মেয়ে তত ক্ষণে ঘুমিয়ে পড়েছে। শনি-রবিবার ছাড়া তাদের মুখও দেখা হয় না, আফসোস রেকসানার।

কী হয়েছিল গত পঞ্চায়েত ভোটে?

Advertisement

চুপরিঝাড়ার হালদারপাড়ায় সে দিন সন্ধের পরেও ভোটগ্রহণ শেষ হয়নি। সে সময়ে বুথে ছিলেন বছর ছাব্বিশের সুবিদ। ভোট দেওয়া নিয়ে শাসক ও বিরোধীদের মধ্যে শুরু হয় সংঘর্ষ। বুথে কয়েকজন লাঠিধারী পুলিশ ছাড়া কেউ ছিল না। গোলমালের সময়ে প্রিসাইডিং অফিসার-সহ অন্য ভোটকর্মীরা বুথ ছেড়ে পালান। ব্যালট বাক্স ভেঙে ফেলা হয়। শাসক দলের সমর্থক ছিলেন সুবিদ। অভিযোগ, বিরোধীরা সুবিদকে বুথ থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে পিটিয়ে পুকুরের ধারে ফেলে রেখেছিল। দেহ উদ্ধার হয় রাতের দিকে। ওই ঘটনায় ৪২ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের হয় থানায়। কেউ কেউ ধরা পড়ে। কেউ কেউ এখনও পুলিশের খাতায় পলাতক। গ্রেফতারের পরে জামিনও পেয়ে গিয়েছে অনেকে।

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

ওই বুথেই এ বারও ভোট দিতে যাওয়ার কথা রেকসানার। কিন্তু ভোট নিয়ে বিশেষ আর উৎসাহ নেই তরুণীর। কোলে দুই মেয়ে। দু’জনেই ছোট। একজনের জন্ম হয়েছিল স্বামী মারা যাওয়ার মাত্র চার দিন আগে। রেকসানা বলেন, ‘‘ঘটনার কয়েক মাস পরে শাসকদলের নেতারা আমাকে মুখ্যমন্ত্রীর সভায় নিয়ে গিয়েছিলেন। ওখানে মুখ্যমন্ত্রী আমাকে চাকরির চিঠি দেন। এ চাকরি অস্থায়ী। যখন-তখন চলে যাবে বলে অনেকে বলছে। তবু এই ৯ হাজার টাকাটাই আমার সম্বল।’’ রেকসানা বলে চলেন, ‘‘তেমন বিদ্যা-বুদ্ধি তো নেই আমার। এ ভাবেই চালাতে হবে। কিন্তু মেয়ে দু’টো বড় হলে ওদের পড়াশোনা আছে। সব কী ভাবে সামলাব এই টাকায়, জানি না।’’

রেকসানা বলে চলেন সে দিনের কথা। জানালেন, যাঁরা স্বামীর উপরে হামলা করেছিল, সকলে একই পাড়ার লোক। কিন্তু ভোটের দিন চেহারাগুলো কেমন যেন বদলে গিয়েছিল। রেকসানা পরে শুনেছেন, ওই দিন সুবিদ ছাড়াও আরও কয়েক জনকে তুলে নিয়ে গিয়েছিল হামলাকারীরা। বাকিদের ছেড়ে দিলেও সুবিদকে পিটিয়ে মারে। রেকসানার কথায়, ‘‘যারা মেরেছে বলে শুনলাম, তাদের অনেকে তো আমাদের বাড়িতেও আসত। হঠাৎ কী এমন শত্রুতা হল কে জানে!’’

রেকসানার প্রশ্ন, ‘‘ভোটে হার-জিত নিয়ে এমন নৃশংস কেন হয়ে ওঠে মানুষ? সংসারটাই ভেসে গেল আমার।’’ রেকসানার এক আত্মীয়া জানান, ‘‘ওই দিনের ঘটনার পরে বুথে ভোট বাতিল হয়ে গিয়েছিল। পরে যখন ভোট নেওয়া হল, তখন সুবিদকে যারা পিটিয়ে মেরেছিল, তারাও লাইনে দাঁড়িয়ে ভোট দিল।’’ রেকসানাকেও অনেকে ভোট দিতে অনুনয়-বিনয় করেছিলেন। কিন্তু সদ্য স্বামীহারা তরুণী তাতে রাজি হননি। এ বার কি যাবেন ভোট দিতে? রেকসানা বলেন, ‘‘আমার জীবনে আর কোনও ভোট নেই। মেয়েদেরও বলব, ভোটই তোদের বাবার প্রাণটা কেড়েছিল। এ বার কী করবি, তোরা ভেবে দেখ!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন