ছবি: পিটিআই।
কলকাতার বর্তমান পুলিশ কমিশনারকে বিজেপির ‘নিজের লোক’ বলে মন্তব্য করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর অভিযোগ, হাওয়ালার মাধ্যমে রাজ্যে যে ভোটের টাকা ঢুকছে, নির্বাচন কমিশনের বসানো এখনকার সিপি তা ধরার কাজ করছেন বলে মনে হয় না।
মুখ্যমন্ত্রী মনে করেন, আগের পুলিশ কমিশনার (রাজীব কুমার) দায়িত্বে থাকলে এই টাকা ধরতেন। একই সুরে তাঁর বক্তব্য, ‘‘আজকে দমদম এয়ারপোর্টে যে হেলিকপ্টার আসছে, প্রাইভেট জেট আসছে, চার্টার্ড ফ্লাইট আসছে, সব টাকা নিয়ে আসছে। এ গুলো দেখবে কে? যে দেখবে (বিধাননগর পুলিশ কমিশনারের এলাকা) তাকে তো বদলি করে দিয়েছে। যে দেখবে না, অথচ নিরাপত্তা দেবে, নিজেদের ইচ্ছে মতো তেমন দু’টো লোক বসিয়েছে। কলকাতা এবং বিধাননগর, এ দু’টোই গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল।’’
নির্বাচনী বিধি চালু হওয়ার পর রাজ্যে পুলিশ ও প্রশাসনের যে সব পদস্থ অফিসারকে সরানো হয়েছে, কলকাতা এবং বিধাননগরের দুই পুলিশ কমিশনার সেই তালিকায় সব চেয়ে উল্লেখযোগ্য। কলকাতার পুলিশ কমিশনার রাজীব কুমারকে সরানোর সঙ্গেই নির্বাচন কমিশন সরিয়ে দেয় বিধাননগরের পুলিশ কমিশনার জ্ঞানবন্ত সিংহকেও। এ নিয়ে তীব্র রাজনৈতিক বিতর্ক তৈরি হয়। মুখ খোলেন মমতা স্বয়ং। তাঁর বক্তব্য ছিল, যাঁদের পদে আনা হল, তাঁরাও এই রাজ্যেরই অফিসার। ভোট মিলে গেলে তিনি তাঁদের বিষয়টি ‘দেখে নেবেন’।
শুধু পুলিশেই নয়, প্রশাসনেও জেলা শাসক-সহ বিভিন্ন স্তরের আইএএস অফিসারদের সরিয়েছে নির্বাচন কমিশন। এমনকি, রবিবার ষষ্ঠ দফার নির্বাচনের পরে আচমকা সরিয়ে দেওয়া হয় বাঁকুড়ার জেলা শাসককে। সব মিলিয়ে নির্বাচন কমিশনের এই ভূমিকায় রীতিমতো ক্ষুব্ধ হয়ে রয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
সোমবার একটি টিভি চ্যানেলে সাক্ষাৎকারে সেই ক্ষোভ বেরিয়ে আসে হাওয়ালার টাকা ঢোকার অভিযোগ ঘিরে। মমতা সম্প্রতি বিভিন্ন নির্বাচনী সভায় বিজেপির বিরুদ্ধে দেদার টাকা ছড়িয়ে ভোট কেনার অভিযোগ করছেন। বিজেপির প্রার্থী ভারতী ঘোষের মতো আরও কয়েক জনের গাড়ি থেকেও বেশ কিছু টাকা উদ্ধার করে পুলিশ। এই প্রসঙ্গেই কলকাতার পুলিশ কমিশনার সম্পর্কে মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে।
এ দিনই অবশ্য এই কলকাতা পুলিশ কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী অজয় টামটার গাড়ি আটকেও তল্লাশি চালায়। তল্লাশি চালানো হয় বিজেপির ডায়মন্ড হারবারের প্রার্থী নীলাঞ্জন রায়ের গাড়িতেও। এই দুই উদাহরণ সামনে রেখে বিজেপির সাধারণ সম্পাদক সায়ন্তন বসু বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রীর অভিযোগ যে কত অসার এবং রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত, সবাই তা দেখতে পাচ্ছেন।এখন কলকাতা ও বিধাননগর এলাকার নির্বাচন হবে। তাই তিনি এ সব বলে পুলিশের মনোবল ভাঙার চেষ্টা করছেন।’’ তাঁর আরও বক্তব্য, যে পুলিশ কমিশনারকে নির্বাচন কমিশন সরিয়েছে, মুখ্যমন্ত্রী স্বয়ং সেই অফিসারের ‘রাজনৈতিক আনুগত্য’ প্রকাশ করে দিলেন।
মমতা বলছেন কেন্দ্রীয় বাহিনীর পোশাকে বিজেপি এবং আরএসএস-এর লোকেরা রাজ্যে ঢুকছেন বলে তাঁর আশঙ্কা। বিজেপির নির্দেশে তাঁরা ভোটারদের ‘ভয়’ দেখাচ্ছেন। অন্য দিকে, বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতারা দাবি করছেন রাজ্য প্রশাসন এবং নির্বাচন কমিশনের আধিকারিকেরা তৃণমূলের ‘এজেন্টে’র মতো কাজ করছেন।
সোমবার মুখ্যমন্ত্রী নামখানা এবং মেটিয়াবুরুজের সভা থেকে ফের অভিযোগ করেন, ‘‘আমি কেন্দ্রীয় বাহিনীকে সম্মান করি। কিন্তু যে কায়দায় বিজেপি তাদের কাজে লাগিয়েছে, তা অন্যায়। আপনারা নিয়ম অনুযায়ী কাজ করুন। গ্রামে গিয়ে কাজ ভোটারদের ভয় দেখাবেন না। আপনাদের কাজ বুথের বাইরে থাকা।’’ একই সঙ্গে রাজ্য পুলিশের প্রতি তাঁর নির্দেশ, ‘‘রাজ্য পুলিশকেও বলছি, আপনাদের চোখের সামনে ওরা মা-মেয়েদের গায়ে হাত দিচ্ছে, কিছু বলছেন না কেন? ওদের ধমকানি-চমকানিকে ভয় পাবেন না। ওরা দু’দিনের জন্য এসেছে।’’
অন্য দিকে এ দিনই বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতা সুনীল দেওধর রাজ্য সরকারের আধিকারিকদের বিরুদ্ধে টুইট করে বলেন— ‘মঙ্গলবার দক্ষিণ কলকাতায় যোগী আদিত্যনাথের সভার অনুমতি বাতিল করা হয়েছে। জেলা শাসক ও নির্বাচন কমিশনের সিইও তৃণমূলের এজেন্টের মতো কাজ করছেন।’’